Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM RSS

বাড়ছে আরএসএস, তাই কৈশোরকে ছুঁতে চায় বঙ্গ সিপিএম, নয়া রূপরেখার পরিকল্পনায় আলিমুদ্দিন

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, আরএসএস-ই বিজেপিকে চালায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে সঙ্ঘের যে সংগঠনের যে নকশা রয়েছে, তা-ও এই মুহূর্তে দেশে আর কারও নেই।

Bengal CPM is planning to touch the teen age like RSS

অধরা বয়সের মধ্যে পৌঁছতে চায় সিপিএম। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
Share: Save:

শুধু ছাত্র-যুব সংগঠন দিয়ে হচ্ছে না। ‘কিশোর’ বয়সকে ছুঁতে পৃথক সাংগঠনিক রূপরেখার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সিপিএম। দলের প্রথম সারির নেতারা একান্ত আলোচনায় স্পষ্টই জানাচ্ছেন, আরএসএস যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে কৈশোরকে ছুঁতে না পারলে সিপিএমকে আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবং তাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ফলে আরএসএস যে বয়সকে ‘টার্গেট’ করে শাখা গঠন শুরু করে, সেই বয়সকেই ধরতে চাইছে সিপিএম। কিন্তু তা কতটা বাস্তবায়িত করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ও গোপন করছেন না দলের প্রথম সারির নেতৃত্ব। কারণ, সারা বিশ্বে যখন মতাদর্শগত ভাবে কমিউনিজ়ম চ্যালেঞ্জের মুখে (প্রায় সর্বত্রই তা উঠেও গিয়েছে), তখন ভারতে তারা ‘বৈপ্লবিক’ কিছু করে ফেলবে, সেটা সম্ভব নয়।

কেরলে ‘বালাসঙ্গম’ নামে সংগঠন রয়েছে সিপিএমের। সেখানে শিশু-কিশোরেরা ঐক্যবদ্ধ হয়। সেই বাহিনী কার্যত ‘সেনাবাহিনীর মতো’ শৃঙ্খলাপরায়ণ। বাংলায় ‘কিশোরবাহিনী’ থাকলেও সেই সংগঠন তেমন শক্তিশালী নয়। উল্লেখ্য, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য চরিত্র গঠনের যে দর্শন নিয়ে কিশোরবাহিনী তৈরি করেছিলেন, সেই দর্শনেই চলে। তবে সরাসরি তাতে সিপিএম ‘হস্তক্ষেপ’ করে না। মূলত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কিশোরবাহিনীর কাজকর্ম। ক্ষমতায় থাকার সময়েও এ রাজ্যে কিশোর বয়সকে রাজনৈতিক ভাবে ধরার জন্য সিপিএমকে বিশেষ কিছু করতে দেখা যায়নি। তবে একদা স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এসএফআইয়ের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু একটা সময়ের পরে সেই উদ্যোগও ‘ঔপচারিক’ হয়ে যায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ই হয়ে ওঠে ছাত্র সংগঠনের অগ্রাধিকার। কেরল ছাড়া তেলঙ্গনা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশেও সিপিএমের এই কিশোর সংগঠন রয়েছে। দলের যে কোনও বড় কর্মসূচিতে এই বাহিনীই থাকে সামনের সারিতে।

যদিও আলিমুদ্দিন ‘বালাসঙ্গম’কে হুবহু নকল করতে চায় না। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘বালাসঙ্গমের একটা ইতিহাস রয়েছে। আমরা ওই রকম করতে চাই না।’’ বিকল্প পথ কী, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি সেলিম। তবে দলীয় সূত্রের খবর, বাংলার বাস্তবতা অনুযায়ী সিপিএম চাইছে কিশোর মনকে ছোঁয়ার রূপরেখা তৈরি করতে। যার মূল বিষয় হবে শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিক চর্চা। সেখানে রাজনীতির ছোঁয়া থাকবে না। কিন্তু নির্দিষ্ট ‘দর্শন’ থাকবে। যেমনটা থাকে আরএসএসের ক্ষেত্রে। সঙ্ঘের যাঁরা নেতৃত্ব দেন, বহুলাংশেই তাঁরা থাকেন ‘অদৃশ্য’। তবে কিশোর বয়সকে ছোঁয়ার জন্য সিপিএম তেমন ‘অদৃশ্য’ নেতৃত্বকে ময়দানে নামাতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে। এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীদের বড় অংশের এখন খাজনার থেকে বাজনা বেশি। তাঁরা মিছিলে চারটে লোক জুটিয়ে আনতে পারেন না। কিন্তু ফেসবুকে ছবি ছড়াতে কম যান না। এই ভেসে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াদের নিয়ে আরএসএস ধাঁচের সংগঠন তৈরি করা মুশকিল।’’ সিপিএমের একটি সংগঠন রয়েছে ‘বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি’। গুরুত্বের অভাবে তাতেও জং ধরেছে। সেই সংগঠনকে কী ভাবে নতুন ভূমিকায় নামানো যায়, সেই আলোচনাও শুরু হয়েছে দলের মধ্যে।

২০১১ সালে বামেরা বাংলার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে রাজ্যে সঙ্ঘের শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় এই পরিসংখ্যানকে বাম নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঙ্ঘের ‘বোঝাপড়া’ বলে দাবি করেন। তৃণমূল তৈরির অব্যবহিত পরে তৎকালীন সঙ্ঘ নেতৃত্ব মমতার যে ভাবে প্রশংসা করেছিলেন, সে কথা তুলে ধরেন সিপিএমের প্রায় সব নেতা। যদিও অতীতে সঙ্ঘ সম্পর্কে মমতার যে অবস্থানই থেকে থাকুক, ইদানীং তাতে বদল এসেছে বলেই অভিমত অনেকের। গত লোকসভা ভোটের আগে দাঁতনের সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আগে ভাবতাম আরএসএস মানে ত্যাগী। ওদের মধ্যে কিছু ভাল লোক ছিল। কিন্তু আজকে ভোগ করতে করতে ভোগী হয়ে গিয়েছে!’’

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, নেপথ্য আরএসএস-ই বিজেপিকে চালায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে সঙ্ঘের যে সংগঠনের যে নকশা রয়েছে, তা-ও এই মুহূর্তে দেশে কারও নেই। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে সঙ্ঘের ১০০ বছর। শতবর্ষে পা রাখতে চলা সঙ্ঘ তাদের অনেকগুলি ঈপ্সিত চাহিদাই মিটিয়ে ফেলতে পেরেছে। তার মধ্যে অন্যতম জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার, তিন তালাক প্রথার বিলোপ। ‘এক দেশ, এক ভোট’-এর প্রস্তাবও বৃহস্পতিবার পাশ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আগামী সপ্তাহেই তা সংসদে বিল আকারে পেশ হতে পারে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের পরিকল্পনাও রয়েছে কেন্দ্রের। তৃতীয় মোদী সরকার শরিকনির্ভর না হয়ে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে এত দিন সে সবের জন্য অপেক্ষা করতে হত না। ফলে শতবর্ষে সঙ্ঘ তাদের চাহিদা মিটিয়ে ফেলতে পেরেছে। অন্য দিকে, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভারতে শতবর্ষের বেশি পথ চলে ফেলেছে। সে দিক থেকে তেমন ভাবে বৃদ্ধি পায়নি তারা। বরং ক্রমে সাংগঠনিক শক্তি কমেছে তাদের। এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। সেই অভিমত বলে, ভারতের মতো অসংখ্য ধর্ম-বর্ণ-ভাষায় বিভক্ত দেশে কমিউনিস্ট পার্টির বৃদ্ধি সহজ নয়। সারা বিশ্বে যখন মতাদর্শগত ভাবে কমিউনিজ়ম প্রায় নিশ্চিহ্ন, তখন ভারতে তারা ‘বৈপ্লবিক’ কিছু করে ফেলবে, সেটা ভাবা বাতুলতা মাত্র।

ধারাবাহিক ভোটে দেখা যাচ্ছে, বাংলায় বামের ভোট রামের দিকে যাচ্ছে। যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তাতে বামেদের বাক্স থেকে যে ভোট চলে গিয়েছে, তা ফিরবে কবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সিপিএমের অনেক তাবড় নেতারও। আলিমুদ্দিনও অনুধাবন করছে, বাংলার রাজনীতি যে দ্বিমেরু অক্ষে আবর্তিত হচ্ছে, তা থেকে এখনই বার হওয়া মুশকিল। আবার সাংগঠনিক দিক থেকেও নিচুতলায় বামেদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। সম্মেলন প্রক্রিয়ায় বহু জায়গাতেই দলের নথিতে সঙ্ঘের ভূমিকার কথা লেখা হচ্ছে। বিশেষত, জঙ্গলমহল এবং সংখ্যালঘু মহল্লার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সঙ্ঘের কাজকর্মের কথা লেখা হচ্ছে প্রতিবেদনে। সিপিএমের নেতারা মানছেন, যে কাজ সঙ্ঘ করে, তার জন্য দরকার ধৈর্যশীল সংগঠকের। ফলে চটজলদি যে ফলাফল মিলবে না, তা-ও জানেন তাঁরা। তবে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার প্রয়োজনীয়তার কথা মানতে আপত্তি নেই তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

CPM RSS teenagers Bengal politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy