Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Dilip Ghosh

দিলীপ কি হারানো পদ ফিরে পাচ্ছেন? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইঙ্গিত পেয়েই তৎপর রাজ্যের নেতারা, দাবি অনুগামীদের

‘অভিমানী’ দিলীপ ঘোষকে কি দলের দায়িত্বপূর্ণ পদে ফেরানো হবে? সম্প্রতি রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে একের পর এক কর্মসূচিতে পাঠানোর পরে এমন জল্পনা শুরু হয়েছে। আর তাতে উচ্ছ্বসিত দিলীপের অনুগামীরা।

BJP leader Dilip Ghosh may get portfolio in party by central leadership

দিলীপ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ০৯:০২
Share: Save:

দল তাঁকে নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব না দিলে রাজনীতিকে ‘টা-টা, বাই-বাই’ বলে দেবেন বলে কিছু দিন আগেই জানিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এ-ও জানিয়েছিলেন যে, কয়েক মাস অপেক্ষার পর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। দিলীপের সেই বক্তব্যের পর তাঁকে ‘পদ’ না দিলেও ‘কাজ’ দিয়েছে দল। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে সম্প্রতি দলের তরফে একের পর এক কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। তাতে উচ্ছ্বসিত দিলীপের অনুগামীরা। তাঁদের আশা, ‘দাদা’ পদে ফিরছেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই আশাবাদের কোনও সমর্থন মেলেনি। যেমন এ নিয়েও কোনও ইঙ্গিত মেলেনি যে, দিলীপকে কোন পদ দেওয়া হবে। অনুগামীরা অবশ্য আশাবাদী যে, ঘোষকে নিয়ে ‘সম্মানজনক’ ঘোষণাই করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে দলীয় নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত দিলীপের পরবর্তী দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু বলেননি। প্রথমে নিজের মতো করেই কর্মসূচি সাজাচ্ছিলেন তিনি। জেলায় জেলায় সফর করেছেন। কিন্তু এখন রাজ্য নেতৃত্বই একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছেন দিলীপকে।

রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিতে তিনি তৈরি বলে দিলীপ জানানোর পরেই ছিল রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক। সেখানে ডাক পেয়েছিলেন দিলীপ। গত ১৭ জুলাই ছিল লোকসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য বিজেপির প্রথম বড় সাংগঠনিক কর্মসূচি। সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের আগে কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিক বৈঠক করেন দলের সল্টলেকের দফতরে। সেখানেও ডাক পান দিলীপ। কর্মসমিতির বৈঠকের দিন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে মঞ্চে বসার সুযোগ পান। দিলীপের নাম ঘোষণা করা হতে হাততালি পড়ে প্রচুর। দিলীপের নামে স্লোগানও শোনা যায়। দিলীপ মঞ্চ থেকে নামার পরে তাঁকে পাশে নিয়ে নিজস্বী তুলতে হুড়োহুড়ি পড়ে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা তো বলেই ফেলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের জায়গা সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কর্মীদের হুড়োহুড়ি দেখে মঞ্চ থেকে সেল্‌ফি তুলতে নিষেধও করতে হয়েছিল।’’

লোকসভা নির্বাচনে দলের হয়ে ‘বিস্তারক’-এর কাজ করা শ’দেড়েক কর্মীকে সম্প্রতি সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে কলকাতায়। আইসিসিআর সভাগৃহে সেই কর্মসূচিতে বক্তা হিসাবে দিলীপকে বাছা হয়েছিল। বিজেপির রীতি অনুযায়ী রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের দিন সাতেকের মধ্যে জেলা স্তরের বৈঠক হয়। রীতি অনুযায়ী জেলা কর্মসমিতির বৈঠকে কোনও এক জন রাজ্য নেতা উপস্থিত থাকেন। তিনিই হন প্রধান বক্তা। প্রথমে বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর এবং পরে যাদবপুর, মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলায় রাজ্য দলের পক্ষে পাঠানো হয় দিলীপকে।

এ ভাবে দিলীপকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজ্যের তরফে পাঠানোর নজির দেখিয়েই রাজ্য বিজেপিতে ‘ঘোষ-ঘনিষ্ঠ’ নেতাদের দাবি, দিল্লির পরামর্শেই সাংগঠনিক কাজে দিলীপকে এত বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণেই তাঁরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপকে কোনও পদ দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, কোন পদ তা নিয়ে কারও কোনও ধারণা নেই। রাজনীতিতে এসেই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক এবং মাস কয়েকের মধ্যে রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন দিলীপ। সেই সময়ের মধ্যেই তিনি প্রথমে বিধায়ক ও পরে সাংসদ হন। ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ে রাজ্য জুড়ে প্রচারের সময় দিলীপ-ঘনিষ্ঠেরা মনে করেছিলেন ‘দাদা’ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। তবে ৭৭টি আসনে জিতে বিজেপি সর্বকালীন ভাল ফল করায় দিলীপের মান বেঁচেছিল। যদিও কিছু দিনের মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর ‘মধুর’ সম্পর্ক বারংবার প্রকাশ্যে আসে। দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষের আগেই বিজেপি তাঁকে সরিয়ে রাজ্য সভাপতি করে সুকান্ত মজুমদারকে। দিলীপ হন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। এর পরে সুকান্তের সঙ্গেও সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে দিলীপের। বারংবার রাজ্য নেতৃত্বের ‘অস্বস্তি’ তৈরি করার অভিযোগের প্রেক্ষিতেই দিলীপকে সরিয়ে দেওয়া হয় সর্বভারতীয় পদ থেকেও।

এই পটভূমিকায় কোন পদে ফিরতে পারেন দিলীপ? দু’দফা রাজ্য সভাপতি থাকার পরে প্রায় তিন বছরের ব্যবধান তৈরি হওয়ায় সে পদে ফেরানো যায় দিলীপকে। কিন্তু সে সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছেন দিলীপ-ঘনিষ্ঠেরাই। দিলীপের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ নেই এমন এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত সমস্যা বা বিরোধিতা থাকলেও দিলীপদা দলের সম্পদ। সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপ ত্রয়ী একমুখী হয়ে আন্দোলন করলে দলের অগ্রগতি নিশ্চিত। কিন্তু দিলীপদা মিলেমিশে চলতে পারবেন কি না তা নিয়েই ভাবনা।’’ ওই নেতা এমনও জানান যে, সুকান্ত কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্য সভাপতি বদল হলে দিলীপকেই সেখানে আনার বিষয়ে সর্বপ্রথম ভাবা হয়েছিল। কিন্তু দিলীপ সেই সময়ে প্রকাশ্যে দলের সমালোচনা করে বসেন! তবে সেই ভাবনা যে একেবারে চলে গিয়েছে, তা-ও নয় বলেই দাবি অনেকের। রাজ্য সভাপতি হয়ে যাওয়া দিলীপকে বাংলায় আর কোনও দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রাজ্যে দলকে বাঁচাতে ওই পদেই দিলীপকে ফেরানো যেতে পারে বলে অভিমত পুরনো নেতাদের। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি এতটা ভাবছেন? তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে কেউই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। কারণ, দিলীপ এখন ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়।

দিলীপ-অনুগামীদের ভয়, ‘দাদা’ কখন কী বলে ফেলে পরিস্থিতি বিগড়ে দেবেন! দিলীপ অবশ্য আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দলের নির্দেশ মতো বৈঠকে গিয়ে কর্মীদের উৎসাহ দেওয়ার বক্তৃতা করছেন। তবে দিলীপের বিরুদ্ধে দলের একাংশের এমন অভিযোগও রয়েছে যে, তিনি শাসকদলের চেয়ে নিজের দলের বেশি সমালোচনা করেন। সম্প্রতি অবশ্য দিলীপ সমাজমাধ্যমে একের পর এক পোস্টে শাসকদলকে আক্রমণ করেছেন। অনেকে বলছেন, তবে কি দিলীপ কিছু ইঙ্গিত পেয়েছেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh BJP Leader West Bengal BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy