প্রথম থেকেই এ ছবি নকল বলে দাবি করেছিলেন দিবাকর।
দু’টি ছবি। তার পাল্টা হিসাবে একটি ভিডিয়ো। যা ঘিরে শনিবার তমলুকে দিনভর চলল রাজনৈতিক চাপানউতোর। একে অন্যের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করল তৃণমূল-বিজেপি।
শুক্রবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন মেচেদার খাঞ্জাদাপুর গ্রামে দু’টি ছবি দেওয়া পোস্টার পড়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, বিজেপি’র রাজ্য সভাপতির সামনে নমস্কারের ভঙ্গিতে রয়েছেন শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি দিবাকর জানা। অন্যটিতে দিবাকর ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন দিলীপকে। দিবাকর যে বিজেপি’তে যোগ দিতে পারেন, এমন ইঙ্গিতও ছিল পোস্টারের লেখায়।
প্রথম থেকেই ছবি দু’টি নকল বলে দাবি করেছিলেন দিবাকর। এর স্বপক্ষে তিনি নিজের একটি ‘আসল’ ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। এর পরেই একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ভীম পাত্র নামে বিজেপি’র এক ব্লক নেতা জানাচ্ছেন, তৃণমূল নেতা বামদেব গুচ্ছাইত এবং জয়দেব বর্মণ তাঁকে দিবাকরের ওই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতে বলেছিলেন। দিবাকরের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
ভীম অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, দিবাকর এবং তাঁর লোকেরা জোর করে তাঁকে দিয়ে ওই ভিডিয়ো-বিবৃতি করিয়েছেন। এ নিয়ে দিবাকরের বিরুদ্ধে ভীম তমলুক থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, নোনাকুড়ি বাজারে যাওয়ার পথে জানুবাসান পানবাজারের কাছে দিবাকরের নেতৃত্বে ৮-১০ জন লোক তাঁকে আটক করে। বন্দুক দেখিয়ে ভীমকে ব্লক তৃণমূল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি। অভিযোগপত্রে ভীম জানিয়েছেন, তৃণমূলের অফিসে তাঁকে বিজেপি জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য-সহ সভাপতির মান সম্মান হানি হবে এমন বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়।
ভীমের দাবি, ‘দিবাকরের বিরুদ্ধে গতকাল সংবাদমাধ্যমে আমি যে বিবৃতি দিয়েছিলাম তা মিথ্যা, এই মর্মে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ এবং আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আমার বিবৃতি প্রত্যাহারে বাধ্য করায়’।
দিবাকর অবশ্য অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভীম আগে তৃণমূলের কর্মী ছিলেন। আমি সকালে ফোন করে ভীমকে অফিসে আসতে বলেছিলাম। সেখানে এসে ভীম নিজেই জানিয়েছেন যে, কয়েকজনের কথায় তিনি আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
ভীমের ওই অভিযোগের পরেই এলাকায় দিবাকরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ গৌরহরি মাজী এ দিন দুপুরে তমলুক থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, কাঁকটিয়া পানবাজারে বিজেপি’র নেতা-কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। আর তাতে জড়িত রয়েছেন ভীম। গৌরহরির বলেন, ‘‘দুপুর ২টো নাগাদ কাঁকটিয়া বাজারে বিজেপি অফিসের কাছে রাস্তায় বিজেপি জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক, ব্লক নেতা ভীম পাত্র এবং মধুসূদন মণ্ডল-সহ কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী লাঠি, পিস্তল হাতে নিয়ে আমাকে আটকায়। বিজেপি’র অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করেন।’’
গৌরহরিকে আক্রমণের অভিযোগ নিয়ে বিজেপি’র তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘দিবাকর জানা নিজের কুকীর্তি ঢাকার জন্য এইসব মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন। আমরা এসবে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’
এ দিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের সঙ্গে এ দিন ব্লকের দুই তৃণমূল নেতা জয়দেব বর্মন ও অপূর্ব জানার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই জয়দেবই দিবাকরের আইন বহির্ভূত সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর ছবি সামনে আসায় ফের দিবাকর এবং জয়দেবের বিরোধ সামনে এসেছে। জয়দেবের দাবি, ‘‘দিবাকর নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে দিয়ে নকল ছবি তৈরি করেছে। বিজেপির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ ভাইরাল হওয়া ছবিটি যে ভুয়ো, তার প্রমাণ হিসাবে নিজের ফেসবুকে পেজে ‘আসল’ ছবিও আপলোড করেছেন জয়দেহ। তাতে তিনি লিখেছেন, ছবিটি ২০১৭ সালের।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দিবাকরের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘জয়দেবের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ওই ছবি কারা দিয়েছে তা উল্লেখ রয়েছে। এরপর আমার কিছু বলার নেই।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy