ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে শনিবার সব রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ।
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে শনিবার দিনভর আলোচনা করলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ। কিন্তু তার পরেও ভোটের দিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ধন্দ কাটেনি বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলি। আদালত কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে ‘অর্থপূর্ণ’ ও ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনার নিদান দিয়েছিল। কিন্তু এ দিন তৃণমূল বাদে বাকি সব দলই সেই আলোচনাকে মোটের উপর ‘অর্থহীন’ আখ্যা দিয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটের দিনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে সে ব্যাপারে কমিশনার স্পষ্ট করে কিছুই জানাতে পারেননি। তাদের অভিযোগ, শাসক দলের চাপের মুখে এমনিতেই বিপুল সংখ্যক আসনে হয় তারা প্রার্থী দিতে পারেনি, না হয় প্রার্থী তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ৩০ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে তৃণমূল। অথচ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে পুলিশ। বিরোধীদের বক্তব্য, মনোনয়ন পর্বেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে ভোটের দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সে দিন হিংসা মারাত্মক আকার নিতে পারে।
কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, সব রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলার পর সরকারের সঙ্গে ফের এক দফা কথা বলা হবে। আদালতের নির্দেশ মেনে সরকারকেও রাজনৈতিক দলগুলির উদ্বেগের কথা জানানো হবে। তার পরেই নিরাপত্তার খুটিনাটি ঠিক হবে। কমিশনের ওই মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আগামী ৪ মে হাইকোর্টে কমিশন নিরাপত্তার বিষয়টি জানাবে। সরকারও তাদের প্রস্তুতির কথা আদালতে জানাবে। এর পর আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মেনেই ভোটের বুথভিত্তিক নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা হবে।’’
বিরোধী নেতারাও এখন আদালতের দিকেই তাকিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়ে এ দিন কমিশনই তাঁদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে। নিজেরা কোনও পরিকল্পনার কথাই জানাতে পারেনি।
কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক ‘নিষ্ফল’ বলে দাবি করে বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাইকোর্ট অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে বলেছিল। কিন্তু বৈঠকে কিছু হল না। নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনের কোনও পরিকল্পনা নেই। বৈঠক শুধুমাত্র লোক দেখানো।’’ বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করানোর দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি আখরুজ্জামান এবং ঋজু ঘোষালের বক্তব্য, ‘‘কমিশনারের প্রতি আমাদের কোনও আস্থা নেই। আধা সামরিক বাহিনী ছাড়া ভোট করা সম্ভব নয়। কমিশনার বলেছেন, আমাদের কথা রাজ্যকে জানাবেন।’’ সিপিএমের প্রতিনিধি রবীন দেবের বক্তব্য, ‘‘আমরা বলেছি তিন দফায় রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট করানো হোক।’’ পিডিএসের প্রতিনিধি সমীর পূততুণ্ডের বক্তব্য, ‘‘আমরা বলেছি সিভিক ভলান্টিয়ারদের যেন ভোটে না ব্যবহার করা হয়।’’
কমিশনে যাওয়া তৃণমূলের দুই প্রতিনিধি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সী অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোটের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের সুনির্দিষ্ট করে কিছুই জানানো হয়নি। ফলে তারাও রাজনৈতিক দলগুলিকে কিছু জানাতে পারেনি। তবে এটাও ঠিক যে, এখন আলোচনা হচ্ছে প্রায় ৫৮ হাজার বুথে ভোট করানো নিয়ে। কিন্তু শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় পার হওয়ার পরে যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রায় ৩০ শতাংশ আসনে বিরোধী প্রার্থী নেই। সেগুলিতে ভোট করানোর দরকার হবে না। ফলে বুথের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে।
নবান্নের একটি সূত্রও বলছে, বাস্তবে কত বুথে ভোট করাতে হবে, সেই হিসেব যখন পাওয়া যাবে, তখন দেখা যাবে রাজ্যের হাতে থাকা বাহিনী যথেষ্ট। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনার সময় স্বাভাবিক ভাবেই কে কথা বলতে পারছে না কমিশন। ফলে বিব্রত হচ্ছে।
আগামী শুক্রবার নিরাপত্তা নিয়ে হাইকোর্টে রিপোর্ট দেওয়ার কথা কমিশনের। তবে সে দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সোমবারই আদালতে যাবে বিজেপি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে একাধিক দফায় ভোট চাইবে তারা। সে দিনই কংগ্রেস-সিপিএমের মামলা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠার কথা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ওরা আদালত নিয়েই পড়ে থাক। আমরা ভোট করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy