Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape-Murder Case

‘লোকদেখানো আন্দোলন’ চলবে না, রাজ্য নেতাদের নির্দেশ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের, শুরু তৎপরতা

আরজি কর-কাণ্ডে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যে। প্রধান বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও বিজেপির উপস্থিতি খুব কম বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবার কড়া ভাষায় তার নিন্দা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।

BJP central leadership wants effective movement on RG Kar issue

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ১৩:০৭
Share: Save:

দেরিতে হলেও আরজি করের ঘটনা নিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। তবে এখনও পর্যন্ত তাদের কোনও আন্দোলন সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। পথ অবরোধ থেকে মিছিল সবই নাম-কা-ওয়াস্তে হয়েছে বলে মনে করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপিকে তাঁদের নির্দেশ, আন্দোলন করলে তাকে আন্দোলনের চেহারা দিতে হবে। ‘লোকদেখানো’ বিক্ষোভ আর সংবাদমাধ্যমে কথা বললে চলবে না।

সেই বার্তা পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন দলের রাজ্য নেতারা। বুধবার থেকে পাঁচ দিনের ধর্না নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা হয়েছে। সব নেতাদের উপস্থিতিও নিশ্চিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক ‘সফল’ করতে খুঁটিনাটি পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বু‌ধবার তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো আন্দোলনেই রয়েছি। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের অপসারণ এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের আগে আমাদের আন্দোলন থামবে না।’’

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে অবশ্য প্রথম ‘প্রথাসিদ্ধ’ রাজনৈতিক দলগুলি পিছিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে অবশ্য খানিকটা সামনের সারিতে রয়েছে সিপিএম। সঙ্গে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন। অনেক বেশি পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। বিজেপি সেখানে আটক থেকেছে বিধানসভা চত্বরে বিরোধী দলনেতার বিধায়কদের নিয়ে বিক্ষোভে। ছোটখাটো কিছু মিছিলে হেঁটেছেন সুকান্ত-সহ অন্য রাজ্য নেতারা। মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা রাস্তায় নামলেও বড় মিছিল বা সমাবেশ করতে পারেনি। শ্যামবাজারে ধর্নাতেও প্রথমে পুলিশি অনুমতি মেলেনি। পরে আদালতের নির্দেশে ধর্না শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হলেও কর্মীদের উপস্থিতি কম ছিল। ডার্বি বাতিলের পরের প্রতিবাদেও বিজেপির কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। কল্যাণ চৌবে গেলেও তিনি আইএফএ সভাপতি হিসাবে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিপিএম-সহ বিভিন্ন বাম যুব সংগঠনের লোকজন দুই প্রধানের জার্সি পরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবাদে শামিল হতে।

এই সব দেখার পরেই মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে ছিলেন রাজ্যের পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল ও মঙ্গল পাণ্ডে। সুকান্তের তখন হাওড়া ব্রিজের বিক্ষোভে যোগ দিতে যাওয়ার কথা থাকলেও বৈঠকের জন্য মাঝপথে ফিরে আসেন। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই বনসল রাগত স্বরে বলেন, ‘‘এ ভাবে লোকদেখানো আন্দোলন করলে হবে না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের চরিত্র এমন হতে পারে না। আন্দোলন করলে তা আন্দোলনের মতো করতে হবে। লোকে যেন বুঝতে পারে।’’ ওই বৈঠকেই বুধবার এবং বৃহস্পতির আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক হয়।

শ্যামবাজারে পাঁচ দিনের ধর্না পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে। স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের দায়িত্ব পান পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো। আদালতের নির্দেশ মেনেই কর্মসূচি চালানো হবে। ধর্নামঞ্চের সামনে তিনশোর বেশি কর্মী না-থাকা নিশ্চিত করতে হবে। রাজ্য বিজেপি তালিকা তৈরি করে ঠিক করেছে একটি করে জেলা থেকে তিনশো কর্মী আনতে হবে। তাঁরা তিন ঘণ্টা করে থাকবেন। বুধবার থাকছে কলকাতা দক্ষিণ, উলুবেড়িয়া এবং আরামবাগ জেলা। প্রতি দিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্তা দফায় দফায় বিভিন্ন জেলার কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্যভবন অভিযানের সময়ে ধর্নামঞ্চ সামলাবেন প্রবীণ নেতারা। তিনটি জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে স্বাস্থ্য ভবনের দিকে। সেগুলি হল উল্টোডাঙা, সল্টলেকের করুণাময়ী এবং সিটি সেন্টার দুই। তবে পুলিশ শুধু একটি মিছিলের অনুমতি দিলে সেটি উল্টোডাঙা থেকে করতে চায় রাজ্য বিজেপির একাংশ। যদিও জ্যোতির্ময় বলেন, ‘‘পুলিশের জন্যই তো এত কিছু। রাজ্যে এত অরাজকতা। সেই পুলিশের কথায় সব হবে নাকি! আমরা তিনটে মিছিলই নিয়ে যাবে স্বাস্থ্য ভবনে। দেখি না, আমাদের আটকাতে কত পুলিশ আছে!’’

সাধারণ মানুষ কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে সব মিছিল বা জমায়েত করছে, সেখানেও বিজেপি নেতা-কর্মীদের যোগদান পর্যাপ্ত নয় বলে সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবারের বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্ব জানায়, এই ধরনের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বাংলায় নেই। সাধারণের আন্দোলনে মিশে গেলে দলের লাভই বা কী হবে? কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাল্টা পরামর্শ, এখন বাংলার যে পরিস্থিতি, তাতে হাতে-হাতে লাভের কথা ভাবার সময় নয়। এখন আন্দোলনে থাকলে তার ফল পরে পাওয়া যাবে। দলের পতাকা ছাড়া সাধারণের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও করতে বলা হয়েছে। সুনীল এমনও বলেছেন যে, সাধারণের মিছিলে ‘বন্দেমাতরম্’ এবং ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান দিতেই পারেন কর্মীরা। তাতে সকলে বুঝতে পারবে বিজেপির অংশগ্রহণ। অথচ ‘অরাজনৈতিক’ মিছিলে রাজনীতি করার অভিযোগ কেউ তুলতে পারবে না। ‘বিচার চাই’ স্লোগানের সঙ্গে ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’ স্লোগানের মিশেল ঘটানো যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে হাজির না থাকলেও ধর্নামঞ্চে আসাব কথা রয়েছে শুভেন্দুর। আসবেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। বৃহস্পতিবার তিনটি মিছিলের অনুমতি পাওয়া গেলে তিন মুখ হবেন সুকান্ত, শুভেন্দু এবং দিলীপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy