রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য-সঙ্কটের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসতে থাকায় শাসকের সংসারে ভিন্ন সুর ক্রমশই চড়ছিল। সঙ্কটের ছায়া সরে যেতেই বেসুরো সুর ফের সুরেলা হতে শুরু করেছে।
তৃণমূলের সাংসদ, মন্ত্রী-মেয়রের মেয়ে, সাংসদ-পুত্রদের কারও কারও সুর বাজছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অনুকূলে। সোমবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনে ইতি টানেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার পরেই তাঁদের এবং মমতার প্রশংসা করেছেন তৃণমূল পরিবারের সেই সব সদস্যও।
জুনিয়র ডাক্তারদের সাত দিনের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি প্রসঙ্গে কারও কারও মতে, এটাই ‘মমতা ম্যাজিক’। আবার কেউ কেউ বলছেন, স্বাধীন ভারতে এই প্রথম চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী, যা একটা নিদর্শন। অন্য এক জনের অভিযোগ, তৃণমূল এবং মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলতেই বিজেপি ডাক্তারদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল।
‘এসমা’ নয়, কথা বলেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব) লিখেছেন, ‘এটাই মমতা ম্যাজিক। কাছে বসলেন, কথা শুনলেন, সমস্যার সমাধান হল। এসমা জারি হয়নি। পুলিশ পাঠাতে হয়নি। কথা বলে সমস্যার সমাধান। থ্যাঙ্ক ইউ দিদি।’
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে এক রোগীর মৃত্যুর পরে হামলায় দুই জুনিয়র ডাক্তার গুরুতর আহত হন। সেই ঘটনায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে তিনি ‘লজ্জিত’ বলে জানিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিম। আন্দোলন সাঙ্গ হতেই বিজেপিকে বিঁধেছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘চিকিৎসক পেটানো অনন্তকুমার হেগড়েকে মন্ত্রী করেছে বিজেপি। তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলতেই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। আমি চিকিৎসক হিসেবে গর্বিত যে, তাদের (বিজেপি) হিপোক্র্যাসিতে কেউ পা দেয়নি।’ একই সঙ্গে ববি-কন্যার দাবি, ওই আন্দোলন ছিল ‘অরাজনৈতিক’।
‘রাজনীতি গোল্লায় যাক’ এবং ‘আমি লজ্জিত’— জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের সহ-দলনেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদারের ছেলে বৈদ্যনাথ। যদিও পরে ফেসবুক থেকে সেই শব্দ পরিমার্জন করেন তিনি। আন্দোলনের ইতিতে খুশি প্রকাশ করে মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কাকলি-পুত্র। মমতার ‘স্টেটসম্যানশিপ’-কে কুর্নিশ এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘সংগ্রামী অভিনন্দন’ জানিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে যে তামিলনাড়ু বা গুজরাতের মতো এসমা জারি করতে হয়নি, সেই প্রসঙ্গও টেনেছেন বৈদ্যনাথ। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে চিকিৎসকের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি লোগো ব্যবহার করেছিলেন কাকলির অন্য চিকিৎসক-ছেলে বিশ্বনাথ। জুনিয়র ডাক্তার এবং মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আজ (সোমবার) ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি ল্যান্ডমার্ক ডে।’
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কেপিসি হাসপাতালের ছাত্রনেতা হিসেবে নীলরতন সরকার হাসপাতালের আন্দোলনকারীদের মিছিলে হেঁটেছিলেন। আন্দোলন পর্বের মাঝামাঝি তৃণমূল পরিবারের সদস্যদের কণ্ঠে ‘সমালোচনা’র সুর ধরা পড়েছিল। আন্দোলনে ইতি পড়তে সেই সুরই অভিনন্দনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ঘরের অন্দর থেকে ভিন্ন সুর ওঠায় তৃণমূলের ‘অস্বস্তি’ বেড়েছিল। আন্দোলন শেষ হওয়ায় রাজ্যবাসী ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন, তেমনই সুরসঙ্গতি ফিরেছে তৃণমূলের সংসারেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy