বেলপাহাড়ির ঢাঙ্গিকুসুম ঘুরে দেখলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র-সহ শীর্ষকর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গলমহলে বেড়াতে গিয়ে ৪ যুবক সশস্ত্র মাওবাদী স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগের পরের দিনই শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলেন রাজ্য পুলিশের অধিকর্তা বীরেন্দ্র। তার আগে তিনি শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের নিয়ে ঝাড়গ্রামে দীর্ঘ ক্ষণ ওই এলাকায় মাওবাদী তৎপরতা নিয়েও বৈঠক করেন। তবে খড়্গপুরের চার যুবকের মাওবাদী স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা নিয়ে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা এ দিনও পরিষ্কার হয়নি।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে পৌঁছন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, এডিজি পশ্চিমাঞ্চল সঞ্জয় সিংহ, আইজি বাঁকুড়া আর রাজাশেখরন, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার কোটেশ্বরা রাও নালাভাত এবং অমিত কুমার সিংহ রাঠৌর। প্রায় তিন ঘণ্টা তাঁরা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ওই শীর্ষ পুলিশ কর্তারা ছাড়াও যোগ দেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা, রাজ্য এসটিএফের আধিকারিকরা এবং বেলপাহাড়ির ডেপুটি পুলিশ সুপার। সূত্রের খবর, তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় মাওবাদীদের গতিবিধি এবং কার্যকলাপ নিয়ে বৈঠক হয়। কারণ গত দু’মাসে অন্তত চারটি ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে মাওবাদীদের নাম যুক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে কালো পতাকা তোলার ফতোয়া থেকে শুরু করে মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোর নাম করে লেভি আদায়ের চিঠি দেওয়া— সব ক’টি ঘটনার সঙ্গেই নিষিদ্ধ ঘোষিত এই গেরিলা সংগঠনের নাম যুক্ত হয়েছে।
সেই ঘটনার তালিকায় সাম্প্রতিকতম শুক্রবার প্রকাশ্যে আসা একটি অভিযোগ। খড়্গপুরের ইন্দা এবং শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকার ৪ যুবক সম্রাট মাইতি, বিশ্বরূপ ঘোষ, সুরজিৎ রায় এবং অর্কদীপ পাল বৃহস্পতিবার বেড়াতে গিয়েছিলেন বেলপাহাড়ি থানা এলাকার শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রাম ঢাঙ্গিকুসুমে। পাহাড়ে জঙ্গলে ঘেরা ওই গ্রামে একটি ঝর্নায় তাঁরা স্নানও করেন। তাঁদের এক জন সম্রাট মাইতি অভিযোগ করেন যে, তাঁরা একটি সাত জনের সশস্ত্র মাওবাদী দলের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন ওই জঙ্গলে। তাঁরা তাঁর মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেন। ঘটনাটি কানে যায় পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের।
আরও পড়ুন: চিনের আগ্রাসী আচরণের প্রতিবাদ করেও আলোচনাতেই সায় রাজনাথের
শুক্রবার সন্ধ্যাতেই ওই যুবকদের জেরা করা হয় খড়্গপুর টাউন থানায়। গভীর রাত পর্যন্ত জেরা চলে ওই যুবকদের। রাতে থানা থেকে বেরিয়ে প্রথমে কোনও কথা বলতে চাননি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সম্রাট। তার পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানাতে এসেছিলাম।
খড়্গপুরের এই চার যুবকই গিয়েছিলেন ঢাঙ্গিকুসুম। ছবি— সংগৃহীত।
মাওবাদীদের বিষয়ে কিছু জানি না।” শনিবার ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অমিত কুমার সিংহ রাঠৌর দাবি করেন, ‘‘সম্রাট বেড়াতে গিয়ে কোনও ভাবে মোবাইল হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের চাপে বা ভয়ে তিনি মাওবাদীদের মিথ্যা গল্প বলেন। পরে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তিনি নিজেই মোবাইল হারিয়ে ফেলেছিলেন।”
পুলিশ সুপার এই কথা বলার পরেই ঝাড়গ্রামে বৈঠক সেরে ডিজি-সহ রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা রওনা দেন সেই ঢাঙ্গিকুসুম গ্রামে। ডিজি-সহ পুলিশ কর্তারা পৌঁছে যান সেই ঝর্না এবং ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জঙ্গলে। ওই জঙ্গলেই মাওবাদী স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়ার ‘গল্প’ বলেছিলেন খড়্গপুরের চার যুবক। সেখান থেকে ফেরার পথে ডিজি বীরেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা এই এলাকায় মাওবাদী কার্যকলাপ সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখলাম। এটা একটা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক।” ঢাঙ্গিকুসুম পরিদর্শন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের আধিকারিকরা এ দিন পর্যটক যুবকদের মাওবাদী স্কোয়াডের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের একাংশ এ দিন জানান, এলাকা পরিদর্শন করে ডিজি ওই সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প করা যায় কি না বা কী ভাবে ওই এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, গোটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা। তা না হলে ডিজি নিজে ঢাঙ্গিকুসুম যেতেন না। তাঁদেরই এক জন মন্তব্য করেন, ‘‘চাকরিজীবী বছর ৩০-এর যুবক। মোবাইল হারিয়ে বাড়ির চাপে মাওবাদীরা কেড়ে নিয়েছে বলে গল্প তৈরি করলেন! এটা বিস্ময়কর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy