Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Recruitment Scam

ইডি অফিস থেকে বেরিয়ে শান্তনুর ‘ঘনিষ্ঠ’ আকাশের ভোঁ দৌড়! রাতবিরেতে রাস্তায় তুমুল হুলস্থুল

গত শনিবার হুগলির বলাগড়ের রিসর্টে শান্তনু-‘ঘনিষ্ঠ’ সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ, বিশ্বরূপ প্রামাণিক এবং নিলয় মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। তাঁদেরকে বেশ কিছু নথি নিয়ে আবার ইডি দফতরে আসতে বলা হয়।

Supratim Ghosh is on run.

সল্টলেকের রাস্তা দিয়ে ব্যাগ কাঁধে ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০২:০০
Share: Save:

রাত প্রায় সাড়ে ১০টা। সল্টলেকের রাস্তা দিয়ে ব্যাগ কাঁধে ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়চ্ছেন এক ব্যক্তি। তাঁর পিছন পিছন আরও ছয়-সাত জন। সংবাদমাধ্যমের ওই কর্মীদের কারও হাতে ক্যামেরা, তো কারও হাতে বুম। দৌড় থামতেই দেখা গেল তিনি আর কেউ নন, বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ। সল্টলেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতর থেকে বেরোনোর পর সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যেতেই তিনি দৌড়তে শুরু করেন। কিন্তু শেষে হাঁপিয়ে গিয়ে দৌড় থামাতেই তাঁকে ঘিরে ধরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। শুরু হল প্রশ্নবাণ।

গত শনিবার হুগলির বলাগড়ের রিসর্টে শান্তনু-‘ঘনিষ্ঠ’ আকাশ, বিশ্বরূপ প্রামাণিক এবং নিলয় মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। তাঁদেরকে ফের বেশ কিছু নথি নিয়ে ইডি দফতরে আসতে বলা হয়। সেই মতো বুধবার বেলা ১২টার পর ইডি দফতরে ঢোকেন আকাশ এবং নিলয়। রাত ১০টার পর তাঁরা সেখান থেকে বার হন। বাইরে বেরিয়েই তাঁদের সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আকাশ দৌড়ে পালাতে চাইলেও পারেননি। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নে আকাশ জানান, তিনি এমনিই এসেছিলেন দরকার ছিল বলে। সাংবাদিকরা আরও প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে শুধু বলতে থাকেন, “কেন বিরক্ত করছেন, বাড়ি যেতে দিন।”

নিলয় যদিও জবাব দেন। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “শান্তনুর সঙ্গে কী সম্পর্ক, কী ভাবে পরিচয় হল সেই বিষয়েই জানতে চেয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা।” বুধবারও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে আসার পর নিলয় দাবি করেন, এক সময় শান্তনুর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক থাকলেও গত দেড় বছর ধরে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। শান্তনুর কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নিলয়। এক জন সিভিক পুলিশ থেকে কী ভাবে শান্তনুর সংস্থার ডিরেক্টর হয়ে গেলেন তিনি, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি নিলয়।

গত শনিবার হুগলির বলাগড়ের একটি রিসর্টের মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সেখানে যান ইডি আধিকারিকরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, খাতায়কলমে ওই রিসর্টের মালিক আকাশ। তাঁদের দাবি, আদতে ওই রিসর্টের মালিক বর্তমানে ইডির হেফাজতে থাকা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। ইডি আধিকারিকরা শনিবার সকালে বলাগড়ে শান্তনুর ছায়াসঙ্গী হিসাবে পরিচিত সেই আকাশের বাড়িতে যান। আকাশকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে বলাগড়ের চাঁদড়া বটতলা এলাকার ওই রিসর্টে যান ইডি আধিকারিকরা। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। এর পর আরও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সে দিনই ডেকে পাঠায় ইডি। এই দু’জন হলেন নিলয় এবং বিশ্বরূপ। রিসর্টেই তাঁদের শান্তনুর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। ইডি সূত্রের খবর, শান্তনু এক সময় নিলয়ের নামে একটি গাড়ি কিনেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার প্রোমোটিংয়ের ব্যবসায় অন্যতম অংশীদারও এই নিলয়।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর নাম জড়ানোর পর থেকেই, নামে-বেনামে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ইডির দাবি, একাধিক বাড়ি, রেস্তরাঁ, বিলাসবহুল বাগানবাড়ির মালিক এই শান্তনু। শান্তনুর পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি টাকারও বেশি গচ্ছিত রয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে এল, কোথায় গেল, কবে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy