গ্রাফিক: নিরুপম পাল
মেয়ে মাদকাসক্ত। কোকেন-সহ কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামী সম্পর্কে এমন অভিযোগ বছরখানেক আগে তুলেছিলেন তাঁরই বাবা কৌশিক গোস্বামী। সেই অভিযোগের চিঠির সঙ্গে সঙ্গেই সামনে এল আর এক তথ্য। বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক পদে থাকা পামেলাকে সংগঠনের পক্ষেও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণ দর্শানোর একটি চিঠি দেওয়া হয় এ মাসেই। বিজেপি সূত্রে খবর, ১০ ফেব্রুয়ারি পামেলাকে পাঠানো চিঠিতে উত্তর দেওয়ার জন্য ৩দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও তার জবাব মেলেনি। গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন পামেলা। উত্তর দেওয়ার সময়সীমা তার অনেক আগেই পেরিয়ে গিয়েছিল।
বিজেপি যুব মোর্চায় নবাগত পামেলা এত তাড়াতাড়ি এত গুরুত্বপূর্ণ পদ কী করে পেলেন তা নিয়েও দলের ভিতরে চলছে চাপানউতর। রাজ্য নেতাদের একাংশের বক্তব্য, কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার প্রশ্রয়েই পামেলাকে যুব মোর্চার বড় দায়িত্ব দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র-র বক্তব্য, “আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে পামেলাকে চিনতামই না।”
সৌমিত্রকে এ নিয়ে পূর্ণ সমর্থন করলেন কিছু দিন আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। পামেলা সংগঠনে আসার সময় সুজাতা বিজেপি-তেই ছিলেন। সৌমিত্রর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের লড়াই চললেও সুজাতা এ দিন বলেন, “এঁদের যাতে দায়িত্ব না দেওয়া হয় তার জন্য ও অনেক চেষ্টা করেছিল। নেতাদের বলেও ছিল। কিন্তু বিজেপি-র বড় বড় নেতারা ওর কথা শোনেননি।” সুজাতার আরও দাবি, “তদন্ত এগোলে বিজেপি-র অনেক নেতার নামই সামনে এসে যাবে।” তিনি কি তবে এই বিতর্কে সৌমিত্র-র পাশে দাঁড়িয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিতে চলেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুজাতা বলেন, “পাশে দাঁড়ানোর বিষয় নয়। ওটা বিজেপি-র বিষয়। তবে আমি যেটা জানি সেটা বললাম।”
সুজাতা যে বিজেপি-র অনেক নেতার নাম উঠে আসার কথা বলছেন তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার নিউ আলিপুর থেকে ১০ লক্ষ টাকার কোকেন-সহ পামেলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় আর এক বিজেপি নেতা প্রবীর দে-কে। দু’জন একই গাড়িতে ছিলেন। সেই গাড়িতেই মেলে কোকেন। পরে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে অন্য তৃতীয় এক জনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার আদালতে তোলার পরে সকলেই এখন পুলিশ হেফাজতে। শনিবার আদালত প্রাঙ্গনেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পামেলা। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা তথা এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নাম করে তোপ দাগেন তিনি। সঙ্গে দাবি করেন, কৈলাস ঘনিষ্ঠ রাকেশ সিংহ তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছেন। কৈলাস, রাকেশ সকলেই এই অভিযোগ সাজানো বলে দাবি করলেও বিজেপি-র অন্দরে এ নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে থেকেই দলে পামেলার দ্রুত উত্থান ও কাজকর্ম নিয়ে নানা ক্ষোভ ছিল। সেটা বড় আকার নেয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। সে দিন ঝাড়গ্রামে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সমাবেশে গিয়ে জোর করে মঞ্চে উঠতে চান পামেলা। বাধা পেলে রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ স্তরের নেতার সঙ্গে বচসাও বাঁধে। এর জন্য পামেলাকে দল থেকে বহিষ্কারেরও দাবি ওঠে। পরদিনই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে, পামেলাকে ৩ দিন সময় দিয়ে, কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠান সৌমিত্র।
এক সময়ের মডেল-এর মাদক-যোগ সম্পর্কে দল কিছু জানে না বলে বিজেপি দাবি করলেও পামেলার বাবা সেটা সম্যক জানতেন। শুধু জানতেনই না, তা জানিয়ে কলকাতা পুলিশকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল লেখা সেই চিঠিতে পামেলার বাবা কৌশিক অভিযোগ করেন, প্রবীরকুমার দে নামে এক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পামেলাকে প্রথমে নিজের ব্যবসার অংশীদার বানান প্রবীর এবং পরে মাদকাসক্ত করে তোলেন বলে কৌশিকের অভিযোগ। সেই সময় বিবাহিত প্রবীর পামেলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন বলেও কলকাতার পুলিশ কমিশনার, জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) এবং যাদবপুর থানার ওসিকে চিঠি লেখেন কৌশিক। চিঠির সঙ্গে পামেলা ও প্রবীরের কিছু ঘনিষ্ঠ ছবিও জমা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy