সুনসান ফিল্মসিটি চত্বর। চন্দ্রকোনা রোডে। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছর আগের এক দুপুর। পিছিয়ে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের তস্য পিছিয়ে পড়া এলাকা চন্দ্রকোনা রোড ঝলসে যাচ্ছিল তারার আলোয়। ‘প্রয়াগ ফিল্মসিটি’র উদ্বোধনে মুম্বই থেকে কলকাতা পৌঁছে কপ্টারে উড়ে এসেছিলেন শাহরুখ খান। লাখো লোকের জমায়েতে বলিউড-বাদশার মঞ্চে প্রয়াগের কর্ণধার বাসুদেব বাগচী সে দিন বলেছিলেন, ‘‘আমরা মানুষের থেকে টাকা তুলছি নিয়ম মেনে। তাঁদের প্রাপ্য টাকা ফেরতও দেব। আর লাভের টাকায় হচ্ছে এই ফিল্মসিটি।’’
২০১২-র ১৫ এপ্রিলের সেই কথায় ভরসা করেছিলেন অনেকে। এখন সব ভেঙে খান খান। বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা চালানোর অভিযোগে মঙ্গলবার শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে প্রয়াগের দুই কর্ণধার বাসুদেব ও তাঁর ছেলে অভীক বাগচীর। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ফিল্মসিটিতেও এখন শুধুই অন্ধকার। বৃহস্পতিবার সেখানে দাঁড়িয়ে এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখের জলেই সব শেষ হয়ে গেল।’’ কর্মীদের আরও আশঙ্কা, সিবিআই এ বার এখানে হানা দেবে।
প্রয়াগ ফিল্মসিটি
• জমি: ৪৫০ একর।
• সম্পত্তি: এক হাজার কোটি টাকার।
• বিলাসবহুল রিসর্ট: ১৩টি। সেমি ডিলাক্স লজ: ৭টি। রেস্তোরাঁ: ২টি। ওয়ার্কশপ: ৪টি। শ্যুটিংয়ের সময় অস্থায়ী কর্মীদের থাকার আবাসন: ৪টি। নির্মীয়মাণ: কর্পোরেট বিল্ডিং, ২টি ফেসিলিটি বিল্ডিং,
৬টি বাংলো।
• রয়েছে স্কুল, মসজিদ, গির্জা, মাজার, ডাকঘর, সংশোধনগার, রেলস্টেশন, মেট্রো স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, বিমানের ‘সেট’।
গোড়ায় রীতিমতো জাঁক ছিল এই ফিল্মসিটির। ‘যোদ্ধা’, ‘বরবাদ’, ‘বাদশা দ্য ডন’, ‘জলে জঙ্গলে’, ‘নকশাল’, ‘জুলফিকর’-সহ একাধিক বাংলা সিনেমার শ্যুটিংয়ে এখানে এসেছেন প্রসেনজিৎ, দেব, অঙ্কুশ, শ্রাবন্তী, নুসরত, মিমি, পাওলির মতো তারকারা। হয়েছে বেশ কিছু বাংলা ও হিন্দি সিরিয়ালের শ্যুটিং-ও। তারকাদের দেখতে তখন ভিড় জমত। কোটি কোটি টাকায় তৈরি ভ্যাটিক্যান সিটি, লোটাস টেম্পল, সাঁচী স্তূপ, তাজমহল, কোনারক মন্দির, কুতুব মিনারের ‘সেট’ দেখতেও অনেকে আসতেন। রমরমার সেই পর্বে হামেশাই বাসুদেব ও অভীক আসতেন বলে জানালেন ফিল্মসিটির দায়িত্বে থাকা পলাশ হালদার। তিনি বলেন, “গত দু’বছর মালিকরা আসেননি। ফোনে কথা হত। ওঁদের নির্দেশেই আমরা সব সামলে রেখেছিলাম। এ বার কী হবে জানি না।’’
আরও পড়ুন: খুদে ইলিশের পেটেও মিলছে ডিম! বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা
কর্মীরা জানালেন, বছর দুয়েক ধরেই জৌলুস কমছিল ফিল্মসিটির। কালেভদ্রে সিরিয়াল আর বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং হত। মাস খানেক আগে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংই এখানে শেষ কাজ। এক কর্মী বলেন, “ইদানীং শ্যুটিং আর হতই না। কিছু পর্যটক আসতেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ জিনিস নষ্ট হতে বসেছে।” কিছুদিন আগে ফিল্মসিটির একাংশ আগুনে পুড়েও গিয়েছে।
গড়বেতা ৩ ব্লকের নয়াবসত এবং সাতবাঁকুড়া পঞ্চায়েতের ছ’টি মৌজায় প্রায় ৪৫০ একর জমিতে গড়ে উঠেছিল প্রয়াগ ফিল্মসিটি। ২০০৮ সালে বাম আমলে শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণ। লাল কাঁকুড়ে অ-কৃষি জমির সিংহভাগই ছিল পাট্টার আর খাসজমি। একাংশ রায়ত জমিও ছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, খাতায়কলমে ফিল্মসিটির জমি এখনও প্রয়াগের নামে নথিভুক্ত হয়নি। তবে জমি মালিকরা টাকা পেয়ে যাওয়ায় বিশেষ শোরগোল হয়নি। নিশ্চিন্তেই মাথা তুলেছিল ফিল্মসিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy