Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

দিলীপ, সুব্রত, মুকুল, রাহুল: সব শিবিরকে ঠাঁই দিয়ে নতুন কমিটি বিজেপির

নতুন কমিটির চেহারা নিয়ে দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছিল না অনেক দিন ধরেই।

নতুন কমিটি বিজেপির।

নতুন কমিটি বিজেপির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ১৯:৪০
Share: Save:

টানাপড়েনে ইতি। পুরনো-নতুনে ভারসাম্য রেখেই নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা বিজেপির। লোকসভা নির্বাচনের আগেই একঝাঁক নতুন মুখ দলে ঠাঁই পেয়েছিল, টিকিটও পেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই। কিন্তু বড়সড় সাংগঠনিক দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জোর তর্ক চলছিল মুরলীধর সেন লেনে। রাজ্য নেতৃত্বের নতুন চেহারা কিন্তু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, ২০২১-এর দিকে তাকিয়ে আপাতত সে টানাপড়েন কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারল বিজেপি। সাধারণ সম্পাদক পদে যেমন থেকে গেলেন পুরনো প্যানেলেরই সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহরা, তেমনই যুব, মহিলা, এসসি এবং এসটি মোর্চার দায়িত্ব গেল দলে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই নতুন সৌমিত্র খাঁ, অগ্নিমিত্রা পাল, দুলাল বর, খগেন মুর্মুদের হাতে। সহ-সভাপতি হলেন অর্জুন সিংহ, ভারতী ঘোষরা। রাজ্য সম্পাদকের পদ পেলেন সব্যসাচী দত্ত।

দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন আগেই। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হন, তা-ও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তার পরেই নতুন করে রাজ্য কমিটি গঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন কমিটির চেহারা নিয়ে দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছিল না অনেক দিন ধরেই। তা ছাড়া পুরভোট ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় নতুন করে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয় কিছু দিনের জন্য। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় পুরভোট পিছিয়ে যায়। ফলে কমিটি নতুন করে গঠনে বা রদবদলে আর বাধা ছিল না। কিন্তু, লকডাউনের জেরে আবার সে কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল।

কনটেনমেন্ট এলাকা ছাড়া অন্য সব জায়গায় সোমবার থেকে লকডাউন মোটের উপর উঠেই গেল। আর সোমবারই রাজ্য বিজেপি তার নতুন কমিটিও ঘোষণা করে দিল। নয়া কমিটিতে কারা নতুন করে ঠাঁই পাচ্ছেন, কাদের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে সহ-সভাপতি করা হচ্ছে, সহ-সভাপতি পদ থেকে কে বাদ যাচ্ছেন, মোর্চাগুলোর দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন— সে সব দিন পনেরো আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল বলে এ দিন রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু লকডাউন চলছিল বলে দিলীপ ঘোষ তা ঘোষণা করছিলেন না। সোমবার লকডাউন অনেকটা শিথিল হল এবং রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করলেন দিলীপ।

আরও পড়ুন: আনলক-১ শুরু হতেই যানজটে ‘লকড’ কলকাতার বহু রাস্তা​

সাধারণ সম্পাদক পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বিজেপিতে। যে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক পদে এত দিন ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহ এবং রথীন্দ্রনাথ বসু এ বারেও থেকে গেলেন ওই পদে। বিপুল উত্থান ঘটিয়ে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী পদ থেকে সরাসরি রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা হয়ে গেলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোর উত্থানও চোখে পড়ার মতো। তিনিও রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেন।

সাধারণ সম্পাদকদের পুরনো প্যানেল থেকে যে দু’জন এ বার বাদ পড়লেন, তাঁরা হলেন রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দু’জনকেই সহ-সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে। সহ-সভাপতি পদে উল্লেখযোগ্য নতুন নামগুলি হল ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তা ভারতী ঘোষ। এ ছাড়া সুভাষ সরকার, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, রাজকমল পাঠক, জয়প্রকাশ মজুমদার, মাফুজা খাতুনরা যেমন সহ-সভাপতি ছিলেন, তেমনই এ বারও রয়ে গিয়েছেন। সংগঠনে সব শিবিরের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে রীতেশ তিওয়ারির। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের ঘনিষ্ঠতম অনুগামী হিসেবে পরিচিত রীতেশকে এ বার নিজের কমিটিতে সহ-সভাপতি করে ভারসাম্যের বার্তা দিতে চেয়েছেন দিলীপ। সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে চন্দ্র বসুকে।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের গুরুত্ব এক লাফে অনেকটা বেড়েছে সংগঠনে। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও দিলীপের সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্ক বেশ ভাল। ফলে বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র পুরস্কারও পেলেন। দলের রাজ্য সম্পাদক পদ পেলেন তিনি। এ ছাড়া তুষার মুখোপাধ্যায়, তুষার ঘোষ, দীপাঞ্জন গুহ, বিবেক সোনকার, ফাল্গুনী পাত্র, তনুজা চক্রবর্তী, সংঘমিত্রা চৌধুরী, শর্বরী মুখোপাধ্যায় এবং অরুণ হালদারকে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে।

মহিলা মোর্চায় বড় চমক। এত দিন ওই মোর্চার সভানেত্রী পদ সামলাচ্ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা মোর্চার দায়িত্ব দেওয়া হল অগ্নিমিত্রা পালকে। ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রাও লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে ঢুকেছিলেন। টিকিট পেতে পারেন জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে পাননি। টলিউড এবং বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে যে সব গেরুয়া সংগঠন পথ চলা শুরু করেছে, সেখানেও অগ্নিমিত্রা খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না। রাজ্য স্তরের সাংগঠনিক রদবদল ঘোষিত হতেই অগ্নিমিত্রার জন্য শিকে ছিঁড়ল। শুধু শিকে ছিঁড়ল না, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন তিনি। তবে লকেট চট্টোপাধ্যায় যে ভাবে সামলে এসেছেন মহিলা মোর্চাকে এত দিন, অগ্নিমিত্রা সে ভাবে মাঠে-ময়দানে ছুটতে পারবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে প্রথম দিন থেকেই। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, মহিলা মোর্চার শীর্ষপদ অগ্নিমিত্রাকে দেওয়া নিয়ে মুরলীধর সেন লেনে কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সে সবে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাননি।

যুব মোর্চার সভাপতি পদ কে পাবেন, তা নিয়েও বিস্তর জল্পনা ছিল অনেক দিন ধরেই। দেবজিৎ সরকারকে যে সরানো হবে, তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু নতুন সভাপতি হিসেবে অনেকগুলি নাম ভাসছিল। সোমবার দেখা গেল, সে দৌড়ে শুভ্রাংশু রায় (মুকুল রায়ের ছেলে), পবন সিংহ (অর্জুন সিংহের ছেলে), শঙ্কুদেব পন্ডাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।

আরও পড়ুন: আজ থেকে কী কী আনলক হল, এর পর কী কী, দেখে নিন এক নজরে​

এসসি মোর্চার সভাপতি করা হয়েছে বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুলাল বরকে। এসটি মোর্চার সভাপতি করা হয়েছে সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা তথা মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মুকে। সংখ্যালঘু মোর্চার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, সেই আলি হোসেনই থেকে গিয়েছেন।

রাজ্য বিজেপির অন্দরে শিবির বিন্যাস এখন যে রকম, তাতে এই নতুন কমিটিতে কিন্তু সব শিবিরের প্রতিনিধিত্বই দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু পদে যেমন দিলীপ ঘোষ পুরোপুরি নিজের পছন্দের লোক বসালেন, তেমনই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়ে গেলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরাই। রাজ্য সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হয়ে কেন্দ্রীয় সম্পাদক পদ পাওয়া রাহুল সিংহ ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছিলেন সংগঠনে। তাঁর শিবিরের প্রতিনিধিত্বও এ বার বাড়ানো হয়েছে। আবার তৃণমূল, সিপিএম বা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন যে সব সাংসদ-বিধায়করা, তাঁদেরও দূরে সরিয়ে রাখা হয়নি। এঁদের অনেকের গায়েই মুকুল-ঘনিষ্ঠ হওয়ার তকমা রয়েছে। দিলীপ বা সুব্রত, কারও শিবিরই মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠদের বড় জায়গা দিতে প্রস্তুত নন, এমন গুঞ্জনও তৈরি হয়েছিল এক সময়ে। কিন্তু রাজ্য কমিটির নতুন চেহারা বলছে, মুকুল শিবিরকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টাও হয়নি।

লকডাউনের জেরে পুর নির্বাচন পিছিয়ে গিয়েছে রাজ্যে। সে নির্বাচন হবে, নাকি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসক বসিয়েই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে পুরসভাগুলো, এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু পুরভোট হোক বা না হোক, রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী পক্ষ হিসেবে উঠে আসা বিজেপির জন্য পাখির চোখ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনই। সে দিকে তাকিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতেই হবে এবং অভ্যন্তরীণ সব বিবাদ মিটিয়ে ফেলতেই হবে— এ বার্তা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার বার দিচ্ছিলেন রাজ্য নেতাদের। নতুন রাজ্য কমিটির চেহারায় কিন্তু সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চাওয়ার চেষ্টাই দেখা গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh Locket Chatterjee Mukul Roy West Bengal Assembly Election 2021 Sabyasachi Dutta Arjun Singh Bharati Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy