২১৩-তেই ফিরল তৃণমূল। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
কবে হবে? কবে হবে? অপেক্ষার শেষ। রবিবার হয়ে গেল। ‘কবে হবে’ প্রশ্নটার জন্ম হয়েছিল ২ মে বিধানসভা নির্বাচনে ফল ঘোষণার দিন। সেদিন দলের পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে রাজ্যে ২১৩ আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু একটা ক্ষত রয়ে গিয়েছিল। সে দিনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল কোনও একটা আসন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিতিয়ে আনতে হবে। ৫ মে টানা তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা শপথ নেওয়ার পর থেকে ‘কবে হবে’ প্রশ্নটা আরও বাড়তে থাকে। সাংবিধানিক শর্ত পূরণ করতে ছ’মাসের মধ্যে জিতিয়ে আনতেই হবে সরকারের প্রধানকে। অবশেষে শপথের ঠিক পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার দু’দিন আগে বিধায়ক মমতা। একই সঙ্গে তৃণমূলের প্রাপ্তি আরও দুই। শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর। পূর্বাভাস মিলিয়ে মুর্শিদাবাদের দুই আসনে জয় পেয়েছে শাসক দল।
তবু মে মাসে ২১৩ আসনে জয়ী তৃণমূল পাঁচ মাস পরে সেই ২১৩-তেই আটকে রইল। এর পিছনে রয়েছে দু’টি দুর্ভগ্যজনক ঘটনা। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ আসনে তিনি যে জিতেছেন জানতেই পারেননি তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহ। ২৮ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিজেপি-কে। কিন্তু সেই ফল প্রকাশের আগেই করোনা কেড়ে নিয়েছিল তাঁর প্রাণ। আর বিধায়ক পদে শপথ নেওয়ার পরে মারা যান জয়ন্ত নস্কর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর জিতেছিলেন ২৩ হাজার ৬১৯ ভোটে।
তাই ওই দুই আসনে বড় ব্যবধানে জয় পাওয়ার পরেও বিধানসভায় তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা হয়ে যায় ২১১। আর রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় মমতার জন্য ভবানীপুরের বিধায়ক পদ ২১ মে ছেড়ে দেওয়ার পরে বিধানসভায় খাতায়কলমে দলের শক্তি কমে হয়ে যায় ২১০। রবিবার ভবানীপুরে মমতা, শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে তৃণমূলের আমিরুল ইসলাম এবং জাকির হুসেন জয় পাওয়ার পরে তৃণমূল বিধানসভায় আবার পুরনো শক্তিতে ফিরে এল। ২১৩। তবে একটা ফারাক রয়েছে। মে মাসের ফল অনুযায়ী ২৯২-এর মধ্যে ছিল ২১৩। আর কারণ, মুর্শিদাবাদের ওই দুই কেন্দ্রে তখন ভোটগ্রহণই হয়নি। এ বার ২৯৪-এর মধ্যে ২১৩।
তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, এই সংখ্যা তো আর কয়েকদিনের জন্য। পুজোর পরেই রাজ্যের চার কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ৩০ অক্টোবর খড়দহ, শান্তিপুর, দিনহাটা ও গোসাবায় উপনির্বাচন হতে চলেছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শান্তিপুর ও দিনহাটায় জয় পেলেও সাংসদ পদ ধরে রাখতে জগন্নাথ সরকার ও এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক বিধায়ক পদ ছেড়েছিলেন। ওই চার কেন্দ্রের ভোটের ফল ঘোষণা হবে ২ নভেম্বর। সেটা ধরেই তৃণমূলের দাবি, ২১৩ বেড়ে ২১৭ হয়ে যাবে।
বিজেপি শিবির অবশ্য এখনও মনে করছে শান্তিপুর ও দিনহাটা আসন দল ধরে রাখতে পারবে। লড়াই হবে খরদহ, গোসাবাতেও। ফলে দলের জেতা আসনের সংখ্যা কমপক্ষে ৭৭ থেকেই যাবে। কী হবে আর হবে না তা জানার জন্য অপেক্ষা মাত্র এক মাসের।
তৃণমূলের বিধায়ক সংখ্যা খাতায়কলমে রবিবারই ২১৩ হয়ে গেলেও বিজেপি-কে খাতায়কলমে কমপক্ষে ৭৭ হতে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। তবে অন্য হিসেবে, বিজেপি এখনই কমে ৭০। জগন্নাথ ও নিশীথ ইস্তফা দেওয়ায় হয়ে গিয়েছিল ৭৫। জুন থেকে অক্টোবর পাঁচ মাসে পাঁচ বিধায়ক বিজেপি ছেড়েছেন। কৃষ্ণনগর উত্তরের মুকুল রায়, বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস, কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায়, রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। প্রথম চার জন ইতিমধ্যেই তৃণমূলে। কৃষ্ণ কল্যাণীও সেই পথে বলেই খবর। এ সব হিসেব ধরলে তৃণমূল এখনই ২১৮। তৃণমূল শিবিরের দাবি, নভেম্বরের গোড়ায় সেটা কমপক্ষে ২২২ হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy