রুদ্রনীল ঘোষ অপর্ণা-কৌশিকদের ‘তথাকথিত বুদ্ধিজীবী’ এবং ‘উভজীবী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলায় এবার বিশিষ্ট-প্রবুদ্ধের লড়াই! বিশিষ্টেরা অবশ্য সরাসরি কোনও শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা সমাজের ‘শুভবুদ্ধিসম্পন্ন’ অংশের অঙ্গ। তাঁদের বিরুদ্ধে যাঁরা পথে নামবেন, তাঁরা হলেন গেরুয়া শিবিরের বিশিষ্টজন। পদ্মের পরিভাষায় ‘প্রবুদ্ধ’।
রাজ্যে রামনবমী পালন ঘিরে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু জায়গায় অনভিপ্রেত অশান্তি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত ৪ এপ্রিল সরব হন বঙ্গসমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের একাংশ। প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, অনির্বাণ ভট্টাচার্যেরা জানান, রামনবমী উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে ‘ধর্মীয় মেরুকরণ’-এর রাজনীতি চলছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। এ বার এর পাল্টা সঙ্ঘ (আরএসএস) মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের বিশিষ্টদের রাস্তায় নামাচ্ছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আগামী ১৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল পর্যন্ত হবে সেই প্রবুদ্ধ মিছিল। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গ বিবেক’। পরে একটি প্রতিনিধি দল যাবে রাজ্যপালের কাছে। সেই কর্মসূচি জানাতে গিয়ে পরিষদের বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘সনাতন সমাজের উপরে যে আঘাত এসেছে, তার প্রতিবাদে আমরা প্রবুদ্ধদের, মানে যাঁদের সবাই ‘বুদ্ধিজীবী’ (বিশিষ্টজন বা বিদ্বজ্জন) বলেন, তাঁদের নিয়ে মিছিল করব। বিভিন্ন সংগঠনের বিশিষ্টেরা তাতে যোগ দেবেন।’’
রামনবমী ঘিরে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রকাশ্য বিবৃতিতে অপর্ণা-কৌশিকরা লিখেছিলেন, ‘‘রামনবমী উদ্যাপন কেন্দ্র করে গত ৬ দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড সক্রিয় হয়ে উঠেছে, নাগরিক হিসাবে আমরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন বোধ করছি। তীব্র ভাবে এই ঘটনাবলির প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ ওই বিবৃতি প্রকাশের পরে পরেই রাজ্য বিজেপির বিদ্বজ্জন শাখাও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। শাখার আহ্বায়ক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের স্বাক্ষর-সহ সেই বিবৃতিতে সনাতন সংস্কৃতি, মানে ধর্মীয় শোভাযাত্রার উপরে ‘দুর্বৃত্ত হামলার’ নিন্দা করা হয়। সংবিধান রক্ষারও ডাক দেওয়া হয়। বিজেপির বিশিষ্টদের তালিকায় ছিলেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষও। যিনি অপর্ণা-কৌশিকদের ‘তথাকথিত বুদ্ধিজীবী’ এবং ‘উভজীবী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথার সময়ে অপর পক্ষের বিশিষ্টদের সম্পর্কে কিছুটা ‘আক্রমণাত্মক’ হন রুদ্রনীল। তিনি বলেন, ‘‘বড় দুঃখের সময় চলছে। সংখ্যলঘু সমাজকে যখন শাসক ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছিল, তখন যাঁরা নীরব ছিলেন, তাঁরাই সরব যখন সংখ্যালঘুরা ভুল বুঝতে পেরে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয় যখন শাসকের ঘরে, তখন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্তি ছড়াতে বিবৃতি দিচ্ছেন।’’ রুদ্রনীলের আরও বক্তব্য, ‘‘ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতার জামা গায়ে চাপিয়ে থাকা মানুষদের চিন্তা, শাসকদলের পক্ষে ভোটটা থাকবে তো? সে কারণেই তাঁদের গাত্রদাহ।’’ বিশিষ্টদের ‘উভজীবী’ বলে আক্রণ করে অভিনেতা রুদ্রনীলের প্রশ্ন, ‘‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের সময়ে তাঁরা নীরব ছিলেন কেন? চাকরি দুর্নীতি নিয়ে পথে নামেননি কেন? তাই এখন চুপ থাকুন। হয় সুখেস্বাচ্ছন্দ্যে থাকুন, না হয় সব মানুষের হয়ে কথা বলুন।’’
রুদ্রনীলের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন অভিনেতা কৌশিক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমস্ত আলোচনাই হয় রাজনৈতিক নেতারা কে কী বললেন তার উপর। সেটা ঘটনাচক্রে রুদ্রনীল ঘোষ, দিলীপ ঘোষ, কুণাল ঘোষ বা শতরূপ ঘোষ। যে কোনও ঘোষই হোক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বাণী দিলে আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে, এ নিয়ে আপনি কী নিয়ে বলবেন? কিন্তু ভারতের সাধারণ মানুষের সমস্যা এবং তাঁরা কী বলছেন, তা নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত।’’ কৌশিকের দাবি, রামনবমী পালনের থেকেও আলোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দেশে শিশুরা প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছে কি না। বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পুষ্টিকর খাবার মিলছে কি না। তিনি বলেন, ‘‘রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, ইদ বা বড়দিনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের খেতে পাওয়া। কিন্তু সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির আলোচনায় আগ্রহ নেই। রামনবমীর মিছিল নিয়ে আগ্রহ। কারণ, তা থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই কিছু না কিছু সুবিধা পাচ্ছে। আমাদের চিঠিতে কোথাও রামনবমীকে আক্রমণ করা হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলা হয়েছে।’’ এর পরেই কৌশিক বলেন, ‘‘হয় রুদ্রনীল বাংলাটা বোঝে না অথবা দালালি করার জন্য বাংলাটা বুঝতে চাইছে না! কিংবা ওর রাজনৈতিক দাদারা এটাই বলতে বলেছেন।’’
বাবা কৌশিকের মতো আক্রমণাত্মক নন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের সময়েও যে আমাদের তরফে কথা বলা হয়েছিল, সেটা খুঁজে দেখলেই পাওয়া যাবে। সব প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো দেখানোই যায়। রামপুরহাটের ঘটনা-সহ বর্তমান সরকারের অন্য অনেক বিষয়ে নিয়েই আমরা সরব হয়েছি। আসলে ওঁরা বলতে হয় তাই বলছেন।’’
রুদ্রনীল-বর্ণিত ‘উভজীবী’ অনির্বাণ অবশ্য বলেন, ‘‘রুদ্র’দা আমার অগ্রজ। তাই অপমানজনক কিছু বলতে পারব না। তবে আমি সরকারি কিছু সুবিধা আজ পর্যন্ত নিইনি। আর টেট দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলিনি, তা-ও নয়। তবে সব বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে কথা বলা সম্ভব নয়। আমাদের ধারাবাহিকতা থাকে আমাদের কাজ, আমাদের অভিনয় নিয়ে। রুদ্র’দা রাজনীতিটাও করেন। তবে আমার মনে আছে, অনেক বিষয়েই বলা হয়েছে। যেমন চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চে গিয়েছিলেন কৌশিক’দা (কৌশিক সেন)।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy