Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’

যদি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তা হলে শনিবার তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়া হল না কেন? কেন আরও ৪৮ ঘণ্টা অগণিত অসুস্থ মানুষকে এ ভাবে যন্ত্রণার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হল?

বৈঠক থেকে ফিরে। সোমবার এনআরএসে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বৈঠক থেকে ফিরে। সোমবার এনআরএসে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

গোঁ ধরে বসে না থেকে আলোচনার পথে গেলে যে সমাধানের রাস্তাটাই প্রশস্ত হয়, সোমবার অবশেষে তা বুঝলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ফলও পেলেন। এর পরে হয়তো বিষয়টি তাঁদের হাতের বাইরে চলে যেত।

টানা ছ’দিন সরকারি পরিষেবা বন্ধ থাকলে গরিব, অসহায় রোগীরা ঠিক কতটা আতান্তরে পড়েন, কত শত অস্ত্রোপচার বাতিল হয়, কত ক্যানসার রোগীর কেমোথেরাপি-রেডিওথেরাপি অনির্দিষ্ট কাল পিছিয়ে যায়, কত শিশু চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়, কত অন্তঃসত্ত্বা মহিলা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে অমানুষিক পরিস্থিতির শিকার হন, সেই তথ্য বার বার সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার ফলে তাঁদের উপরে যে চাপ তৈরি হয়েছিল, এর পর কি সেটা তাঁরা ধরে রাখতে পারতেন? নবান্নের বৈঠকে স্বাস্থ্য-বিপ্লবীদের আজকের যে চেহারাটা দেখা গেল, উত্তরটা সেখানেই পরিষ্কার।

বাস্তবটি বুঝিয়ে দেওয়ার অপরাধে তাঁরা যতই বাছাই করা শব্দে গালমন্দ করুন না কেন, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এ দিন প্রশ্ন উঠেছে, টানা ছ’দিন আন্দোলন চলার সময়ে বার বার প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে ধরনের শব্দ ব্যবহার হল, এনআরএস চত্বরে এত দিন একাধিক বার যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে শুধু ‘মাননীয়া’ বলে সম্বোধন করা হল, তার পরে এ দিন জুনিয়র ডাক্তারদের এমন ‘সমর্পিত’ চেহারার কারণ কী? ‘শেম-শেম’ ধ্বনি এ দিন কী ভাবে বদলে গেল ‘মাননীয় সুধীবৃন্দ’-এ? যে ভাবে এ দিন জুনিয়র ডাক্তারেরা ‘ম্যাম, আমরা শুধু আপনাকেই চেয়েছি’ বলেছেন, তাতে রোগীদের একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, যদি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলাটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তা হলে শনিবার তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়া হল না কেন? কেন আরও ৪৮ ঘণ্টা অগণিত অসুস্থ মানুষকে এ ভাবে যন্ত্রণার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হল?

আরও পড়ুন: ফের কাজে ডাক্তারেরা, সঙ্কট কাটিয়ে সকাল থেকেই আউটডোর হবে স্বাভাবিক

জুনিয়র ডাক্তাররা এর কোনও উত্তর দেননি। ‘এ সব কথা বলার উপযুক্ত সময় এখন নয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে তাঁদের সংগঠন সূত্রে খবর, ‘সমর্পিত’ মনোভাব না দেখিয়ে উপায় ছিল না। জনসমর্থন ক্রমশ বিরুদ্ধে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য শুরু হয়েছিল। প্রতিনিধি দলে থাকা এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘আজ সবটা মিটে না গেলে দলের ভাঙনটা বেআব্রু হয়ে পড়ত। রওনা হওয়ার আগে অনেক সতীর্থই বলেছিলেন, কোনও প্ররোচনাতেই যেন বৈঠক ভেস্তে না যায়। ভেস্তে গেলে তার দায় আমাদের ৩১ জনের উপরেই এসে পড়ত।’’

এনআরএসে বসে টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট দেখা আর এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে যাঁরা এ বারেও জেদ ধরে বসেছিলেন যে নবান্নে যাবেন না, আমরা তাঁদের স্পষ্ট বলেছিলাম, কাল সকাল থেকে আমরা আর আন্দোলনে নেই। আমরা কাজ করব। এতে কেউ কেউ বলেছিলেন, আমরা নাকি বিক্রি হয়ে গেছি। আমরা বলেছিলাম, বেচা-কেনা জানি না। মানুষ পাশ থেকে সরে গেলে আমাদের আর দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না।’’

অতঃপর গর্জন যা-ই থাক, বর্ষণ হল ছিটেফোঁটা। নবান্নে মধুরেণ সমাপয়েৎ হল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় হাততালি পড়ল। খাওয়াদাওয়া যাতে টিভিতে না দেখানো হয়, সেই সতর্ক বার্তাও শোনা গেল!

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের এটা জয় তো বটেই। এই আন্দোলন জরুরিও ছিল। কিন্তু আন্দোলনের ইতিহাস বলছে, বরাবর আন্দোলনের সময়ে যে সাধারণ মানুষ পাশে থেকে সমর্থন জুগিয়েছেন, আন্দোলনে জয়ের পরে তাঁদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়েছে। এ বারও আন্দোলনকারীরা অতীতের পথেই হাঁটবেন, নাকি তৈরি হবে নতুন ইতিহাস, সেটা সময়ই বলবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy