দরপত্র ডেকে উৎপাদক বাছাই শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঠিক ছিল, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বিশ টাকার পাউচ প্যাকে মহুয়ার গন্ধ মেশানো দিশি মদ বাজারে ছাড়া হবে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে মামলা এবং সমাজমাধ্যমে প্রবল নেতিবাচক প্রচারের জেরে পাউচ প্যাকে ‘বিশ টাকার বাংলা মাল’ সরবরাহের প্রকল্প থেকে আপাতত পিছিয়ে এল আবগারি দফতর।
‘‘চোলাইয়ের রমরমা ঠেকানো, করোনা-পরবর্তী পর্বে আবগারি রাজস্ব বাড়ানো এবং পানরসিকদের কাছে মদ সহজলভ্য করতেই বিশ টাকার পাউচ আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সব দিক ভেবে তাড়াহুড়ো না-করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার বিধানসভা নির্বাচনের পরেই নতুন দিশি মদ বাজারে আনবে,’’ বলেন আবগারি দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।
সরকারি সূত্রের খবর, চোলাইয়ের দামে যদি সরকারি মদ আনা যায়, তা হলেই চোলাই কারবারিদের রোখা যাবে বলে মনে করছিলেন আবগারি-কর্তাদের। কিন্তু ৬০ ডিগ্রির দিশি মদের বোতলের দাম এখন ১০০ টাকার বেশি। সমপরিমাণ চোলাই মদ মেলে তার অর্ধেক দামে। তাই আবগারি দফতর বাজারচলতি দিশি মদের চেয়ে সামান্য নিরেস ৭০ ডিগ্রির দিশি মদ বাজারে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন জঙ্গলমহলে চা-বাগানে এই মদ কিছু কিছু বিক্রি হয় বোতলে। দাম ৮০-৯০ টাকা। তাই মদ্যপায়ীদের কাছে সেটা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। সেই জন্য পাউচে ২০০ মিলিলিটার মদ ২০ টাকায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আবগারি দফতরের হিসেব, এখন রাজ্যে বছরে গড়ে ৪০ কোটি বোতল দিশি মদ বিক্রি হয়। দাম গড়ে ৮০ থেকে ১১৫ টাকা। অনেক আবগারি-কর্তার বক্তব্য, গত দু’তিন বছরে দিশি মদের দাম অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষের একটি বড় অংশ চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ, রোজ ১০০ টাকার দিশি মদের বোতল কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পর্বে কাজ হারানো মানুষের রোজগার কমলেও নেশার প্রবণতা তেমন কমেনি বলে আবগারি-কর্তাদের পর্যবেক্ষণ। তাই দিশি মদের ক্রেতারা চোলাইয়ের পথে হাঁটছেন।
কিন্তু পাউচ প্যাকে দিশি মদ বিক্রির খবরের সমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়। কোনও কোনও মহল অভিযোগ তোলে, সরকার মদ্যপানে উৎসাহ দিচ্ছে। দরপত্র চাওয়ার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যায় একটি বৃহৎ মদ উৎপাদক সংস্থা। তাদের পাউচ প্যাকের কারবারের বাইরে রাখতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আদালতে জানায় তারা। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়েই আবগারি দফতর বিশ টাকার পাউচ থেকে কিছুটা সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
এক আবগারি-কর্তার জানান, চোলাই বা বিষমদের বদলে সরকারি মদ্যপানে উৎসাহ দিতেই পাউচ আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু এই নিয়ে অহেতুক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। দক্ষিণের অনেক রাজ্যে এমন সরকারি পাউচ প্যাক রয়েছে। কিছু দিন পরে এই মদ বাজারে আনা হবে।