সিপিআই পার্টি কংগ্রেসে ডি রাজার সঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। নিজস্ব চিত্র।
দলের সদর দফতরের নাম অজয় ভবন। দিল্লিতে সেই বাড়ি যে রাস্তায়, তার নাম ‘ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত মার্গ’। দলের এক কালের নেতা ছিলেন ভূপেশ গুপ্ত, যাঁর পঞ্জাবির বোতাম ছেঁড়া দেখে সেফটি পিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী! বাংলা থেকে এমন সব ডাকসাইটে নেতা উঠে এসেছিলেন যে দলে, সেই সিপিআইয়ের সাংগঠনিক হাল অনেক দিন ধরেই করুণ। এ বার সংগঠনের নিরিখে সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে তুলনায় বঙ্গের সিপিআই নেমে গেল একেবারে ষষ্ঠ স্থানে!
বিজয়ওয়াড়ায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিআইয়ের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। সেখানে প্রথা মেনে রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। আর দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অতুল কুমার আনজান যে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছেন, সেখানেই স্পষ্ট হয়েছে দক্ষিণ ভারতের তুলনায় দুই বাঙালি রাজ্য বাংলা ও ত্রিপুরায় কেমন শোচনীয় হাল হয়েছে সাবেক কমিউনিস্ট পার্টির। সূত্রের খবর, ২০২১ সাল পর্যন্ত নবীকরণের হিসেব ধরলে সিপিআইয়ের সদস্যসংখ্যা গোটা দেশে এখন প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ। এর মধ্যে বাম জোট ক্ষমতায় আছে যে রাজ্যে, সেই কেরলে সদস্যসংখ্যাও সর্বাধিক— ১ লক্ষ ৬৭ হাজার। দক্ষিণের তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীন ডিএমকে-র সঙ্গে জোটে আছে কংগ্রেস এবং বামেরা। সেখানে সিপিআইয়ের সদস্য ১ লক্ষ ১৩ হাজার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই নিরিখে তৃতীয় স্থানে আছে হিন্দি বলয়ের বিহার। সেখানে সিপিআইয়ের সদস্যসংখ্যা এখন ৭৮ হাজার ৯১২। তেলঙ্গানায় ওই সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২। যে রাজ্যে এ বার পার্টি কংগ্রেসের আসর বসেছে, সেই অন্ধ্রপ্রদেশ ৫১ হাজার ৬৬৬ জন সদস্য নিয়ে পঞ্চম স্থানে।
এই সব রাজ্যের পরে রয়েছে বাংলার সিপিআইয়ের স্থান। এ রাজ্যে তাদের সদস্যসংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৮৩২-এ। এর পিছনে উল্লেখযোগ্য রাজ্য বলতে রয়েছে শুধু পঞ্জাব ও ওড়িশা। বাংলাভাষী আর এক রাজ্য ত্রিপুরায় সাড়ে চার বছর আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বামেরা। সেই রাজ্যে সিপিআইয়ের সদস্য এখন সাকুল্যে ৯৩৭ জন! দলের জাতীয় পরিষদের এক সদস্যের কথায়, ‘‘বহু রাজ্যেই শাখা স্তরের কমিটি একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে, কোখাও কোথাও অস্তিত্বহীন। বাংলা তার মধ্যে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য। শাখা স্তরে সক্রিয়তা না থাকলে ভোটের সময়ে বুথ স্তরে লোকও পাওয়া যায় না।’’ রাজ্যে ক্ষমতা হারালেও সিপিএম এবং তাদের গণ-সংগঠন কিন্তু সদস্যসংখ্যা এবং সক্রিয়তায় এখনও অনেক এগিয়ে।
সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী আসরে বিজয়ওয়াড়ায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএম এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয় সম্পাদক জি দেবরাজনও। সিপিআইয়ের রাজার সুরেই ইয়েচুরি, দীপঙ্করেরা দেশে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে আরএসএসের নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গড়ার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তবে সিপিআইয়ের অন্দরেই প্রশ্ন, এত দুর্বল সংগঠন নিয়ে ‘ভয়ঙ্কর’ আরএসএসের মোকাবিলা কত দূর হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy