Advertisement
E-Paper

মাসের শুরুতে বিজেপির রাম, শেষে তৃণমূলের জগন্নাথধাম, হিন্দুত্বের পাল্টা হিন্দুত্ব! বাঙালি অস্মিতাও জুড়ে থাকছে ভাষ্যে

শনিবার থেকে এক সপ্তাহ ধরে রামনবমীর নানাবিধ কর্মসূচি করবেন শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতারা। বিরোধী দলনেতার কর্মসূচি করার কথা মমতার বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরেও। আবার মাসের শেষে শুভেন্দুর জেলায় যাবেন মমতা।

BJP celebrates Ramnavami in early April, Mamata Banerjee to inaugurate Jagannath Dham at Digha at the end of the month

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩০
Share
Save

মাসের শুরু হচ্ছে ‘জয় শ্রীরাম’ দিয়ে। সব ঠিক থাকলে শেষ হবে ‘জয় জগন্নাথ’ দিয়ে।

এপ্রিলের শুরুতে যেমন রামনবমী নিয়ে ময়দানে বিজেপি, মাসের শেষে (৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন) দিঘার জগন্নাথধাম উদ্বোধনে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রামনবমীর মধ্যে কতটা ‘বাঙালিয়ানা’ রয়েছে, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলেছেন মমতা। যে সূত্র ধরে শাসকদলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় মানছেন, রামনবমীকে বিজেপি ‘রাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে পর্যবসিত করতে চাইছে। ফলে জগন্নাথধাম উদ্বোধন হয়ে উঠবে তার ‘পাল্টা কর্মসূচি’।

২০১৬ সাল থেকে বাংলার পার্বণের ক্যালেন্ডারে রামনবমীর এই জাঁকজমক যুক্ত হয়েছে। আগে রামনবমীর শোভাযাত্রা হত কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়। কিন্তু গত ন’বছরে তা শুধু কলেবরে বাড়েনি, প্রতি বছরে তা আগের বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে মাঝে কোভিডের দু’বছর তা দেখা যায়নি। আবার রামনবমীকে কেন্দ্র করেই হিংসা, সংঘর্ষ, কার্ফু পর্যন্ত দেখেছে বাংলার একাধিক জেলা। তবে এ বার প্রশাসনকে আগে থেকেই সতর্ক করে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই মমতা বলেছেন, ‘‘বাঙালির কাছে রামের অকালবোধনই অরিজিনাল (আসল)।’’ ইতিহাস স্মরণ করিয়ে মমতার বক্তব্য, “সেই দিনটা কি আপনাদের মনে পড়ে না? সেটা কি রামনবমী নয়? ১০৭টা ফুল দিয়ে যখন একটা বাকি ছিল, রামচন্দ্র নিজের চোখ দিতে গিয়েছিলেন। ইতিহাসটা জানুন।” পাশাপাশিই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমাদেরও অনেকে রামনবমী করেন। তাতে কোনও অসুবিধা নেই।’’

গত বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে যে যে অস্ত্রে তৃণমূল রুখে দিতে পেরেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বাঙালিয়ানা’। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে অভিহিত করত তৃণমূল। যে ধারা অব্যাহত ছিল ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও। ২০২১ এবং এবং ২০২৪— দু’টি ভোটেই বিজেপি তাদের পুরনো ‘অস্ত্র’ হিন্দুত্বে শান দিয়েছিল। কিন্তু তা দিয়ে তৃণমূলের ভোটে তারা ভাঙন ধরাতে পারেনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পদ্মশিবির ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পরে প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, হিন্দির আগ্রাসনের জন্যই বাংলার মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফেরাল।

গত কয়েক মাস ধরে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা যা বলছেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট— বিজেপি চাইছে সমস্ত হিন্দু ভোট এককাট্টা করতে। শুভেন্দু এ-ও বলছেন যে, ‘বাঙালি-আবাঙালি’ করে তৃণমূল আসলে হিন্দুদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চায়। বিজেপি যখন হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করে সেই ভোট তাদের বাক্সে টানতে মরিয়া, তৃণমূলও তখন হিন্দুত্বকে বাঙালিয়ানার মোড়কে পরিবেশিত করতে চাইছে। তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদের কথায়, ‘‘এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, বাঙালির জীবনে শ্রীরামচন্দ্রের থেকে জগন্নাথদেব অনেক বেশি কাছের। তার ইতিহাসও সুদীর্ঘ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও বাঙালির কাছে রথযাত্রা মানে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। আর বিজেপির কাছে রথযাত্রা মানে ‘রাজনৈতিক’। কখনও তা লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথ, কখনও মুরলী মনোহর জোশীর। বিজেপি যে হিন্দু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে, তা বাঙালি হিন্দুদের সঙ্গে খাপ খায় না।’’

তৃণমূলের অনেকের মতে, সংখ্যালঘু ভোট মমতার দিকে ছিল এবং আছে। ভবিষ্যতে সেই বিষয়ে বড় ভূমিকা নেবে ওয়াকফ বিল। আবার বাঙালি হিন্দুদের কাছে ‘বার্তা’ দেওয়াও জরুরি। তাতে বিজেপি যে ‘মুসলিম তোষণের’ অভিযোগ করে, তা প্রতিহত করা যাবে। দু’টি বিষয় সমান্তরাল ভাবে চললে বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ পরিসরেও ‘ইতিবাচক’ বার্তা যাবে। প্রসঙ্গত, এর মধ্যেই চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় প্রতি বারের মতো এ বারও কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন মমতা। ওই দিন কালীঘাট স্কাই ওয়াকের উদ্বোধনও করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল অবশ্য মানেত চাইছে না যে, রামনবমীর পাল্টা হিন্দুত্ব প্রদর্শনের ‘মঞ্চ’ হয়ে উঠতে চলেছে অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় জগন্নাথধাম উদ্বোধন। যেমন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘জগন্নাথধাম একটা প্রকল্প। তা আগে থেকেই ঠিক করা। কোনও ভাবেই রামনবমীর পাল্টা নয়।’’ তবে একই সঙ্গে কুণাল ‘বাংলা এবং বাঙালি’ সংস্কৃতির কথাও টেনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাঙালি ঘরে ঘরে রামকে পুজো করে। সেটা রামের অকালবোধনের দুর্গাপুজো। আর বিজেপি রামকে নিয়ে রাজনীতি করে। ওরা রামনবমীর নামে গোবলয়ের সংস্কৃতি বাংলায় আরোপিত করতে চায়।’’ পাল্টা বিজেপি মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘বাঙালির ঘরে ঘরে চিরকাল রামনবমী পালিত হত। তৃণমূল বাঙালিয়ানার কথা বলে ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে চাইছে। বাঙালিয়ানাকে আরও জোরালো করতে জগন্নাথধাম উদ্বোধনে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের পুরীতে অন্তর্ধান নিয়ে মমতা কোনও প্রশ্ন তুলে দিলেও আমি অবাক হব না।’’

রাজনৈতিক মহলের অনেকে অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও জগন্নাথধাম উদ্বোধনকে দেখতে চাইছেন । তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় এই মুহূর্তে বিজেপির রাজনীতিকে চড়া হিন্দুত্বের মোড়কে যিনি উপস্থাপিত করছেন, তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে, তাঁর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেই মমতা জগন্নাথধাম উদ্বোধন করবেন। এবং শুভেন্দুর উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইবেন। গত ডিসেম্বরে দিঘায় জগন্নাথধামের কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা ইস্কনের প্রধান সেবায়েত রাধারমণ দাস। সেই সময়ে বাংলাদেশে ইস্কনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার নিয়ে এ পার বাংলাও উত্তাল। শুভেন্দুরা রাস্তায় নেমে মিছিলও করেছিলেন। কিন্তু মমতার সঙ্গে দিঘায় চলে গিয়েছিলেন কলকাতা ইস্কনের প্রতিনিধি। রাধারমণের সমালোচনা করতে হয়েছিল শুভেন্দুকে।

Mamata Banerjee Suvendu Adhikari TMC BJP Ram Navami Akshaya Tritiya

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}