এ বার কে যাবে? তার পরে কে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে ক্রমে বিধায়ক সংখ্যা কমছে বিজেপি-র। ৭৭টি আসনে জেতা বিজেপি ইতিমধ্যেই নেমে দাঁড়িয়েছে ৭১-এ। এখন আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে না ছয়ের ঘরে চলে যায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা। তা হলে রাজ্যসভা ভোট নিয়ে সমস্যায় পড়বে রাজ্য বিজেপি। দলের হিসেব মতো রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় দু’জন সাংসদ পাঠাতে গেল কমপক্ষে ৬৯ জন বিধায়ক দরকার। কিন্তু যে ভাবে বিজেপি-র বিধায়করা লাইন দিয়ে শাসক তৃণমূলে যেতে (বা, ফিরতে) শুরু করেছেন, তাতে সেই সংখ্যা থাকা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে পদ্মশিবিরে।
ভোটের আগে যেমন গেরুয়া শিবিরে যোগদানের হিড়িক পড়েছিল, তেমনই এখন বিয়োগের লাইন লেগে গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর অনেক নেতাই দলের সংশ্রব ছেড়েছেন। কিন্তু এখন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একের পর এক বিধায়কের দলবদল। তবে এতে আবার বিজেপি-র একাংশ বেজায় খুশি। তাদের বক্তব্য, অন্য দল থেকে নেওয়াদের প্রার্থী করার সময় বিরোধিতাকে গুরুত্ব দিলে এমন দিন দেখতে হত না দলকে। ‘খুশি গোষ্ঠী’র এক নেতার কথায়,‘‘আমরা তখনই বলেছিলামভাড়াটে সৈনিকদের নিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না।’’
বিজেপি-র বিধায়ক ‘বিয়োগপর্ব’ শুরু হয়েছিল মুকুল রায়কে দিয়ে। ফল ঘোষণার পর এক মাস হতে না হতেই শুরু হয়েছিল জল্পনা। যা সত্যি প্রমাণিত করে গত ১১ জুন পুত্র শুভ্রাংশু রায়কে নিয়ে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল। এর পরে একে একে আরও তিন বিধায়ক চলে গিয়েছেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে। গত সোমবার তৃণমূলে ফেরেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, মঙ্গলবার ফেরেন বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। আর শনিবার তৃণমুলে গিয়েছেন কালিয়াগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক সৌমেন রায়।
ফলে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে কমে এখন ৭১। এর মধ্যে রয়েছে দলের দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিকের দু’টি আসনও। তাঁরা যথাক্রমে শান্তিপুর ও দিনহাটা আসন থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। তাঁরা বিধায়কপদ ছেড়ে সাংসদপদ রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে নিশীথ আবার কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছেন। প্রসঙ্গত, ওই দুই কেন্দ্রে এখনও উপনির্বাচন ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।
বিজেপি শিবিরের অনেকে এখন স্মরণ করছেন কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ ছড়াটি। কারণ, ‘হারাধনের ছেলে’-দের মতোই এক এক করে বিধায়ক হারাতে হচ্ছে পদ্মশিবিরকে। চার বিধায়ক চলে যাওয়ার পরেও ‘সন্দেহভাজন’-এর তালিকায় রয়েছেন আরও কমপক্ষে ছ’জন। সেই সংখ্যা বাড়তেও পারে। বিজেপি শিবির সূত্রে খবর, আতশকাচের তলায় থাকা বিধায়কদের মধ্যে সবার আগে রয়েছেন রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। তিনি নাকি যে কোনও মুহূর্তে তৃণমূলে চলে যেতে পারেন।
এ ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন চার্টার্ড বিমানে চেপে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহর হাত থেকে বিজেপি-র পতাকা নেওয়া পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। আপাতত রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম আসনের বিধায়ক তিনি। বিজেপি-র নজরে রয়েছেন গঙ্গারামপুরের সত্যেন্দ্রনাথ রায়, আরামবাগের মধুসূদন বাগ, কুমারগ্রামের মনোজ ওঁরাও।যাঁরা দল বদলেছেন বা বদলাতে পারেন তাঁরা অন্য দল (মূলত তৃণমূল) থেকে গেরুয়া শিবিরে আসেন। তবে বরাবর বিজেপি করা অনেককে নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।
এত দিন পর্যন্ত বিজেপি নেতারা বলছিলেন, যাঁরা এসেছিলেন তাঁরাই ফিরছেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই প্রসঙ্গে প্রথমদিকে বলেছিলেন, ‘‘কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থে এসেছিলেন। বিজেপি-তে থেকে লাভ হবে না বলেই তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন।’’ পরে ‘হতাশ’ দিলীপ রবিবার বলেন, ‘‘গরু-ছাগল নাকি যে আটকে রাখব!’’ বিজেপি-তে এমনই আশঙ্কার পরিবেশ, যে অনেকে মনে করছেন শালতোড়ার চন্দনা বাউড়িও শাসকদলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন।
বস্তুত, ক’দিন আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এমনও দাবি করেছিলেন যে, চন্দনাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর জন্য পুলিশ চাপ তৈরি করছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রান্তিক পরিবারের তফশিলি মহিলা চন্দনা বাউড়ির উপরে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। কিন্তু এক সময়ে রাজমিস্ত্রি স্বামীর সঙ্গে জোগাড়ের কাজ করা মহিলা হলেও তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না। চন্দনা পুলিশকে বলেছেন, চাইলে আমায় ছ’মাস জেল খাটান!’’
যদিও চন্দনা বাঁকুড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে বারাসত আদালতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, শুভেন্দু বলেছিলেন, চন্দনা তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। তিনি আইনের সাহায্য সবসময়েই নিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy