গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
টাকার অভাব যেন না হয়, হাসপাতালগুলোয় করোনা মোকাবিলার পরিকাঠামো গড়ার চেষ্টা যেন তহবিলের টানাটানিতে থমকে না থাকে। নিশ্চিত করতে এগিয়ে এলেন বাংলার সাংসদরা। লোকসভার ৪০ জন এবং রাজ্যসভার ১ জন সাংসদ নিজেদের ‘এলাকা উন্নয়ন তহবিল’ (এমপি ল্যাড) থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করলেন করোনা রোখার যুদ্ধে। টাকা বরাদ্দ করলেন বেশ কয়েক জন বিধায়কও। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা করা প্যাকেজ তো রয়েছে, বাংলার সাংসদ-বিধায়করা তার সঙ্গে যোগ করলেন ৩৬ কোটি টাকারও বেশি।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং দেশের শাসক দল বিজেপির তরফে তালিকা প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোন সাংসদ নিজেদের এমপি ল্যাড থেকে কত টাকা করে বরাদ্দ করেছেন। কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় বিরোধী পক্ষের প্রধান নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও বরাদ্দ করেছেন অর্থ। দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে টাকা বরাদ্দ করতে শুরু করেছেন বাম বিধায়করাও। তবে কংগ্রেস বা বামেদের তরফে কোনও তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ করেছেন তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে। তিনি দিয়েছেন ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা তথা উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন ১ কোটি, জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলও দিয়েছেন ১ কোটি। তৃণমূলের বাকি ১৯ জন লোকসভা সদস্য দিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা করে। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: জীবাণুনাশক স্প্রে করা হল এ ভাবে? ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো, বিতর্কে যোগী সরকার
এ রাজ্য থেকে লোকসভায় নির্বাচিত বিজেপির ১৮ সাংসদের মধ্যে ১৭ জনের এবং রাজ্যসভায় মনোনীত রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বরাদ্দ করা টাকার হিসেবও সামনে এসেছে। সবচেয়ে বেশি টাকা বরাদ্দ করেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি দিয়েছেন ৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। তিনি ৮০ লক্ষ টাকা তিনি দিয়েছেন বাঁকুড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। ১ কোটি টাকা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস এস অহলুওয়ালিয়া বরাদ্দ করেছেন ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, অর্জুন সিংহ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ সরকার ও শান্তনু ঠাকুর দিয়েছেন ১ কোটি টাকা করে। উত্তর মালদহের খগেন মুর্মু দিয়েছেন ৭০ লক্ষ, বালুরঘাটের সুকান্ত মজুমদার দিয়েছেন ৩০ লক্ষ। বাকি বিজেপি সাংসদরা দিয়েছেন ৫০ লক্ষ টাকা করে। এ ছাড়া দার্জিলিঙের বিজেপি বিধায়ক নীরজ তামাং জিম্বা দিয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা। এঁদের অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের নামে টাকা বরাদ্দ করেছেন। দিলীপ ঘোষ এবং বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য টাকা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নামে। ১৯ জন সাংসদ নিজেদের বেতন থেকেও ১ লক্ষ টাকা করে দিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে। সব মিলিয়ে ২২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।
বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভায় প্রধান বিরোধী পক্ষের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও নিজের এমপি ল্যাড থেকে ১ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছেন করোনা মোকাবিলায় খরচ করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তিনি দিয়েছেন নিজের বেতনের ২ লক্ষ টাকা। রাজ্য সরকারকে তিনি দিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা। ৩টি ভেন্টিলেটর কেনার অর্থও তিনি বরাদ্দ করবেন বলে মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন বলে তাঁর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: জানা যায়নি কী ভাবে সংক্রমণ, করোনায় মৃত কালিম্পঙের মহিলার সংস্পর্শে অনেকেই
রাজ্যে বামফ্রন্টের যে বিধায়করা রয়েছেন, তাঁরাও নিজেদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে করোনা মোকাবিলা তহবিলে অর্থ বরাদ্দ করছেন বলে জানা গিয়েছে। বাম দলগুলি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই বিধায়করা টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু কোন বিধায়ক কত টাকা দিলেন, তার সম্পূর্ণ তালিকা এখনও বামেদের তরফে প্রকাশ করা হয়নি। তাই টাকার সম্পূর্ণ অঙ্ক এখনও জানা যায়নি। তৃণমূল, বিজেপি এবং কংগ্রেসের সাংসদরা (একজন বিজেপি বিধায়কও) মিলে যে টাকা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করেছেন, তার মোট পরিমাণ ৩৬ কোটি ২২ লক্ষ টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy