Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

মিলছে না শক্ত জমি, বিজেপির আক্রোশে বাম

রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের আন্দোলন এবং নাগরিক প্রতিবাদে প্রভাব বিস্তারে এঁটে উঠতে না-পেরে এই বাম-বিরোধিতার সুর বিরোধী পরিসরে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের অধিকাংশই দলবিহীন। জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও অবস্থানের জেরে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় কিছু দাবি মেনে নিয়েছেন মু‌খ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির কণ্ঠে স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার চড়া সুর। তবে সেই সুরকে প্রায়শই ছাপিয়ে যাচ্ছে বাম-বিরোধিতার শব্দ। রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকদের আন্দোলন এবং নাগরিক প্রতিবাদে প্রভাব বিস্তারে এঁটে উঠতে না-পেরে এই বাম-বিরোধিতার সুর বিরোধী পরিসরে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে জুনিয়র চিকিৎসক থেকে নাগরিক সমাজের আন্দোলনে দেখা গিয়েছে অনেক বেশি বামপন্থী ছাপ। আন্দোলনে ব্যবহৃত স্লোগান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিছিলে থাকা প্রথম সারির মুখ এবং সরকারি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা শিল্পীদের মধ্যেও সিংহভাগ দলীয় রাজনীতির থেকে দূরে থাকলেও তাঁরা পরিচিত বাম-মনস্ক হিসেবেই। ভোট শতাংশ এবং আসন-সংখ্যার নিরিখে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হলেও বিজেপির অন্দরেও আলোচনায় উঠে এসেছে, এই ব্যাপকাংশের আন্দোলনে তাদের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ এখনও তৈরি হয়নি। তার উপরে এই আন্দোলনে ঢোকার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হতে হয়েছে। যে নেতারা চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে হয়েছে। বিজেপি এ ক দিকে যেমন পৃথক প্রতিবাদ জারি রেখেছে, সেই সঙ্গে কখনও আন্দোলনকারীদের, কখনও বামেদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চিকিৎসকদের বৈঠকের পরে এই আক্রমণ আরও বেড়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যেমন বুধবার বলেছেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকেরা কী বলছেন, আমি জানি না। তবে বাম, অতি-বাম, ঝান্ডু বামেদের জন্যেই আর জি কর আন্দোলন জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে!’’ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলনকে গ্রামাঞ্চল-সহ বৃহত্তর জনতার কাছে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কি বিজেপিরও নয়? দলের এক রাজ্য নেতার অবশ্য দাবি, “আমরা গ্রামে ভোট পেয়েছি। আসন পেয়েছি। বরং, কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতায় আমাদের অবস্থা শোচনীয়। সেই জায়গায় এই আন্দোলনের যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।” নিজেদের আন্দোলন জারি রাখার লক্ষ্যেই শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে, গ্রামে প্রতিটি পঞ্চায়েতে ও প্রতি রেল স্টেশনে সভার কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি।

লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিজেপির একাধিক নেতা-নেত্রী সমাজমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের সুরেই এখন সাঁইবাড়ি, বিজন সেতু, অনিতা দেওয়ানের ঘটনা তুলে এনে সিপিএম সম্পর্কে মানু‌ষকে সাবধান করতে নেমেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের কিছু কর্তাকে ‘সম্মানজনক’ জায়গায় বদলি করেই মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র চিকিৎসকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন, কারণ তাঁদের নেপথ্যে বামপন্থীরা আছে এবং তারা রাজ্য সরকারকে নিষ্কৃতির রাস্তা দিতে চায়।

রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে কেউ কেউ প্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করছে। আন্দোলনের গতিমুখ বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যার কারণে এই অবস্থার মধ্যে সকলকে পড়তে হয়েছে। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিসর্জন হলেই এই ব্যবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব।”

তৃণমূলের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামেদের লড়াইয়ের কথা মনে করিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মত, “এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাম বাস্তুতন্ত্রের (লেফট্ ইকো সিস্টেম) পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। তাই রাজ্যের শাসক, কেন্দ্রের শাসক বিরোধিতায় নেমে পড়েছে। আসলে এই আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম নেই, উঁচু জাত-নিচু জাত নেই, মন্দির-মসজিদ নেই তাই বিজেপির বিরোধিতা। এটা ওদের সিলেবাসের বাইরে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE