সোমবারই মনোনয়ন জমা দেওয়ার অতিরিক্ত দিন। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এই নয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। ২৫ এপ্রিল মনোনয়নপত্র পরীক্ষা (স্ক্রুটিনি) করার দিন স্থির করা হয়েছে। ২৬ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন নির্বাচনের দিন স্থির করবে।
আদালতের নির্দেশ মেনে রাজনৈতিক দলগুলিকে এ দিন বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শনিবার দুপুরে কমিশনের অফিসে এসেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু, শুরুতেই বিভ্রাট। কমিশনে গিয়েও বৈঠক না করেই ফিরে এল বিজেপি। কমিশনার তাদের কথা শুনতে চাইছেন না, এই অভিযোগ তুলে ফের তারা আদালতেই যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিল।
এ দিন দুপুর একটা নাগাদ কমিশনের অফিসে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে পৌঁছয় বিজেপি-র পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু, কমিশনারের সঙ্গে মাত্র দু’জন দেখা করতে পারবেন বলে অফিসে ঢোকার মুখেই মুকুলদের আটকে দেয় পুলিশ। শুরু হয় বচসা। মুকুল ওই পুলিশ কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর সঙ্গে কমিশনারের কথা হয়েছে। পাঁচ জনকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করার কথা কমিশনার জানেন। কিন্তু, ওই পুলিশ কর্মীরা কোনও ভাবেই দু’জনের বেশি লোককে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। এর পরেই বিতর্ক শুরু হয়। ক্ষুব্ধ মুকুল প্রতিনিধিদল নিয়ে কমিশন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
দেখুন ভিডিও
সরোজিনী নাইডু সরণির রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মুকুল বলেন, ‘‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে পাঁচ জনের কথা বলতে আসার কথা ছিল। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনের কোনও লোক নেই। পুলিশকে দিয়ে আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হল, গণতন্ত্রের পক্ষে তা কলঙ্কজনক। আমরা ফিরে গেলাম। ফের আদালতের দ্বারস্থ হব। জানাব, এই কমিশনার আমাদের কোনও বক্তব্য শুনছেন না। মামলাকারীদের সঙ্গে কথা না বলে উনি (কমিশনার) ভোটের নির্ঘণ্ট ঠিক করতে পারবেন না।’’
পরে এ দিন সন্ধ্যায় ফের বিজেপিকে ডেকে পাঠানো হয়। মুকুল রায়ের নেতৃত্বে কমিশনে যায় বিজেপি-র প্রতিনিধিদল। কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের আগেই কী ভাবে পঞ্চায়েত দফতরের সচিব সৌরভ কুমার দাস মনোনয়ন জমা দেবার দিন সোমবার ঘোষণা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “সৌরভ দাসের ভূমিকায় স্পষ্ট হয়ে গেল, কমিশন যা করছে সবটাই লোকদেখানো। রাজ্য সরকারের নির্দেশেই চলছে কমিশন।” সকালে নির্বাচন কমিশনের দফতরে একদফা যায় বিজেপি নেতৃত্ব। সেই সময় কমিশনের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে যান তাঁরা। আদালতে অভিযোগও জানানো হয় বিজেপি-র তরফে। দুপুরে পঞ্চায়েত দফতরের সচিব সৌরভ দাস কমিশনের অফিস থেকে বেরোনর পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেবার দিন ঠিক করা হয়েছে। শনিবার বিকেলেই বিঞ্জপ্তি জারি করবে কমিশন। বিকেলে বিজেপি নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে ফের বৈঠকের জন্য ডেকে পাঠায় কমিশন। বৈঠকে অংশ নেন মুকুল রায় এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন দিলীপ ঘোষ ফের হুমকি দেন, “আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। আদালতে যাওয়ার রাস্তাও আমরা খোলা রাখছি।”
আরও পড়ুন- নতুন নির্ঘণ্টের নির্দেশ, হাইকোর্টের রায় ঐতিহাসিক, বলল বিরোধীরা
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এ দিন কমিশনের অফিসে এসেছিল শাসক দলের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে পার্থ বলেন, ‘‘কমিশনারকে বলেছি, আমরা গরমে ভোট হোক এটা চাই না। বর্ষায় ভোট হোক চাই না। রমজানের সময় ভোট হোক চাই না। আমরা চাই, রমজান শুরু হওয়ার আগেই ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। দল হিসাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পাশে থাকবে তৃণমূল। আদালতের নির্দেশে কমিশনকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। আশা করি এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সরকারের মুখ্য আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
সিপিএমের তরফে এ দিন বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন দলীয় নেতা রবীন দেব। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কমিশনারকে জানিয়েছি, যে কোনও দিন ভোট করুন। কিন্তু, যে সমস্ত আধিকারিকদের মদতে এর আগে মনোনয়নন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে রাজ্যে সন্ত্রাস চলেছে, তাদের কী শাস্তি হবে?’’ সিপিআই-এর তরফে জানানো হয়, আবার যদি আগের মতো সেই সব ঘটনা ঘটে, সন্ত্রাস বা হামলা হয়, তা হলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হবে। গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তা থাকার আবেদনও জানিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন- নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের
বিজেপির পাশাপাশি, কংগ্রেসও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, দলের পক্ষ থেকে তারা নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য কিছু প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন, যা কমিশন গ্রহণ করেনি। প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাদের মুখপাত্র আখতারূজ্জামান বলেন, “সর্বদলীয় সভার নামে প্রহসন করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।”
আদালতের নির্দেশের পর শুক্রবার রাতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূল-সহ মোট ১০টি রাজনৈতিক দলকে এ দিন দুপুরে বৈঠকে ডাকে। সকলকে একসঙ্গে নয়, বরং আলাদা আলাদা ভাবেই তাদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিলেন কমিশনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy