মায়ের পাশে গঙ্গাধর। নিজস্ব চিত্র
‘আমি ভারতীয়, বাংলাদেশি নই’— অসমের ‘ডিটেনশন’ শিবিরে এ কথা বুঝিয়ে উঠতে পারেননি বিষ্ণুপুরের রাধানগরের যুবক গঙ্গাধর পরামানিক। প্রায় চার বছর অসমের গোয়ালপাড়া ‘ডিটেনশন’ শিবিরের বন্দি দশা থেকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়ে বুধবার বাড়ি ফিরে উচ্ছাসের মধ্যেও উদ্বেগে রয়েছেন তিনি।
মা-বাবার এক মাত্র ছেলে দরিদ্র পরিবারের গঙ্গাধর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই রোজগারের চেষ্টায় এলাকায় ছোটখাট কাজে নেমে পড়েন। এক দিন হঠাৎ তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘বাইরে গেলে বেশি রোজগার হবে, এই আশায় ১৬ বছর আগে বাড়িতে কিছু না জানিয়েই এক দিন ট্রেনে উঠে পড়ি। ট্রেন থামে গুয়াহাটিতে। তখন আমার সতেরো বছর বয়স। ভোটারকার্ড বা আধারকার্ড ছিল না। জন্মের শংসাপত্রও ছিল না। রেশন কার্ড বাড়িতে ছিল। থাকা-খাওয়ার শর্তে একটা হোটেলে বাসন ধোয়ার কাজ পাই। কিন্তু টাকা পেতাম না বলে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারিনি। পরে বাড়ির ঠিকানাও গুলিয়ে যায়।’’
ঘটনাচক্রে, সেটাই তাঁর কাল হয়। তিনি জানান, তাঁর কাছে যে কোনও বৈধ পরিচয় নেই, সে কথা ২০১৭ সালের হোটেলের এক সহকর্মী থানায় জানিয়ে দেন। গঙ্গাধরের কথায়, ‘‘পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরিচয়পত্র দেখাতে পারিনি। ভয়ে ঠিকানাও বলতে পারিনি। ঠাঁই হয় গোয়ালপাড়ার ‘ডিটেনশন’ শিবিরে।’’ তিনি জানান, ‘ডিটেনশন’ শিবিরে বন্দিদশায় খুব কষ্টে দিন কেটেছে তাঁর।
মাস তিনেক আগে ডিটেনশন শিবিরে সমীক্ষা চালাতে গিয়ে গঙ্গাধরের বিষয়ে জানতে পারেন ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (সিজেপি) নামের একটি সংগঠনের কর্মীরা। গঙ্গাধরকে বাড়ি ফেরাতে আসা ওই সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর নন্দ ঘোষ ও আইনজীবী অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘ঠিকানা বলতে শুধু বাঁকুড়ার রাধানগরের নাম করেছিলেন। ফেসবুকে খোঁজ করে রাধানগর হাইস্কুলের এক প্রাক্তনী, বর্তমানে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাঁর থেকে বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষের নম্বর পাই। তিনি গঙ্গাধরের পরিবারকে চিহ্নিত করেন।’’
এর পরে তাঁরা ‘ফরেনার্স ট্রাইবুনাল’-এর কাছে গঙ্গাধরের জামিনের আবেদন জানান। নিজেরা জামিনদার হন। মঙ্গলবার ছাড়া পেতেই তাঁকে নিয়ে বাড়ির ট্রেন ধরেন নন্দবাবুরা। তিনি জানান, গঙ্গাধরকে নিয়মিত বিষ্ণুপুর থানায় হাজিরা দিতে ট্রাইবুনাল নির্দেশ দিয়েছে। নন্দবাবু বলেন, ‘‘গঙ্গাধর ও তাঁর মায়ের রেশন কার্ডের নকল আমরা সংগ্রহ করেছি। গঙ্গাধর ও তাঁর মায়ের আধারকার্ড তৈরি করতে হবে। গঙ্গাধরের স্কুলের শংসাপত্রও লাগবে। এ জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।’’ রাধানগর পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্যা বিজলি বাগদি বলেন, ‘‘গঙ্গাধর ও তাঁর পরিবারের পরিচয়পত্র তৈরির জন্য সব রকম সাহায্য করা হবে।” মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্তের আশ্বাস, “প্রয়োজনীয় সরকারি পরিচয়পত্র দ্রুত তৈরি করা হবে।’’
ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি গঙ্গাধরের মা ভারতী পরামানিক। তিনি বলেন, “ছেলের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ফিরে যখন পেয়েছি, আর ওকে ছাড়ব না।’’ গঙ্গাধরও বলেন, ‘‘ডিটেনশন শিবিরে ফিরতে চাই না। যে ভাবেই হোক নাগরিকত্বের প্রামাণ্য নথি পেতেই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy