বীরভূমের পাথর শিল্পাঞ্চল ডেউচা-পাঁচামিতে গড়ে উঠবে কয়লা খনি প্রকল্প। নিয়োগপত্র ও জমির দাম দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু, খনি-বিরোধী স্বরও আছে। কী পরিস্থিতি ওই তল্লাটে? আজ দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি।
ফাইল চিত্র।
যতই ‘ইন্ধন’ থাকুক, প্রস্তাবিত খনি এলাকায় বসবাসকারীদের সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়া শুরু হতেই সেই ছবিটা বদলাবে বলে মনে করছে বীরভূম জেলা প্রশাসন।
সেই ভাবনা যে খুব ভুল নয়, তা বোঝা যাচ্ছে লাঠি হাতে খনি-বিরোধী আন্দোলনের পুরভাগে থাকা এক আদিবাসী মহিলার কথায়। দেওয়ানগঞ্জের বাসিন্দা ওই মহিলার কথায়, ‘‘আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। তবে এটাও ঠিক যে, সরকারকে জমি দিয়ে যাঁরা ক্ষতিপূরণ ও চাকরি পাচ্ছেন, তাঁদের দেখে বাকিরা প্রভাবিত হচ্ছেন। ফলে, এই আন্দোলনকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতা কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন,‘‘কবে চাকরি পাব, কবে ক্ষতিপূরণের চেক পাব, এমন প্রশ্ন নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ফোনে ফোনে আমরা ক্লান্ত। ফলে, যে যাই দাবি করুক না কেন, মূলত খনি এলাকার বাইরের লোকজনের সহযোগিতায় এই আন্দোলন টিকবে না।’’ প্রায় একই সুর তৃণমূলের আদিবাসী নেতা সুনীল সরেনের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারের কথা ও কাজ যে এক, সেটা এলাকার মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। তাই, এত দিন যাঁরা ভুল বোঝাচ্ছিলেন স্থানীয়দের, তাঁরা বিচ্ছিন্ন হবেনই।’’
বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ, পাট্টা, চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। ভাল সাড়া। যাঁরা এখনও জমি দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেননি, তাঁরাও আগামী দিনে মত বদলাবেন বলে আমরা আশাবাদী।’’
আন্দোলনের আঁচ কমে আসবে বলে দাবি করছেন নিশ্চিন্তপুর মৌজার এক প্রৌঢ়ও, যিনি ক’দিন আগেই জমি দানের সম্মতিপত্রে সই করে ক্ষতিপূরণ বাবদ লক্ষাধিক টাকার চেক পেয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কাগজে কলমে ওই অঞ্চলে ‘অবৈধ’ পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ করা হলে প্রশাসন বা খাদান মালিকেরা নন, চাপে পড়বেন আন্দোলনরকারীরাই। যে কারণে কয়লা খনিতে বাধা আসছে, তার অন্যতম পাথর থেকে কাঁচা টাকা আয়ের সুযোগ। পাথর খাদান বন্ধ থাকলে সেই রাস্তা কিন্তু বন্ধ। তার চেয়ে সরকারের প্যাকেজ নেওয়া ভাল বলে আমার মতো অনেকেই
মনে করছেন।’’
খনি-বিরোধী আন্দোলন বজায় থাকবে কি না, সেটা সময় বলবে। তবে, আন্দোলন গড়ে উঠার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মত স্থানীয়দের। তাঁরা জানাচ্ছেন, আদিবাসীরা নিজেদের ভিটে মাটি নিয়ে খুবই স্পর্শকাতর। খনি হলে এত দিনের বসত ছেড়ে কোথায় যাবেন, জীবন-জীবিকার কী হবে— এই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াতে তাঁরা যখন ব্যস্ত, নানা সংশয় রয়েছে মনে, তখন পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’, বাসিন্দাদের প্রতি ‘অসহিষ্ণু’ মনোভাব, খনির সমর্থনে শাসকদলের তরফে হওয়া বাইক-মিছিল বা অন্য কর্মসূচি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল বলে
মত অনেকের।
সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘খনি নিয়ে আমরা কিছু প্রশ্ন তুলেছিলাম। তার কোনও উত্তর রাজ্য সরকারের তরফে আসেনি। খনি এলাকার মানুষজনও তাঁদের সব সংশয়ের জবাব পাননি। স্বাভাবিক ভাবেই যাঁরা উচ্ছেদ হবেন, তাঁদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিচ্ছি আমরা।’’ হরিণশিঙার এক বাসিন্দা, যিনি এখনও জমি দেওয়ার অঙ্গীকার বা চাকরির আবেদন করেননি, বলছেন, ‘‘সরকার বা শাসকদলের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, দিনের শেষে আমাদের ভাল আমাদেরই বুঝতে হবে। কাউকে উচ্ছেদ হতে গেলে সেখানকার লোকজন কী বলছেন, সেটা ভাল করে শুনতে হবে।’’
পাথর না কয়লা, ভিটে না ভবিষ্যৎ—এই টানাপড়েন আপাতত জিইয়ে থাকবে বীরভূমের এই রুক্ষ প্রান্তরে। ডেউচা ঘুরে এটা স্পষ্ট, সমস্য়া এখনই মেটার নয়। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy