স্বস্তি: ওয়ার্ডে আরামবাগের বাসিন্দা রণজিৎ ধাড়া। শুক্রবার, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: জয়তী রাহা
তিন দিনের এক শিশুর মৃত্যুতেই কিছুটা বদলাল ছবিটা। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজে ফিরল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শিশুটির মৃত্যুর পরে বৃহস্পতিবার বিকেলেই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কোনও রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ফেরানো হবে না। কর্মবিরতি শুরুর তিন দিনের মাথায় ওই দিনই হাসপাতালের ১৮ জন চিকিৎসকের পদত্যাগ করার কথা প্রথম সামনে এসেছিল। শুক্রবার অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলি গণ-পদত্যাগের পথে হাঁটলেও আপাতত সে পথে এগোয়নি সাগর দত্ত হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা কাজ করতে সম্মত হওয়ায় রোগী ভর্তিও চলেছে সেখানে। কর্তৃপক্ষ জানান, বৃহস্পতিবার ১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেল তিনটে পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২২।
সাগর দত্তে সপ্তাহের কাজের দিনে রোগী ও পরিজনেদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। শুক্রবার সকালে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় সুনসান চত্বরে রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন রোগী। চার মাসের মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলেন দম্পতি। ওই হাসপাতালেই জন্ম শিশুটির। এ দিন বহির্বিভাগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ ছিল। বহির্বিভাগ বন্ধ শুনে জরুরি বিভাগে মেয়েকে দেখাতে নিয়ে যান সাবা খাতুন নামে কামারহাটির বাসিন্দা ওই মহিলা। চিকিৎসক শিশুটিকে দেখেও দেন।
শুধু সাবা নন, আরামবাগ থেকে আসা রণজিৎ ধাড়া, আগরপাড়া থেকে আসা বিলকিস, রথতলার গৃহবধূ মৌসুমী হাজরা, বরাহনগরের বাসিন্দা এক স্কুলছাত্রী বা অটো দুর্ঘটনায় আহত চালকের মতো অনেক রোগীই এ দিন ভিড় করেছিলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। জনা কয়েক উর্দিধারী রক্ষী আর দুই পুলিশকর্মীর তত্ত্বাবধানে চার জন চিকিৎসক মিলে সামলাচ্ছিলেন জরুরি বিভাগ। সেখান থেকে রোগীরা যাতে ফিরে না যান, সে বিষয়ে তৎপর ছিলেন স্থানীয় পুর নেতৃত্বও। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহার দাবি, তিনি গত দু’দিন ধরে হাসপাতালে থেকে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের চিকিৎসার তদারকি করছেন।
বহির্বিভাগ যে বন্ধ, তা না জেনেই পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা রণজিৎ ধাড়াকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তাঁর পরিবার। ফাঁকা হাসপাতালে ঢুকে রোগীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে খানিক ক্ষণ এ দিক-ও দিক ছোটাছুটি করলেন রণজিতের স্ত্রী ও ভায়রা ভাই। অবশেষে জরুরি বিভাগের ডাক্তার রণজিৎকে পরীক্ষা করে ছ’তলায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে সার্জারি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, ‘অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস’-এ আক্রান্ত রণজিতের চিকিৎসা এখানে সম্ভব না হলেও আপাতত তাঁকে ভর্তি করা হচ্ছে। রণজিৎকে পরীক্ষার ফাঁকেই একদল সিনিয়র ডাক্তার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের হাতে কালো ফিতে বেঁধে দিয়ে যান। জরুরি বিভাগে ভিড়ের মধ্যেই ঢুকে পড়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। এত জোরে তার শ্বাস ওঠানামা করছিল যে, শুইয়ে রাখাই কঠিন। তাকে দেখেই অন্য রোগীদের ফেলে ছুটে যান চিকিৎসক। পরীক্ষা করার পরে নেবুলাইজার এবং ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ধাতস্থ করা হয়।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক দিকে যখন এই অবস্থা, তখন অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে অধ্যক্ষের ঘরে চলছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে সুপার ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানেরা চার ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সুপার পলাশ দাস বলেন, “হাসপাতালের ১৫৫ জন জুনিয়র চিকিৎসক কর্মবিরতিতে আছেন। এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা চালানো কষ্টসাধ্য। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, রোগী ভর্তি ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে এবং জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। জরুরি অস্ত্রোপচারও হচ্ছে। স্ত্রীরোগ বিভাগ পুরোদমে কাজ করছে। কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকেদের পক্ষে সব কাজ সামলানো কত দিন সম্ভব, জানি না। প্রতিদিন এ সব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে।” ১৮ জন চিকিৎসকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কয়েক জন চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট বিভাগে ইস্তফা জমা দিয়ে থাকতে পারেন। আমার কাছে এসে তা এখনও পৌঁছয়নি।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নিয়ম মানলে এই মুহূর্তে হাসপাতালে আরও ৪৬ জন চিকিৎসককে দরকার। রোগী-কল্যাণ সমিতির বৈঠকে নিয়মিত হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা এবং চিকিৎসকের অভাবের বিষয়টি জানানো হয়। কাজ কিছুই হয় না। উপরন্তু এখান থেকে চিকিৎসক তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও রোগীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষ আমাদের ভুল বুঝছেন। কিন্তু আমরা নিরুপায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy