স্নেহ-স্পর্শ: মায়ের সঙ্গে ছেলে। বংশীহারিতে। ছবি: অমিত মোহান্ত
‘‘গত একটা সপ্তাহ যে কী দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কেটেছে তা আল্লাই জানেন! ওই রাতের ঘটনা মনে পড়লে এখনও শিউরে ওঠে বুক। আল্লার অসীম কৃপা ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরতে পারলাম। না হলে আমাদের যে কী হত তা জানি না।’’ এক সপ্তাহের আতঙ্ক কাটিয়ে নিজের জেলায় ফিরে এমন ভাবেই কাশ্মীরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন পারভেজ আলি। যে কথা শোনা গেল সেলিম রেজার মা সেলিমা পারভিনের মুখেও।
পারভেজের সঙ্গেই উপত্যকা থেকে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন ফরেদুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, শাহজাহান আলি, বাবলু হকের মতো ১১২ জন শ্রমিক। এঁদের সকলেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি, বংশীহারি ও গঙ্গারামপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এ দিন ভোরে বুনিয়াদপুর পৌঁছনোর পরে তাঁদের বুনিয়াদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে অভ্যর্থনা জানান জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বাস স্ট্যান্ডের বিশ্রামাগারে শ্রমিকদের প্রাতরাশের ব্যবস্থা করে নতুন পোশাক তুলে দেয় প্রশাসন। এরপর ভাড়া করা বাসে করে তাঁদের নিজেদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। ফিরে আসা শ্রমিকেরা যাতে এ দিন সুষ্ঠু ভাবে বাড়ি পৌঁছতে পারেন তা খতিয়ে দেখতে ভোর থেকেই বাস স্ট্যান্ডে বসে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ এবং গঙ্গারামপুরের মহকুমাশাসক দেবাঞ্জন রায়।
কাশ্মীরে এর আগেও অনেকবার এই শ্রমিকেরা প্লাইউডের কাজ করতে গিয়েছেন। কিন্তু অতীতে এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের কখনও হয়নি বলে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের বক্তব্য। এবারেও তো গিয়েছিলেন সেই ভাবেই। দুর্গাপুজোর পরে কুশমণ্ডি ব্লকের ১০৫ জন, বংশীহারি ব্লকের তিনজন ও গঙ্গারামপুর ব্লকের চারজন বাসিন্দা কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। গত ৩১ অক্টোবর কাশ্মীরের বারগ্রাম জেলার নওগামে পৌঁছন তাঁরা। গিয়েই শোনেন, তাঁদের থাকার জায়গা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পাঁচ বাঙালি শ্রমিককে হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
‘‘আমরা ওইদিন রাতে বাস থেকে সবেমাত্র নেমেছি। সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের পুলিশ আমাদের তুলে নিয়ে দোনপুরার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাত ১টার সময় আমাদের ক্যাম্পে ঢোকানো হয়। আমরা তো মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি!’’ বললেন কুশমণ্ডির উজিল ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা হাসান আলি। গঙ্গারামপুরের প্রাণসাগরের বাসিন্দা বছর আঠারোর মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘পুলিশ আর সেনারা বলছিল বাঙালিদের নাকি বেছে বেছে গুলি করে মারা হচ্ছে। এই কথা শুনে খুবই ভয় পেয়েছিলাম।’’
বাড়ি ফিরতে পেরে চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু বাড়ি ফেরার স্বস্তি এলেও এখানে কী কাজ করে রোজগার হবে সেই দুশ্চিন্তা ফের চেপে বসেছে তাঁদের কপালে। কারণ, কাশ্মীরে আতঙ্ক থাকলেও রোজগার ছিল অনেক! সেই রোজগারের সুযোগ কি এখানে মিলবে, এটাই এখন জ্বলন্ত প্রশ্ন এই শ্রমিকদের।
কাশ্মীরের প্লাইউড কারখানায় কাজ করা বংশীহারি ব্লকের কাকাহার মাজাপুর এলাকার ১৮ বছরের সেলিমের মত কুশমণ্ডির ব্লকের ডাঙাপাড়া, নানাহার পাড়া, আয়রা, উজলডাঙা, শেরপুরের মত একাধিক এলাকার মাটির বাড়ির বাসিন্দা ১১২টি গরিব পরিবারের জীবন জীবিকার ভিতটাই দাঁড়িয়েছিল কারও স্বামী, বাবা ও ছেলের রোজগারের উপর। কাজ হারিয়ে এক লহমায় যেন ওই শ্রমিক পরিবারগুলিকে অনিশ্চয়তা গ্রাস করে ফেলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy