—প্রতীকী ছবি।
রিসর্ট রাজনীতির ছোঁয়া বাংলাতেও! তা-ও আবার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। তবে আক্ষরিক অর্থেই ‘রিসর্ট’ নয়। দল ভাঙানো রুখতে ভিন্ রাজ্যের অতিথিশালায় নিয়ে রাখা হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।
মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের সরকার ভেঙে বেরোনো একনাথ শিন্দে-সহ বিধায়কদের একাংশকে গত বছর অসমের একটি পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে এসে রেখেছিল বিজেপি। এ বার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারেও সেই একই পথে বিজেপি। তবে তাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে দলের জয়ী প্রার্থীদের যাতে রাজ্যের শাসক দল ছিনিয়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই পন্থা। সূত্রের খবর, অসমের ধুবুড়িতে দু’টি বেসরকারি অতিথিশালায় জেলার শতাধিক জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে গিয়ে রেখেছে তারা। উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলা থেকেও জয়ী প্রার্থীদের অসমে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। দলের আশঙ্কা, জেলায় থাকলে ওই প্রার্থীদের চাপ দিয়ে সমর্থন আদায় করে নিতে পারে তৃণমূল। পাল্টা তৃণমূলও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ঘাসফুল শিবির ভাঙতেও সক্রিয় হতে পারে বিজেপি। বিজেপিকে এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহও।
অসমের বিজেপি সূত্রের খবর, এখন ধুবুড়িতে রয়েছেন দুই জেলার ১১৩ জন বিজয়ী প্রার্থী-সহ মোট ১৭০ জন। বিজেপির রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের উপরে অত্যাচার করছে তৃণমূল। জয়ী প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেককেই বাইরে রাখতে হচ্ছে।’’ যদিও জয়ী প্রার্থীদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁদের সরাসরি হুমকি দেওয়া বা অপহরণের চেষ্টা করা হয়নি। তবে ভোটার ও সমর্থকদের অনুরোধ মেনেই তাঁরা চলে এসেছেন। গোয়া, কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আগে অন্য রাজ্যে ‘আশ্রয়’ নেওয়ার কৌশল দেখা গিয়েছে। বাংলায় এটা বিরল।
তৃণমূলের বিধায়ক তথা মন্ত্ৰী উদয়ন গুহ অবশ্য বলেন, ‘‘আমি তো শুনেছি দিনহাটা থেকেও অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মহকুমা থেকে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। তা হলে সবাইকে কেন নিয়ে যাবে? আসলে কেউ যদি ঘুরতে যায় তাহলে কী করার আছে? এ সবই মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা!’’
কিন্তু দলের জয়ী প্রার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে অসমকেই কেন বাছতে হল? দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, অসমে বিজেপি সরকার রয়েছে। সেখানে দল ও প্রশাসন দুইয়েরই সাহায্য মিলছে। ধুবুড়ি জেলা বিজেপির সভাপতি প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘প্রথমে জেতার পরে ১৩ জন প্রার্থী ধুবুড়ি পালিয়ে আসেন। কিন্তু কয়েকটি বোর্ড ত্রিশঙ্কু হওয়ায় শাসক দল আমাদের প্রার্থীদের জোর করে দলবদল করাতে পারে, সেই আশঙ্কায় শুক্রবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের আরও ১০০ জন জয়ী প্রার্থী ধুবুড়ি পালিয়ে আসেন। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি।’’
মাথাভাঙার বিজয়ী মণ্ডল সভাপতি ও জয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থী অশ্বিনী দেব সিংহ বলেন, “ভোটারেরা বিজেপিকে ভরসা করে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। ভয়ে তৃণমূল হয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। তাই এখানে আশ্রয় নিয়েছি।’’ গত বুধবার ধুবুড়ি বিজেপি অফিসে পৌঁছেছেন তুফানগঞ্জের চিলাখানা-২ নম্বর পঞ্চায়েতের জয়ী সদস্য সম্বল চন্দ, ক্ষুদিরাম বসাক, বিশ্বনাথ দাস, রিতা দাস দত্ত, ঝুলন দাসেরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী বুথ দখল করে ভোট করিয়েছে। নাটাবাড়ির বলরামপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের আরতি বর্মণ দাবি করেন, তৃণমূলের কর্মীরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। তাঁদের এলাকায় মাত্র চার জন বিজেপি প্রার্থী ভোটে জিততে পেরেছেন, বাকি গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিজেপি আসলে যে কোনও ভাবে রাজ্যের শাসক দলের, তৃণমূল সরকারের বদনাম করতে চায়। আসলে ওরাই আমাদের দলের সদস্যদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy