ফাইল চিত্র।
শুধু মা নয়, বাবা হওয়াও নয় মুখের কথা! বাবা ও সন্তানের সম্পর্কও মেলামেশা, সাহচর্যেই গড়ে উঠে। তাই স্রেফ রক্তের সম্পর্কে বাবা বলেই কোনওরকম যোগাযোগ ছাড়া সন্তানের উপরে তাঁর কোনওরকম অধিকার বর্তায় না। সাড়ে চার বছরের একটি শিশুর অধিকার দাবি করে হাই কোর্টের একটি মামলায় বিচারপতির এমনই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। জন্মদাতা বাবার কাছে এখনই না-পাঠিয়ে পাতানো মা-বাবার কাছে তাকে রাখায় সায় দিয়েছে আদালত।
হাওড়ার সালকিয়ার একটি পরিবারে শিশুকন্যাটির জন্ম ২০১৭ সালের অগস্টে। ২০১৮ সালের মার্চে তার মা আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলে পুলিশি রিপোর্টে উঠে এসেছে। শিশুটি এর পরে তার দিদিমার বাড়িতেই ছিল। বাবার সঙ্গে দিদিমার সম্পর্কে নানা জটিলতার জেরেও শিশুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। আবার দিদিমার বাড়িতে পড়শি এক দম্পতির কাছে সন্তান স্নেহেই সে বেড়ে উঠছিল। সমস্যায় জটিলতা বাড়ে গত অক্টোবরে। শিশুটির দিদিমাও তখন আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশের দাবি। এর জন্য জামাইকেই তিনি দায়ী করে যান। তবে ফের বাবার উদয় ঘটেছে মেয়ের জীবনে! নিজের মেয়েকে নিজের কাছে ফেরাতে তিনিও মরিয়া। কিন্তু একরত্তি মেয়েটিকে কার্যত জন্ম থেকেই যাঁরা বুকে করে রেখেছেন, তাঁরাও শিশুটিকে ছাড়তে নারাজ। এই বিষয়টিই হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
হাই কোর্টে শিশুটির বাবা এ-ও জানিয়েছেন, তাঁর কাছে থাকলে মেয়ে আর্থিক ভাবে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য পাবে। আরও ভাল স্কুলে তার লেখাপড়া হবে। তবে এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় হাই কোর্ট। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, শিশুটি অন্য কাউকে বাবা বলে চেনে। আগে তার নিজের বাবার সঙ্গে সম্পর্কে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। তার আগে রাতারাতি তার চেনা পরিবেশ থেকে শিশুটিকে সরানো ঠিক নাও হতে পারে। তাতে শিশুটির স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা ধাক্কা খেতে পারে।
হাই কোর্টের মতে, বাবার সঙ্গে ভাব হওয়ার পরেই মেয়ে বুঝতে পারবে, সে বাবার কাছে ‘স্বাচ্ছন্দ্যের’ জীবন বেছে নেবে না গরিবের কাছে থাকবে! তবে নানা ঘটনার দুর্বিপাকে শিশুটির থেকে বিচ্ছিন্ন বাবাকেও কিছুটা সুযোগ দিতে চায় হাই কোর্ট। বিচারপতির নির্দেশ, আগামী শনিবার সারা দিন বাবার কাছে থাকবে মেয়ে। এবং আগামী ২৯ নভেম্বর আদালত শিশুর সঙ্গে কথা বলবে।
খুদে মেয়ের ‘আসল’ বাবা নিয়ে এই টানাপড়েন অনেকের কাছে ফিল্মি চিত্রনাট্যের মতোই জমজমাট লাগছে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষিকা হিয়া সেনের কথায়, ‘‘আইনি বা রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়তার অধিকারের বাইরেও এক ধরনের ‘প্র্যাকটিকাল কিনশিপে’-র ধারণা সমাজে চলে আসছে। বন্ধু বা পাতানো সম্পর্কের গভীরতাও গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং সন্তানের জন্মে গর্ভ দান বা দত্তক সন্তানের অধিকারের মতো বিষয়গুলি আরও বেশি করে উঠে আসছে। তাতেও পরিবারের ধারণাটা ক্রমশ পাল্টাচ্ছে।’’
বাবা হওয়া কি স্রেফ জনক হওয়া? না কি পিতৃত্বও যাপনের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে? প্রাচীন মহাকাব্য, ইতিহাস, সাহিত্যে বার বার উঠে এসেছে এ সব প্রশ্ন। ‘‘আসলে তো আমরা সকলেই কয়েক জন মায়াবদ্ধ প্রাণী। এক সঙ্গে থাকতে থাকতে জড়িয়ে পড়ি। কেউ চলে গেলে কাতর হই! রক্তের বিচারে সত্যিই কার সঙ্গে কী সম্পর্ক, প্রশ্নগুলো অনেক সময়েই অবান্তর’’, বলছেন প্রবীণ সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। শিশুকন্যা ও তার বাবার বিষয়টিতে হাই কোর্টের সব দিক দেখে ধীরেসুস্থে চলায় তিনিও সায় দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy