Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
রেলকে টাকা, সম্মতির প্রহর গুনছে কাটোয়া

বৈঠক আজ, মিলতে পারে আরও উন্নয়নের রূপরেখা

জট কাটা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পের জন্য একশো একর খাস জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই নড়েচড়ে বসে এনটিপিসি-ও। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে ফের মাঠে নামে তারা। তারই অঙ্গ হিসেবে বলগোনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ন্যারোগেজ রেললাইন ব্রডগেজ করার জন্য রেলকে ১১২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা দিয়ে দেয় তারা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরাসরি জমি কেনা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কাটোয়ায় সর্বদল বৈঠক বসছে আজ, মঙ্গলবার।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০২:২৭
Share: Save:

জট কাটা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পের জন্য একশো একর খাস জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই নড়েচড়ে বসে এনটিপিসি-ও। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে ফের মাঠে নামে তারা। তারই অঙ্গ হিসেবে বলগোনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ন্যারোগেজ রেললাইন ব্রডগেজ করার জন্য রেলকে ১১২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা দিয়ে দেয় তারা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরাসরি জমি কেনা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কাটোয়ায় সর্বদল বৈঠক বসছে আজ, মঙ্গলবার।

কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে আজ বিকেলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়া নিয়ে ভূমি দফতর, এনটিপিসি এবং নানা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে প্রশাসন। বৈঠকে জমির দাম নিয়ে আলোচনা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বর্ধমান-কাটোয়া রেলপথের পাশাপাশি অজয় নদের উপর সেতু, কাটোয়া-ফুঁটিসাঁকো রাস্তা চওড়া-সহ সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে কাটোয়ার কী কী উন্নয়ন হতে পারে, সেই রূপরেখা এনটিপিসি-র কর্তারা বৈঠকে তুলে ধরবেন বলে জানা গিয়েছে। উন্নত মানের বিদেশি কয়লা আনার জন্য হলদিয়া থেকে কাটোয়া পর্যন্ত জাহাজ আনতে হবে। সে জন্য কাটোয়ার শাঁখাই ঘাটের কাছে এনটিপিসি টার্মিনাল তৈরি করবে। এ ব্যাপারে এনটিপিসি কর্তারা অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছে। সেই সংস্থার অধিকর্তা এস ভি রেড্ডি বলেন, “পুরো বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা জমি দেখছি।”

কাটোয়ার এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রথমে গড়ার কথা ছিল রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল)। ২০০৬ সালে পিডিসিএল এবং রেলের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ড থেকে কয়লা আনার জন্য বর্ধমান-কাটোয়া রেলপথ ব্যবহার করা হবে। তাই ন্যারোগেজ লাইনটিকে ব্রডগেজে রূপান্তরের খরচের ৫০ শতাংশ দেবে পিডিসিএল। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এনটিপিসি-র হাতে যাওয়ার পরে রেলের সঙ্গে সেই চুক্তি মেনে নিয়ে ২০১০-এর শেষ দিকে রাজ্যের সঙ্গে ‘মৌ’ স্বাক্ষর করে এনটিপিসি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কাটোয়ায় ঘাঁটি গাড়লেও জমি-জটে প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় এনটিপিসি-ও এত দিন রেলকে টাকা দেয়নি। এ দিকে, বর্ধমান থেকে বলগোনা পর্যন্ত লাইন ব্রডগেজে রূপান্তরের পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে। ন্যারোগেজ রয়ে গিয়েছে বলগোনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত লাইন।

গত ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়িতে প্রকল্পের জমি কেনা নিয়ে আগের অবস্থান বদলে প্রায় ১০০ একর খাস জমি এনটিপিসি-র হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদও কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয়। তার পরপরই গত ৩ মার্চ পূর্ব রেলের মুখ্য বাস্তুকার (কনস্ট্রাকশন ২)-এর হাতে দু’টি চেকে ১১২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা তুলে দেয় এনটিপিসি। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “রাজ্য সরকার আমাদের বীরভূমের পাঁচামি ব্লকের কয়লা দেবে বলে জানিয়েছে। কয়লা আনার জন্য বর্ধমান-কাটোয়া রেলপথ ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। তা সত্ত্বেও আমরা চুক্তি মতো রেলকে টাকা দিয়েছি।” তবে কয়লা আনার জন্য আমোদপুর-কাটোয়া রেলপথ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। ওই রেলপথটি ব্রডগেজ করার কাজ চলছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি প্রসাদ বলেন, “নিয়ম মেনেই এনটিপিসি রেলকে টাকা দিয়েছে।”

বর্ধমান-কাটোয়া রেলপথে ছোট ট্রেন চলতে শুরু করে ১৯১৫ সালের ১ ডিসেম্বর। লন্ডনের ‘ম্যাকলিওড রাসেল অ্যান্ড কোম্পানি’ এই রেলপথটি কিনে নেয়। তারা ‘ম্যাকলিওড লাইট রেলওয়েজ’ নাম দিয়ে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত বর্ধমান-কাটোয়া ছোট রেল চালায়। ১৯৬৬ সালে ওই লাইনটি অধিগ্রহণ করে ভারতীয় রেল। এক সময়ে এই রেলপথ দিয়ে ৮-১০ জোড়া ট্রেন চলাচল করত। ৫৩ কিলোমিটার এই রেলপথ যেতে পৌনে তিন ঘণ্টা সময় লাগত ছোট রেলের। পরবর্তী সময়ে ট্র্যাক দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ট্রেনের গতিবেগ কমে যায়। ওই পথ যেতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মাত্র দু’জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। আর বছর দেড়েক পার করলেই শতবর্ষ পূর্ণ হবে ন্যারোগেজ এই রেলপথের। কিন্তু এনটিপিসি রেলকে টাকা মিটিয়ে দেওয়ায় শতবর্ষ পূরণের আগে থমকে যাওয়ার মুখে এই ছোট রেলও।

অন্য বিষয়গুলি:

soumen dutta katwa railway ntpc pdcl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE