ছাত্রদের নিয়ে ত্রাণে প্রকাশকান্তি (চিহ্নিত)।—ছবি নিজস্ব চিত্র।
দুঃস্থ পডুয়াদের খাওয়ানোর জন্য বারো মাস কলেজের ক্যান্টিনে তাঁর খাতা খোলা রয়েছে। কারও পড়ার বই কেনার টাকা না থাকলেও, তিনি আছেন। এ বার ছাত্রছাত্রীদের করোনা-বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করছেন বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের যামিনী রায় কলেজের বাংলার শিক্ষক প্রকাশকান্তি নায়েক। বছর একান্নর এই শিক্ষকের কথায়, ‘‘এই পড়ুয়ারা এক দিন নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। সে দিন ওরা যেন পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ায়, করোনা- পরিস্থিতিতে সেটাই শেখানোর চেষ্টা করছি।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর পেরোনো প্রকাশকান্তিবাবু স্কুলজীবনে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানে। জানালেন, গোতান সুবোধ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সে সময়ের প্রধান শিক্ষক অজিত দত্তের কাছ থেকেই তাঁর অন্যের পাশে দাঁড়ানোর পাঠ নেওয়া। বাড়িতে আছেন স্ত্রী এবং ছেলে। স্ত্রী তনুশ্রী বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই ওঁর জীবন। বাড়িতে থাকলেও ফোনে খবর নিয়ে তাঁদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেন। এ লোককে বদলানো কঠিন।’’
ছাত্রছাত্রীদের দাবি, ‘লকডাউন’ শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় আটশো মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার খরচ জুগিয়েছেন প্রকাশকান্তিবাবু। বেলিয়াতোড়ের অলিগলিতে ত্রাণ বিলি হয়েছে। প্রকাশকান্তিবাবু বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলাম, লকডাউনে অন্নসংস্থান হচ্ছে না, এমন পরিবারের তালিকা বানিয়ে দিতে। সেই মোতাবেক খাবার জিনিস কেনা হয়। পডুয়ারাই বিলি করছে। আমি সঙ্গে থাকছি।”
আরও পড়ুন: আমপানের ক্ষতি যাচাইয়ে ‘জিয়ো ট্যাগিং’ কেন্দ্রের
কলেজে ক্যান্টিন চালান অশ্বিনী দাস। তিনি জানান, ২০০১ সালে কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ‘প্রকাশ স্যরের’ মাসকাবারি খাতা রয়েছে তাঁর কাছে। প্রতি বছর অন্তত জনা পনেরো পড়ুয়ার খাওয়ার খরচ তাতে লেখা হয়। অশ্বিনীবাবুর কথায়, “শুধু ছাত্রছাত্রীরা নয়, আমি বা আমার মতো কলেজের অনেকে অসময়ে সাহায্য পেয়েছে স্যরের থেকে।’’
কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমির খানের বাবা স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী। শেখ চন্দনের বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। আমির, চন্দনেরা জানান, প্রথম বর্ষ থেকেই প্রকাশকান্তিবাবু তাঁদের ক্যান্টিনের খাওয়ার খরচ মেটাচ্ছেন। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা অনেক ছাত্রছাত্রীকেই তিনি আলাদা ভাবে পড়া বুঝিয়ে দেন। ওই কলেজের সদ্য প্রাক্তন ছাত্র শেখ নইমও বলেন, “স্যরের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে, কখনও বিমুখ হতে হয়নি।” যামিনী রায় কলেজের অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রকাশকান্তিবাবুর কাজে গর্বিত।’’
আরও পড়ুন: করোনায় নমুনা পরীক্ষার কৌশল বদলের পরামর্শ
আমির, নইম ও চন্দন মিলে ৪৩০টি দুঃস্থ পরিবারের তালিকা বানিয়ে প্রকাশকান্তিবাবুকে দিয়েছিলেন। খাবার কেনার পরে, তাঁদের সঙ্গে গিয়ে ওই পরিবারগুলিকে দিয়ে এসেছেন ‘স্যর’। আমির, নইমরা বলেন, “অসময়ে কেউ পাশে দাঁড়ালে কতটা ভাল লাগে, তা স্যর আমাদের বুঝিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করে কতটা আনন্দ মেলে, সেটাও স্যরের হাত ধরেই শিখলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy