দক্ষিণ ২৪ পরগনার জি প্লটে ভাঙা বাঁধ। মঙ্গলবার। ছবি লেখকের তোলা।
একটু বেশি রাতে ঘুম পেয়ে গিয়েছিল সারাদিনের ক্লান্তিতে। ভিএইচএফ রেডিয়ো খোলাই ছিল। রাত ১১টা নাগাদ বেস স্টেশনের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। ঘুম ভেঙে গেল সোঁ সোঁ আওয়াজে। চোখ মেলতেই দেখি প্রবল হাওয়া বইছে। দোতলা স্কুলবাড়িটার খোলা ছাদে আমাদের অস্থায়ী রেডিয়ো স্টেশনের জিপি অ্যান্টেনা বসিয়েছিলাম। হাওয়ার গতি দেখে বুঝতেই পারছিলাম না ইয়াস সময়ের আগে চলে এল কিনা। টর্চ নিয়ে ছুটলাম ছাদে। নিজেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না ওই এলোমেলো হাওয়ার দাপটে। বৃষ্টিও শুরু হয়েছে তখন। চোখের সামনে অ্যান্টেনাটা কাত হয়ে পড়ল। রীতিমতো হামাগুড়ি দিয়ে অ্যান্টেনার কাছে পৌঁছে খুলে নীচে নেমে এলাম। অদ্ভুত লাগল, কিছুক্ষণ পরেই সব শান্ত হয়ে গেল। আমাদের আর ঘুমনো হল না।
গত বছরও আমপানের সময় পাথরপ্রতিমা ব্লকের জি প্লটে হ্যাম রেডিয়োর স্টেশন ইনচার্জ ছিলাম। তছনছ হয়ে যাওয়া জি প্লটের সীতারামপুর, গোবর্ধনপুর, শতদাসপুরের পুরনো ছবিগুলো মোবাইলের গ্যালারিতে ছিল। সেগুলোই দেখছিলাম। এখানকার অধিকাংশ মানুষের রুটিরুজি পানের বরজের সঙ্গে জড়িয়ে। আমপান সেই বরজগুলো নিশ্চিহ্ন করেছিল। এবারও কি সেই একই ছবি দেখতে হবে?
মঙ্গলবারও বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। লোডশেডিংয়ে আমাদের ইনভার্টার ভরসা রেডিয়ো চালাতে। এই স্টেশনে আমি, সুমিত ঘোষ এবং সুমিত বসাক তিন জন আছি। দিনভর কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি নয়তো মেঘলা আকাশ, নিম্নচাপের মতো। তবে হাওয়ার গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার। রেডিয়োতে বার্তা এল সকাল ন’টায় বালিয়াড়া অবিনাশ স্মৃতি এফপি স্কুলের ফ্লাড শেল্টারে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। তার কিছুক্ষণ পরেই ঘোড়ামারার খাসিমারায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে বলে জানতে পারলাম। গঙ্গাসাগরেও চপ্পলডুবি, হরিমারি পশ্চিমপাড়, কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ঘেরিতে জল ঢোকার খবর আসছিল। কপিলমুনির আশ্রমের কাছে ২ নম্বর রাস্তা জলের তোড়ে ধসে যায়। সুমতিনগর, কচুবেড়িয়া, বোটখালিতেও একই অবস্থা।
জি প্লটেও বাঁধের অবস্থা দেখতে বেরিয়েছিলাম নিজেই। শতদাসপুর সবুজ বাজারে প্রায় ১০০ ফুট বাঁধ নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। সীতারামপুরে বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। বাসিন্দারাই মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছেন বলে জানালেন স্থানীয়েরা। গোবর্ধনপুরে ১৫০ ফুটের কাছাকাছি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। আরও ৩০-৪০ ফুটের খুবই খারাপ অবস্থা। জেসিবি এনে সেখানেও বাঁধ মেরামতির চেষ্টা চলছে দেখা গেল। কিন্তু ইয়াস-এর দাপট তো বটেই ভরা কটালের ধাক্কাতেই এই বাঁধগুলো ভেঙে জল ঢুকে যাবে। অনেকটা এলাকা বানভাসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে তাতে। পানের বরজগুলোতেও নোনা জল ঢুকে যাবে।
তবে আবহাওয়ার নাড়ি বোঝেন এখানকার মানুষজন। আমপানের সময় যে ক্ষতি হয়েছিল এ বার ততটা হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাই তিনটি ফ্লাড শেল্টারই কার্যত ফাঁকা। আজ বুধবার পরিস্থিতি বুঝে পরিবার পরিজন নিয়ে ফ্লাড শেল্টারে যাবেন বলে জানান পল্লবী দাস, অনন্ত মেটে, সঞ্জয় মেটেরা।
(লেখক হ্যাম রেডিয়ো স্বেচ্ছাসেবক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy