গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রথমে পাঁচ মতুয়া বিধায়ক। তার পরে বাঁকুড়া জেলার বিধায়করা। তারও পরে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সেই বিপ্লবের ঢেউ নিস্তরঙ্গ হওয়ার আগেই খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। প্রচারের বাইরে থাকা সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
একের পর এক নেতা, বিধায়ক এবং এক সাংসদের দলীয় হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করা নিয়ে চাপে রাজ্য বিজেপি নেতারা। একজনকে বুঝিয়েসুজিয়ে গ্রুপ-ঘরে ফেরানোর তোড়জোড়ের মধ্যেই আবার নতুন কেউ বিদ্রোহে সামিল হয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু কে কোন গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন? রাজ্য বিজেপি-তে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সে কাহিনিও। দলের নেতারা গোষ্ঠীর কথা স্বীকার না করলেও মানছেন গ্রুপের কথা। সরকারি ভাবেই বিজেপি-তে গ্রুপ রয়েছে হাজার খানেক। এগুলি তৈরি করা হয়েছিল মূলত গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই এ রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে সাংগঠনিক কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময়েই রাজ্য থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত সাংগঠনিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ তৈরি শুরু হয়। সেটাও একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে।
রাজ্য কমিটির একটি গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের যে নির্দিষ্ট সদস্য অন্য যে (বা যে সব) শাখা সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন, সে সব মোর্চার নেতাদের গ্রুপে রয়েছেন। এর পর জোন ও জেলাস্তর। তাতেও মূল একটি কমিটির গ্রুপ। সেই গ্রুপে রয়েছেন সেই জোন বা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য নেতা। এর নীচে মণ্ডল স্তরের এবং বুথ ও শক্তিকেন্দ্রের গ্রুপ। যার সংখ্যা কমবেশি ৮৮ হাজার। সেগুলি বাদ দিলেও সরাসরি রাজ্য কমিটির অধীনে গ্রুপ রয়েছে এক হাজারের মতো।
এই গ্রুপগুলি সবই তৈরি করা রাজ্য ও জেলা তথ্যপ্রযুক্তি সেলের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য ছিল শীর্ষনেতৃত্বের প্রতিমুহূর্তের নির্দেশ, রাজ্যের কর্মসূচি থেকে দল নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যা যা খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা সকলের কাছে একই সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া। তবে সরাসরি দলের পক্ষ থেকে তৈরি করার বাইরেও জেলা ও মণ্ডল স্তরে স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সেগুলির কোনওটা দলের বক্তাদের, কোনওটি নতুন দলে আসা মানুষদের নিয়ে।
আগে থেকেই রাজ্য ‘কার্যকারিণী’র গ্রুপ ছিল। সেই গ্রুপে পদাধিকার বলেই জায়গা পান সাংসদরা। আবার সাংসদরা তাঁদের কাজকর্ম দেখার জন্য লোকসভা এলাকায় আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে তৈরি হয় বিধায়কদের গ্রুপ। একই সঙ্গে যে সব জেলায় একাধিক বিধায়ক রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে জেলা সভাপতিরা গ্রুপ তৈরি করেন। সব মিলিয়ে বিজেপি নেতাদের জীবন অনেকটাই ‘গ্রুপময়’। অনেক সময়ে কিছু কিছু গ্রুপ দিনের পর দিন খুলেও দেখা হয় না। অনেকে সে সব গ্রুপে না থাকার মতো করেই থাকেন।
বিজেপি সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত যে ক'জন বিধায়ক দলের গ্রুপ ছেড়েছেন, তাঁরা কেউই গুরুত্বপূর্ণ কোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়েননি। বেশিরভাগই দলের সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত গ্রুপটি ছেড়েছেন। তবে একটির পর একটি গ্রুপ ত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসা নিয়ে চাপে রয়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ, সাধারণ মানুষ থেকে কর্মী-সমর্থক— সকলেই বুঝতে পারছেন কে কোন গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ-ও বুঝতে পারছেন, সেই গ্রুপ কতটা ‘সম্মানজনক’ বা ‘গুরুত্বপূর্ণ’। তাই বিষয়টিকে ছোট করে দেখতে চাইছেন না রাজ্য নেতারা। ইতিমধ্যেই শীর্ষনেতৃত্ব এ নিয়ে কয়েক দফায় আলোচনা করেছেন। কী করে সাংগঠনিক গ্রুপ ছাড়ার স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছে, তা নিয়েও চিন্তিত নেতারা। এর মোকাবিলায় কী করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে বিজেপি সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy