সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে নাম আছে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার। ফাইল ছবি
‘সাইকেল’ থেকে চালকলের ঘেরা চৌহদ্দিতে বহুমূল্য একাধিক গাড়ি। পদে পদে বিস্ময়ের ধাক্কা। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের অফিসারেরা যত নথি ঘাঁটছেন, নবতর বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে উঠছে তাঁদের চোখ।
তদন্তে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অন্যান্য সম্পত্তির সঙ্গে তাঁর নামে-বেনামে বিঘের পর বিঘে জমির হদিস পেয়েছে সিবিআই। তাদের দাবি, নথি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘেরও প্রায় দেড় বিঘা জমি কোনও এক ‘জাদুবলে’ হস্তান্তরিত হয়েছে এমন এক সংস্থার নামে, যার অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে নাম আছে অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার। তদন্তকারী সংস্থার হাতে যে-নথি পৌঁছেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই জমি সুচিন্ত্যকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি জনসেবামূলক কাজের জন্য বীরভূমে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুলুক শাখাকে দান করেছিলেন। সেই জমিই পরে কী ভাবে এক কোটি ষাট লক্ষ টাকায় হস্তান্তরিত হল, সেটাই তদন্তকারীদের কাছে নতুন বিস্ময়।
সিবিআই সূত্রের খবর, দানে পাওয়া একটি ট্রাস্টের জমি কী ভাবে হস্তান্তর হল, তা জানতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা। তারাপীঠের কাছে মুলুক নামে ওই জায়গায় এই জমির দাম আকাশছোঁয়া। এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা সেই জমি তুলনায় অনেক কম দামে কিনে নিয়েছে বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। দলিলে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের তরফে সই রয়েছে ওই শাখার সভাপতি স্বামী সঙ্ঘমিত্রানন্দের। আর এএনএম অ্যাগ্রোকেমের পক্ষ থেকে দলিলে সই করেছেন বিদ্যুৎবরণ গায়েন, যিনি আদতে অনুব্রতের বাড়িতে পাচকের কাজ করেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। ওই সংস্থা তৈরির সময় তাঁর নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। এবং ওই সম্পত্তি কেনার সময়েও তাঁর নাম ব্যবহার করে তাঁর পেশা ব্যবসা বলে দেখানো রয়েছে। সিবিআইয়ের হাতে পৌঁছনো নথি অনুযায়ী ওই এএনএম অ্যাগ্রোকেমের অন্যতম ডিরেক্টর হলেন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা।
সিবিআই সূত্রের খবর, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কাছ থেকে এএনএম অ্যাগ্রোকেম জমিটি কিনেছিল ২০১৮ সালে এবং তা রেজিস্ট্রি করা হয় ২০২১-এ। রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়া হয় এক কোটি ষাট লক্ষ টাকা দামের ভিত্তিতে। সিবিআইয়ের দাবি, যে-হেতু জমির দাম কম করে দেখানো হয়েছে, তাই কম পড়েছে রেজিস্ট্রেশন ফি-ও। এক আইনজীবী ওই সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তের পর সিবিআইয়ের অভিযোগ, সুচিন্ত্য ওই জমি দিয়েছিলেন গ্রামের পুরুষ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির কথা ভেবে। সেখানে ওই ধরনের কোনও কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এই ভাবে দান করা জমি হস্তান্তর করা যায় কি? জমির মূল্যায়নও করা সম্ভব? তদন্তকারীদের প্রশ্ন, ওই জমি যদি সঙ্ঘের তরফে সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হত, কিছু বলার ছিল না। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার কাছে সেটি কী ভাবে বিক্রি হল? যে-জমি সঙ্ঘ বিনা পয়সায় পেল, সেই জমি বিক্রির টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে? উত্তর খুঁজছে সিবিআই। তাদের দাবি, খাতায়-কলমে যে-টাকায় জমি হস্তান্তর হয়েছে দেখানো হয়েছে, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ সেই টাকা আদৌ পেয়েছিল কি না, সেটাও যাচাই করা প্রয়োজন। কার্যত চাপ দিয়েই সঙ্ঘের কাছ ওই জমি থেকে কেনা হয়েছিল বলে অভিযোগ এসেছে সিবিআইয়ের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy