আদালতের পথে বিজেপি নেতা অতনু চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
প্রথমে যুব মোর্চার নেতা। এ বার জেলা সম্পাদক। বীরভূমে বিজেপি-র আরও এক নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, অতনু চট্টোপাধ্যায় নামে ওই নেতাকে একাধিক মামলায় খোঁজা হচ্ছিল। সোমবার রাতে মল্লারপুরে বাড়ি থেকেই অতনুকে গ্রেফতার করা হয়।
তিন মাস আগে মল্লারপুরের একটি ক্লাবে বিস্ফোরক মজুত রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উস্কানি দেওয়া-সহ নানা অভিযোগে মামলা রুজু করেছে জেলা পুলিশ। দেওয়া হয়েছে অস্ত্র আইনের ধারাও। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘মল্লারপুরে ক্লাবে বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অতনু চট্টোপাধ্যায়ের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া অতনুর বিরুদ্ধে ময়ূরেশ্বর, সিউড়ি, শান্তিনিকেতন এবং নানুর থানায় একাধিক মামলা আছে। ওই সমস্ত মামলায় তিনি ‘ওয়ান্টেড’ ছিলেন। তাই গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশের আরও দাবি, নানুরের বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াইয়ের খুনের ঘটনায় বোলপুর সিয়ান হাসপাতালের সামনে রাস্তা অবরোধ এবং মহরমের দিন জায়গায় জায়গায় অবরোধের প্রধান মাথাও ছিলেন অতনু। সেই ধারাও যোগ করা হয়েছে।
দু’দিন আগেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে বিজেপির যুব মোর্চার নেতা ধ্রুব সাহাকে। এ বার অতনু। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এটা পুলিশ ও শাসকদলের ষড়যন্ত্র। অতনুর গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিন মল্লারপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা-কর্মীরা। পুলিশ অবশ্য বিজেপি-র অভিযোগ মানেনি। মঙ্গলবার দুপুরে রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে অতনুকে হাজির করায় পুলিশ। কোর্ট চত্বরেই অতনু অভিযোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবাংলায় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে বর্তমান শাসকদল। মিথ্যা মামলায় আমাকে পুলিশ ফাঁসিয়েছে। ২০২১ সালে পুলিশের অবস্থা কী হয়, বোঝা যাবে।’’
যত কাণ্ড মল্লারপুরে
• ২৯ জুন, ২০১৯-এ গভীর রাতে বিস্ফোরণ মল্লারপুরের ক্লাবে
• ঘটনার পরে গ্রেফতার ক্লাবের ক্যাশিয়ার-সহ দুজন। তাঁরা জামিনে আছেন।
• উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিয়েছেন অভিযুক্ত আরও ৮ জন
• ওই বিস্ফোরণে সোমবার গ্রেফতার বিজেপি নেতা অতনু চট্টোপাধ্যায়।
• অতনুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনের নানা ধারায় মামলা রুজু
• সাত দিনের পুলিশি হেফাজত। পুলিশের দাবি, বহু মামলায় ‘ওয়ান্টেড’ এই বিজেপি নেতা
• পুলিশ ও শাসকদলের চক্রান্ত বলে অভিযোগ বিজেপি-র
মামলার সরকারি আইনজীবী সৈকত হাতি জানান, অতনুর বিরুদ্ধে মল্লারপুর বিস্ফোরণে বিস্ফোরক আইনের একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া, ময়ূরেশ্বর থানার গোচেপাড়া গ্রামে গত ২৩ জুন তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা এবং খুনের চেষ্টার মামলাও রয়েছে তাঁর নামে। এ দিন আদালতে ময়ূরেশ্বর থানার তিনটি এবং মল্লারপুর থানার একটি মামলায় অতনুকে জেরা করতে চেয়ে পুলিশ দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে। ভারপ্রাপ্ত বিচারক অমিত চক্রবর্তী বিস্ফোরণের মামলায় সাত দিন পুলিশ হেফাজত এবং ময়ূরেশ্বরের ঘটনায় ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
গত ২৯ জুন গভীর রাতে মল্লারপুর বাজারের ওই ক্লাবে বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ প্রথমে মল্লারপুর রেলপাড়ের বাসিন্দা মিঠু শেখকে গ্রেফতার করে। পরে ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব দত্ত গ্রেফতার হন। ওই দু’জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অতনুকে নিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ৮ জন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন।
বিজেপি-র ময়ূরেশ্বর ১ মণ্ডল সভাপতি দীনবন্ধু মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়দের অভিযোগ, পুলিশ অন্যায় ভাবে সোমবার গভীর রাতে পাঁচিল টপকে অতনুর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়। রাতেই ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে, অতনু ঠিক কোথায়, তা পরিবারের লোক এবং বিজেপি নেতারা ধোঁয়াশায় ছিলেন। তাঁদের দাবি, মঙ্গলবার সকালে মল্লারপুর থানা অতনুর হদিস দেয়নি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁকে রামপুরহাট থানায় রাখা হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনে দলের তরফে বোলপুর কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ছিলেন অতনু। বোলপুরে হারলেও ভোট অনেকগুণ বাড়িয়েছে বিজেপি। ময়ূরেশ্বর বিধানসভায় বিজেপি লিডও পেয়েছিল। গত পঞ্চায়েত ভোটে মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে আনতেও বড় ভূমিকা ছিল অতনুর। দলের জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘মল্লারপুরে আমাদের প্রভাব বাড়তে দেখে আতঙ্কিত হয়েই তৃণমূল পুলিশকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। তবে, এই ভাবে আমাদের ঠেকানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy