Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বাসিন্দারা নারাজ, বর্জ্য ফেলা নিয়ে সমস্যায় পুরসভা

বছরখানেক ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। শহরের বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে, সে নিয়ে তাই নাজেহাল দুর্গাপুর পুরসভা। বর্জ্য ফেলার জন্য কখনও স্টেডিয়াম চত্বর, কখনও ফাঁকা এলাকা বেছে নিয়েছে পুরসভা।

জমা বর্জ্য থেকে ধোঁয়া।—নিজস্ব চিত্র।

জমা বর্জ্য থেকে ধোঁয়া।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

বছরখানেক ধরে বন্ধ পড়ে রয়েছে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। শহরের বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে, সে নিয়ে তাই নাজেহাল দুর্গাপুর পুরসভা।

বর্জ্য ফেলার জন্য কখনও স্টেডিয়াম চত্বর, কখনও ফাঁকা এলাকা বেছে নিয়েছে পুরসভা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আপত্তি উঠেছে। সম্প্রতি একটি কারখানার পিছনে বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। কিন্তু তাতে আগুন লেগে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুরসভায় চিঠি লিখে জানিয়েছেন, আর সেখানে আবর্জনা ফেলতে দেওয়া হবে না। ফলে, পুর কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা বেড়েই চলেছে। যত দ্রুত সম্ভব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি চালু করার দিকেই এখন নজর দিয়েছেন তাঁরা।

দুর্গাপুরের শঙ্করপুরে কেন্দ্রীয় জেএনএনইউআরএম প্রকল্প এবং একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ লগ্নিতে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে ২০১০ সালে। বর্জ্য থেকে সার, বিশেষ ধরনের ইট ইত্যাদি তৈরির ব্যবস্থা ছিল সেখানে। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। কখনও ঠিকাকর্মীরা নিয়মিত বেতন না মেলার অভিযোগ তোলেন। কখনও আবার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা অভিযোগ করে, যে পরিমাণ বর্জ্য প্রয়োজন, তা পুর এলাকা থেকে আসে না। ফলে, কেন্দ্রটি চালানো যাচ্ছে না। এ দিকে আবার লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি পড়তে থাকে। শেষে গত বছর ৬ জুলাই সেখানকার বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। তখন থেকে কেন্দ্রটি বন্ধ।

সমস্যা শুরু এর পরেই। শহরের ফাঁকা জায়গায় বর্জ্য ফেলতে গেলে আশপাশের বাসিন্দারা আপত্তি জানাতে থাকেন। শেষে পুরসভা বর্জ্য ঢালা শুরু করে ভগত্‌ সিংহ স্টেডিয়ামের সম্প্রসারিত অংশে। তাতে আরও তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। তাতে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়নি। আবর্জনার স্তূপ বাড়তে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশে। অবশেষে ১৫ এপ্রিল থেকে ফের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি চালুর ব্যাপারে সম্মত হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটি। কিন্তু তা চালু হতে না হতেই ২৫ এপ্রিল সেখানে আগুন লাগে। ফলে, ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন পুরসভা বর্জ্য ঢালার জন্য বেছে নেয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বেসরকারি ওষুধ কারখানা ও বর্ধমান-আসানসোল রেললাইনের মাঝে ফাঁকা অংশটিকে। কিন্তু সেখানেও আপত্তি তুলেছেন বাসিন্দারা।

রাতুরিয়া গ্রামের নরহরি মণ্ডল বলেন, “দু’বেলা পাশের রাস্তা দিয়ে আমাদের যেতেই হয়। দুর্গন্ধে টেকা যায় না।” আর এক বাসিন্দা রঞ্জন দাস বলেন, “এ ভাবে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা একেবারে মানা যায় না।” বাসিন্দারা জানান, দিন কয়েক আগে বর্জ্যের গাদায় আগুন লেগেছিল। পোড়া গন্ধে ভরে যায় এলাকায়। পাশেই ডিপিএলের একটি বিদ্যুত্‌ বণ্টন সাবস্টেশন রয়েছে। সেখানকার এক কর্মী বলেন, “এক দিন দেখি, পুরসভার গাড়ি এখানে বর্জ্য ঢালছে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। দুর্গন্ধ নাকে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।” বড় আগুন লাগলে রীতিমতো বিপদে পড়তে হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, পুরসভার কর্মীদের তাঁরা এখানে বর্জ্য না ফেলার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফল না হওয়ায় পুরসভার কাছে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করেন, এ ভাবে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা অনুচিত। কিন্তু উপায় না থাকায় জনবসতি থেকে দূরে ফাঁকা জায়গা বেছে নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, “বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি চালুর প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাত্‌ আগুন লেগে সব ভেস্তে গেল। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে দ্রুত কেন্দ্রটি চালু করার ব্যবস্থা করতে বলেছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy