আবার স্বমহিমায় দিদির প্রিয়পাত্র কেষ্ট। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কবিতা লেখায় কবি শঙ্খ ঘোষকেও পড়তে হল কেষ্ট তথা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের তীব্র কটাক্ষের মুখে।
অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে বেরলে দেখবেন রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ‘উন্নয়ন’ আদতে যে কী, তা বুঝতে কিন্তু অসুবিধা হয়নি কারওরই। বীরভূমের ৪২টা জেলা পরিষদের মধ্যে ৪১টাতেই প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বিরোধীরা। অভিযোগ, বাকি যে এক জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের নামে বীরভূম জুড়ে হিংসা, হানাহানি, রক্তপাতের ঘটনায় বীতশ্রদ্ধ শঙ্খ ঘোষ ‘মুক্ত গণতন্ত্র’ নামের কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন:
যথার্থ এই বীরভূমি-/ উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে এসে/ পেয়েছি শেষ তীরভূমি।/ দেখ্ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে/ দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।
এর পাল্টা গিতে গিয়ে যেন শালীনতার গণ্ডি টপকে গিয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বড় বড় কথা বলছেন কবি? এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে জানতাম রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছেন, যে আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন।’’ কিন্তু শঙ্খ ঘোষ যে মাপের কবি, তাঁকে নিয়ে শুধু তো রাজ্য নয়, গর্ব করে গোটা দেশ। সেই মানুষটাকেই ‘এ কোন নতুন কবি’ বলায় অনুব্রত মন্ডলের প্রজ্ঞা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তৃণমূল পন্থী সুশীল সমাজের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। না পারছেন তাঁরা ব্যাপারটাকে গিলতে, না পারছেন উগরোতে। যদিও এ সবে আমল গিতে রাজি নন অনুব্রত । শঙ্খ ঘোষের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে তিনি বলেছেন,‘‘কবির নাম শঙ্খ রাখা ঠিক হয়নি, শঙ্খ নামের অপমান করেছেন উনি। এখনও বলছি, রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে।’’
বরাবরই শঙ্খ ঘোয প্রতিবাদী। একটা সময় তিনি ছিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি হেঁটেছেন কলকাতার রাস্তায় । শঙ্খ ঘোষের বিরুদ্ধে বিরূদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করায় ঝড় উঠেছে রাজনীতির ময়দানেও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এর আগেও অমর্ত্য সেন ও অশোক মিত্র সম্পর্কে কুরুচিকর ভাষায় কথা বলেছেন। সেই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের চেলা এই অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর কাছ থেকে এই রকমের কুরুচিকর ভাষাই কাম্য। সেই কারণেই তিনি তৃণমূলের সম্পদ।
আরও পড়ুন: জিতেও বোর্ড গড়া যাবে কি? বিনাযুদ্ধের ৩৪% ঘিরে সংশয়
আরও পড়ুন: ১৪-তেই হতে পারে পঞ্চায়েত ভোট, বাধা কাটল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে
যদিও অনুব্রতর যুক্তি, তিনি তো শঙ্খ ঘোষকে অপমান করেননি, কোনও অসম্মানজনক কথা তো বলেননি।তিনি বলেছেন, ‘‘যখন অনুব্রত মণ্ডল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, তখন শঙ্খ ঘোষ কবিতা লেখেন। কিন্তু, দিলীপ ঘোষ যখন বলেন ছাল চামড়া ছাড়িয়ে নেব, নুন-লঙ্কা মাখিয়ে দেব, একশো জনকে শ্মশানে পাঠিয়ে দেব, তখন তো শঙ্খ ঘোষ কিছু লেখেন না। শঙ্খ একটা পবিত্র জিনিস, সব পবিত্র কাজে শঙ্খ লাগে। তাই শঙ্খ ভুল করলে দেবতাদের অসম্মান হয়। সেই কারণেই বলেছি ওঁর নাম শঙ্খ রাখা উচিত হয়নি।’’
তবে কি শঙ্খবাবু যতটা তৃণমূল নিয়ে সরব, ততটা নন বিজেপিকে নিয়ে? অনুব্রতর কথায় এমন ইঙ্গিত থাকলেও এ নিয়ে কিন্তু কোনও মন্তব্য করেননি বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোয। তিনি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ আগে থেকে কোনও কথা বলে না। দিলীপ ঘোষ তখনই বলে যখন বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ হয়। ভবিষ্যতে যদি বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ হয়, তবে দিলীপ ঘোয আবার বলবে। দিলীপ ঘোষের নামে কে কী বলল, তাতে যায় আসে না। সে কেষ্ট বিষ্টু যে-ই হোক।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy