বিধানসভা অধিবেশনে সোমবার কৃষি বাজেট নিয়ে আলোচনায় বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা এবং বিশ্বনাথ কারক রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। অনুপের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা আর্থিক ভাবে বিপন্ন হয়ে আত্মহত্যা করছেন।
—ফাইল চিত্র।
বিজেপি বিধায়কেরা গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তুলেছিলেন। কৃষি এবং নারী ও শিশু বিকাশ দফতরের বাজেট নিয়ে আলোচনার শেষে জবাবি ভাষণে সেই সব অভিযোগ তথ্য দিয়ে খণ্ডন করলেন ওই দুই দফতরের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং শশী পাঁজা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, তখন মন্ত্রীদের কথায় বিজেপি বিধায়কদের কোনও প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না।
বিধানসভা অধিবেশনে সোমবার কৃষি বাজেট নিয়ে আলোচনায় বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা এবং বিশ্বনাথ কারক রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। অনুপের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা আর্থিক ভাবে বিপন্ন হয়ে আত্মহত্যা করছেন। কৃষকরা সরকারি কিষাণ মাণ্ডিতে ফসল বিক্রি করতেও পারছেন না। সেখানে ফড়েদের কাছেই তাঁদের ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে। হিমঘরের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বিশ্বনাথের অভিযোগ, কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধিকে অস্বীকার করে নিজেদের মতো কৃষকবন্ধু নাম দিয়ে কৃতিত্ব নিতে চাইছে রাজ্য। কৃষকবন্ধুকে খয়রাতি বলেও কটাক্ষ করেন বিজেপি বিধায়করা।
কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব জবাবি ভাষণে বলেন, “ভারতে নানা কারণে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু আমাদের রাজ্যে তা হচ্ছে না। কারণ এখানে কৃষকবন্ধুর মতো প্রকল্পে কৃষকরা ১০ হাজার টাকা পান। রবি ও খারিফ মরসুমের শুরুতে তাঁদের টাকা দেওয়া হয়। অথচ, কেন্দ্র পিএম কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে ১০ লক্ষ কৃষককে টাকা দেয়নি। তাঁদের সব প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার পরেও।” মন্ত্রী আরও জানান, ভাগচাষিরা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির আওতায় আসেন না। কিন্তু রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ভাগচাষিদেরও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, আলু নষ্ট হওয়ার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন মন্ত্রী।
বিধানসভা অধিবেশনে এ দিন নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের বাজেট নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়, মালতী রাভা এবং তাপসী মণ্ডল কেন্দ্রীয় নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি, রাজ্যে নারী নিগ্রহ এবং শিশু পাচার নিয়ে অভিযোগ সরব হন তাঁরা।
জবাবি ভাষণে মন্ত্রী শশী মূলত নারী উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের ব্যয় বরাদ্দ কমানোর এবং রাজ্যের বরাদ্দ বৃদ্ধির তথ্য দেন। শশী জানান, কেন্দ্রের যে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প নিয়ে বিজেপি বিধায়করা গর্ব করছেন, সেখানে কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়েছে। অথচ, রাজ্য সরকার ‘কন্যাশ্রী’ এবং ‘রূপশ্রী’প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। ‘কন্যাশ্রী’তে শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ১১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আর কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পে গত পাঁচ বছরে গোটা দেশের জন্য ৮৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার সিংহভাগ খরচ হয়েছে বিজ্ঞাপনে। শশীর কথায়, “বেটি বাঁচাও প্রকল্পের যে কোনও কার্যকারিতা নেই, তা বলা হয়েছে সিএজি রিপোর্টে।”
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে কটাক্ষ করে যে শব্দবন্ধ বিজেপি বিধায়করা ব্যবহার করেছিলেন, তা মানুষের পক্ষে অবমাননাকর বলে দাবি করে বিধানসভার নথি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন শশী। স্পিকার তা মেনে নেন। শশী আরও বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা যে সব মহিলা পেয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেই বোঝা যাবে, এর কোনও গুরুত্ব আছে কি না। মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের লক্ষ্মী হিসাবে দেখেন। তাই তাঁদের সাম্মানিক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।” লকডাউন পর্বে কেন্দ্র রাজ্যকে ২৯ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন চাল পাঠায়নি বলে অভিযোগ করে শশী বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের সাংসদদের বলুন, আমাদের প্রাপ্য নিয়ে সংসদে সরব হতে।”
মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন নিয়ে বিজেপি বিধায়করা কথা বললেও কেন্দ্র যে বিভিন্ন নারী নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থার বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন শশী। দত্তক নেওয়াকে কেন্দ্র করে শিশু পাচারের অভিযোগের জবাবে শশী বলেন, “দত্তকের বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে সেখানে কাজ হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy