দু’দিন আগেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাক গলাতে চায়নি দেশের শীর্ষ আদালত। রাজ্যের শাসক দলে তিন নেতা-মন্ত্রী কিন্তু সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে হাজির হয়েছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহের বাড়িতে। মনোনয়ন পেশের দিন বৃদ্ধি করে কমিশনের বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানাতে। আর সেই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যে কার্যত হুমকি দিয়ে এসেছেন, সে কথা কবুল করেছেন এক নেতাই।
যা শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘শাসকের শাসানি থেকে এ বার কমিশনও রেহাই পেল না!’
কমিশনকে চাপে রাখা অবশ্য এ রাজ্যে নতুন ঘটনা নয়। হাতে গরম উদাহরণ সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। চাপের মুখে ২০১৫ সালে বিধাননগরে পুরভোট প্রক্রিয়ার মাঝেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। তার দু’বছর আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন আর এক রাজ্য নির্বাচনী কমিশনার মীরা পাণ্ডে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে হুমকি চিঠি পেয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
১২ ঘণ্টাতেই ডিগবাজি
নগ্ন করে নিগ্রহ চিত্র-সাংবাদিককে
কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে কমিশনের সঙ্গে প্রশাসন ও শাসক দলের সংঘাত নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না রাজ্যবাসী প্রায় কোনও আমলাই। সুশান্তবাবু যেমন এ দিন বলেন, ‘‘মাফ করবেন, আমাকে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না।’’ মীরা পাণ্ডে সারাদিন ফোন ধরেননি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠজন জানান, চার দিকে যা চলছে তাতে ম্যাডামকে আর বিব্রত করবেন না। তিনি এ সবে জড়াতে চান না। এমনকী বছর দশেক আগে কমিশনার থাকা আর এক আমলা অশোক গুপ্তও জানান, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যা চলছে, সে দিকে খেয়ালই রাখছেন না তিনি।
বর্তমান আমলাদের অবশ্য খেয়াল না রেখে উপায় নেই। কিন্তু সরাসরি কেউ কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। এক জনের কটাক্ষ, ‘‘জেলাশাসকের অফিসের সামনে ছুরি মারা শুরু হয়েছে। নবান্নের সামনে আসতে তা আর কতক্ষণ।’’
তবে বর্তমান কমিশনার যে ভাবে শাসক দলের চাপের মুখে নিজের জারি করা বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কয়েক জন প্রাক্তন আমলা। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায়ের মতে, রাজ্যের পরিস্থিতি যে অশান্ত, তা তো আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো পুরনো আমল নয়। সবই টিভিতে দেখিয়ে দেয়। অস্বীকার করার উপায় নেই।’’ আর এক প্রাক্তন মুখ্যসচিব অশোকমোহন চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘ দলগুলির সব সময় নিয়ম ভেঙে খেলার কী দরকার!’’
প্রবাসী প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন অবশ্য ঠোঁটকাটা। তিনি বলেন। ‘‘দিল্লিতে থাকি, তাই আমার ভয় কম। কমিশনারকে এখনই সরানো উচিত। আর মন্ত্রীরা কমিশনারের বাড়ি গিয়ে শাসিয়ে এসেছেন শুনে অবাক হচ্ছি না। এটাই এগিয়ে বাংলার নমুনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy