রাজ্য বিজেপির নতুন পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গল পাণ্ডে। তিনি নাকি বিজেপির কাছে ‘মঙ্গলকারক’। সদ্য রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব-পাওয়া বিহারের এই বিধায়ককে দলের অনেকেই গেরুয়া শিবিরের ‘লাকি’ (পয়া) বলে উল্লেখ করেন। যখন যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাতেই নাকি সোনা ফলিয়ে দেখিয়েছেন! কিন্তু তিনি কী মনে করেন? কেন তাঁকে ‘লাকি’ বলা হয়? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলেন বিহারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘‘আমার নামটাই যে মঙ্গল!’’
‘মঙ্গল পাণ্ডে’ নামটা শুনলেই যাঁর নাম বাঙালির মাথায় আসে, তিনি সিপাহী বিদ্রোহের নায়ক। উত্তরপ্রদেশের সেই মঙ্গল বাংলায় এসেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘সিপাই’ হয়ে। আর এই মঙ্গল বাংলায় এসেছেন মোদী-শাহর ‘সিপাহী’ হয়ে। তবে প্রথম জনের মতো দ্বিতীয় জনও ইতিহাস গড়তে পারবেন কি না, সে উত্তর আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে। রাজ্য বিজেপি অবশ্য খুবই উচ্ছ্বসিত মঙ্গলকে পেয়ে।
রাজ্য বিজেপির ভাঙাচোরা দশা মোকাবিলার জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগে থেকেই সহ-পর্যবেক্ষক ছিলেন অমিত মালবীয়। তিনি সহকারী হিসাবে পেয়েছেন রাঁচীর মেয়র আশা লাকড়াকে। তবে মূল কাজ দেখবেন মঙ্গল। আগে ঠিক যে ভূমিকায় ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তবে মঙ্গল, অমিত, আশার উপরেও থাকছেন সুনীল বনসল। আরও দুই রাজ্য ওড়িশা ও তেলঙ্গানার দায়িত্ব রয়েছে তাঁর উপরে। সম্প্রতি কলকাতায় বিজেপির বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে চার মূর্তি এক হয়েছিলেন। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। দু’দিন ধরে রাজ্য বিজেপির প্রতিটি সেলের কাজকর্মের হাল হকিকত জেনে নেন। ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশনস’ (আইসিসিআর)-এর সভাঘরে বৈঠকের ফাঁকেই মঙ্গল কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
রাজ্য নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই মঙ্গলের জন্য কলকাতায় ঘর খোঁজা শুরু করেছেন। জানা গিয়েছে, নিউ টাউনের কোথাও মঙ্গলের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হবে। সেখানেই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাসস্থান। বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই দলের রাজ্য দফতর মধ্য কলকাতার মুরলীধর সেন লেন থেকে নিউটাউনে চলে যাবে। সে কারণেই মঙ্গলের বাসস্থানও ওই এলাকাতেই খোঁজা হচ্ছে।
তবে মঙ্গল বলছেন, ‘‘আমি বাংলাকে সে ভাবে চিনি না। পাশের রাজ্যে থাকলেও বাংলার ম্যাপের চেহারাটাই শুধু চেনা। ভিতরের কিছু জানা নেই। আপাতত তাই পথেই ঘর হবে। গোটা রাজ্যটা ঘুরে দেখতে চাই। সব জায়গায় গিয়ে দলের নেতা, কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’’ রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মঙ্গল বাংলায় মাসের অর্ধেকটা সময় থাকবেন বলে জানিয়েছেন। সাধারণ ভাবে ১৫ দিন নিজের রাজ্য বিহার এবং ১৫ দিন বাংলায় কাটাবেন তিনি। মঙ্গল কি রাজ্য বিজেপিকে আরও বেশি করে পথে দেখতে চান? তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘দেখা যাক।’’
কোন পথে রাজ্য বিজেপিকে ভোটের জন্য চাঙ্গা করতে চান মঙ্গল? কৈলাসের পথেই কি হাঁটবেন তিনি? সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি। মঙ্গল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী পথ ঠিক করতে হয়। বাংলায় দল ভালই কাজ করছে। সাম্প্রতিক নবান্ন অভিযান কর্মসূচি তো খুবই সফল হয়েছে। দেখা যাক, আরও কী ভাবে সংগঠন বিস্তার করা যায়।’’
বিহারের মন্ত্রী হওয়ার আগে দলের রাজ্য সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন মঙ্গল। বছর পঞ্চাশের মঙ্গল প্রথমে আরএসএস এবং পরে এবিভিপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে বিজেপিতে যোগ দেন। লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘স্বর্ণজয়ন্তী রথযাত্রা’র বিহারের দায়িত্বে ছিলেন। দলের কাজে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, দিল্লি, গুজরাত গিয়েছেন। হিমাচল প্রদেশেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বাংলায় এই প্রথম। তাই সবচেয়ে আগে বাংলাকে ঘুরে দেখে চিনতে চান। বিজেপি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে একটি তালিকা বানাতে বলেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে দলের হয়ে কাজ করা নেতা, কর্মীদের যাঁরা এখন দূরে দূরে তাঁদের কাছে আনতে চান মঙ্গল। সেটাই হবে নাকি তাঁর প্রথম পদক্ষেপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy