Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

মিলছে না সেচের জল, ফের বিপাকে চাষিরা

শস্যলাভের আশায় বাড়িতে-বাড়িতে লক্ষ্মী আরাধনা চলছে। কিন্তু জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে বসেছে সেই শস্যই। আউশগ্রাম, ভাতাড়, রায়না, মঙ্গলকোট থেকে মন্তেশ্বর— একের পর এক জায়গায় সেচের জন্য জল চেয়ে পথ অবরোধ করছেন চাষিরা। রবিবার ডিভিসি-র সেচখালে জল চেয়ে রায়নার দলুইপুর, আউশগ্রামের কয়রাগ্রাম ও ভাতাড়ের কামালপুর মোড়ে কয়েকশো বাসিন্দা রাস্তা অবরোধ করেন।

জলের অভাবে শুকিয়েছে ধানের খেত।—নিজস্ব চিত্র।

জলের অভাবে শুকিয়েছে ধানের খেত।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৯
Share: Save:

শস্যলাভের আশায় বাড়িতে-বাড়িতে লক্ষ্মী আরাধনা চলছে। কিন্তু জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে বসেছে সেই শস্যই।

আউশগ্রাম, ভাতাড়, রায়না, মঙ্গলকোট থেকে মন্তেশ্বর— একের পর এক জায়গায় সেচের জন্য জল চেয়ে পথ অবরোধ করছেন চাষিরা।

রবিবার ডিভিসি-র সেচখালে জল চেয়ে রায়নার দলুইপুর, আউশগ্রামের কয়রাগ্রাম ও ভাতাড়ের কামালপুর মোড়ে কয়েকশো বাসিন্দা রাস্তা অবরোধ করেন। এর আগে আউশগ্রামেরই বটগ্রাম মোড়ে উক্তা-পিচকুরি গ্রামে, মঙ্গলকোটের কৈচর, ভাতাড়ের বলগোনা ও দমল মোড়ে চাষিরা পথ অবরোধ করেছিলেন। গত শুক্রবার মন্তেশ্বরের সিজনা মোড়ে চাষিরা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। চাষিদের অভিযোগ, ডিভিসি-র সেচখাল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জল আসছে না। মাসখানেক ধরে আবার জেলায় ভারী বৃষ্টি হয়নি। ওই সব এলাকায় জলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তেমন কিছু না থাকায় খেত শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। জলের অভাবে ধান গাছ শুকিয়ে খড় হয়ে যাচ্ছে।

সেচখাল দিয়ে জলের ব্যবস্থা করতে পারবে, জেলা প্রশাসন এমন আশ্বাস দিতে পারছেন না। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আমরা জল কেনার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু কোথাও জল মিলছে না। ব্যারাজে যে জল রয়েছে, তার থেকে জল ছাড়লে বোরো চাষের অসুবিধা হবে।” বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, ১৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। নানা কারণে সেই জল নিচু এলাকা পর্যন্ত পৌঁছয়নি। বৃষ্টি হলে এই সমস্যা দেখা দিত না বলে তাঁর মত।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে সেচখালের জলের উপর নির্ভর করে। ওই সব এলাকায় জলের বিকল্প ব্যবস্থা দুর্বল। তাই খেত জমি জল পায়নি। ফলে, প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমি জলের অভাবে ভুগছে। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এখনও যে সব জমিতে আমন ধানের পুষ্টিলাভ হয়নি, জলের অভাবে সেখানকার ধান ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিকদের কাছ থেকে বিশদ রিপোর্ট নেওয়া হবে।” চাষিরা জানান, আউশগ্রাম ১ ও ২, গলসির ১ ও ২, ভাতাড়, রায়না ১ ও ২, মেমারির ১ ও ২, খণ্ডঘোষ ব্লকের বিস্তীর্ণ জমি জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কিছুটা জল ছাড়লেও এলাকায় তা পৌঁছয়নি বলে চাষিদের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, অনেক জায়গায় লকগেট আটকে ডিভিসি-র ছাড়া জল আটকে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা জানান, এই সময় ধানের প্রচুর জল দরকার। পর্যাপ্ত জল না থাকলে ধানের শিস বেরোতে দেরি হবে। আর শিসের ভিতরে শস্যদানা না থাকার সম্ভাবনা বেশি। তার ফলে চাষিদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ভাতারের চাষি প্রিয়ব্রত কার্ফা, বাবলু শেখরা বলেন, “পাম্প দিয়ে পুকুর থেকে জল তুলে মাঠে দিতে হচ্ছে। তাতে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ধানের দাম এ বারও গত বারের মতো থাকলে আমাদের বিপুল লোকসান হবে।”

সাম্প্রতিক বন্যায় বর্ধমান জেলার এই সব এলাকার মাঠঘাট জলে ডুবে গিয়েছিল। কোথাও-কোথাও চাষিদের দু’বার চাষ করতে হয়েছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলেও ক্ষতির বহরে চাষিদের সেই ঘা এখনও শুকায়নি। তার মধ্যে জলের আকালে চাষিরা আবার জেরবার। পরিত্রাণের আশায় এখন প্রকৃতির দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy