Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ছুটির দিনে ভোগান্তি

জল জমে বিকল ট্রাক, ভেদিয়ায় ফের যানজট

রেললাইনের নীচে খুবই সরু আন্ডারপাস। জাতীয় সড়কের উপরে সেই একচিলতে ফাঁক গলে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার গাড়ি। কলকাতা থেকে বোলপুর আসা-যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তায় এই আন্ডারপাসের কাছে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও পাকাপাকি পুলিশি ব্যবস্থা নেই। আন্ডারপাসে নেই নিকাশির ব্যবস্থাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

রেললাইনের নীচে খুবই সরু আন্ডারপাস। জাতীয় সড়কের উপরে সেই একচিলতে ফাঁক গলে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার গাড়ি। কলকাতা থেকে বোলপুর আসা-যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তায় এই আন্ডারপাসের কাছে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও পাকাপাকি পুলিশি ব্যবস্থা নেই। আন্ডারপাসে নেই নিকাশির ব্যবস্থাও।

ফল যা হওয়ার তাই হল। রবিবারের তুমুল বৃষ্টিতে কয়েক ফুট জল দাঁড়িয়ে গেল বর্ধমানের আউশগ্রামের ভেদিয়া এলাকার সেই আন্ডারপাসে। তার মধ্যে দিয়েই পাথর বোঝাই একটি ট্রাক যেতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল। আর তার জেরে আন্ডারপাসের দু’পাশেই সার দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে গেল ছোট-বড়-মাঝারি গাড়ি। অভিযোগ, কয়েক হাজার সাধারণ যাত্রী চরম বৃষ্টির মধ্যে চরম ভোগান্তিতে পড়া সত্ত্বেও দেখা মেলেনি বর্ধমান বা একেবারে লাগোয়া বীরভূম জেলার পুলিশের। ঘণ্টা চারেক অচলাবস্থা চলার পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

বর্ধমান-সিউড়ি ২(বি) জাতীয় সড়কের উপরে রয়েছে ওই আন্ডারপাস। তার উপর দিয়ে গিয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন। এলাকায় ‘এক ফুঁকো’ বলে পরিচিত আন্ডারপাসটি মেরেকেটে ফুট বারো চওড়া। বাস বা ট্রাককে তাই খুবই সাবধানে ওই আন্ডারপাস পেরোতে হয়। উল্টো দিক থেকে সাইকেল চলে এলেও বিপত্তি! কলকাতা থেকে বোলপুর যাওয়ার অন্যতম প্রধান এই রাস্তার ওই অংশ চওড়া করা বা পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি বারবার উঠলেও কাজ হয়নি। চলতি জানুয়ারিতেই এই সঙ্কীর্ণ অংশের সুযোগ নিয়ে পরের পর গাড়ি আটকে লুঠপাট চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, একফুঁকোর কাছে প্রতিদিনই যানজট তৈরি হয়। মাঝেমধ্যেই দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়তে হয়। কিন্তু, পুলিশের দেখা মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় যানজট কাটে। বোলপুর থেকে কলকাতা বা অন্য জায়গা যাওয়ার জন্য সাধারণত ইলামবাজার সেতু পেরিয়ে যাতায়াত করে গাড়িগুলি। কিন্তু, বেশ কিছুদিন ইলামবাজারের সেতু সংস্কার চলায় ওই রাস্তা দিয়ে কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারছে না। গাড়ির চালকরা সে জন্য এই জাতীয় সড়কটি ব্যবহার করে। বিকল্প বাদশাহী রোড থাকলেও, দূরত্ব বেশি হওয়ায় ওই রাস্তা এড়িয়ে যান চালকেরা। শনি ও রবিবার কিংবা ছুটির দিনে পর্যটকদের চাপও বেশি থাকে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটা সময় বোলপুরের অবন সেতু পর্যন্ত এবং বর্ধমানের দিকে বরাগড় পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। যানজটে আটকে থাকা কলকাতার বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা সৌমিক রায়ের কথায়, “একে বৃষ্টি পড়ছে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছি। পুলিশের দেখা নেই। গাড়িও নট নড়ন-চড়ন।” বোলপুর থেকে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য মাকে নিয়ে আসছিলেন সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “দীর্ঘক্ষণ পথে থাকায় মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।” বেশ কিছু গাড়ির চালক বলেন, “ওই আন্ডারপাস আমাদের কাছে বিভীষিকা।”

বীরভূম পুলিশে এক কর্তা জানান, তাঁরা এ দিনের যানজট নিয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। তা ছাড়া ওই এলাকা বীরভূমে পড়ে না। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা আবার মেনে নিলেন, “দিনভর বৃষ্টি পড়ছিল। দুপুর বেলায় পুলিশ কর্মীরা কিছুটা গা আলগা দেওয়ার পরেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’ ভেদিয়ার কাছে ছোড়া পুলিশ ক্যাম্প ও গুসকরা বিট হাউসের পুলিশ গিয়ে আন্ডারপাস থেকে ট্রাকটিকে সরানোর ব্যবস্থা করে। যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রেল ওই লাইনের উপর উড়ালপুল তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও রাস্তা চওড়া করায় উদ্যোগী হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bhedia Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE