Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

পদ্মের দাপটে দুর্গাপুরেও ভোট কমলো তৃণমূলের

মাত্র তিন বছর আগে জয় এসেছিল হইহই করে। তার পরের বছর বিরোধীদের আরও কোণঠাসা করে দখলে এসেছে পুরসভা। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটের ফলে কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলছে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতৃত্বকে।

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতাকে ঘিরে উল্লাস তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। রবিবার দুর্গাপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতাকে ঘিরে উল্লাস তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। রবিবার দুর্গাপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০১:৫১
Share: Save:

মাত্র তিন বছর আগে জয় এসেছিল হইহই করে। তার পরের বছর বিরোধীদের আরও কোণঠাসা করে দখলে এসেছে পুরসভা। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটের ফলে কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলছে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতৃত্বকে। দুর্গাপুরের দুই বিধানসভা এলাকায় বেশি ভোট পেলেও ২০১১-এর তুলনায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে কমেছে ব্যবধান। তার চেয়েও বড় কথা, দুই কেন্দ্রেই বিপুল ভোট পেয়েছে বিজেপি। এক জায়গায় তো আবার সিপিএমকে ছাপিয়ে তৃণমূলের পরেই উঠে এসেছে তারা।

মাত্র তিন বছরের মধ্যে শহরবাসীর একাংশের এমন ‘আনুগত্য বদল’ কেন? রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের মতেই, ক্ষমতায় আসার পরে এই কয়েক বছরে উত্তোরত্তর বাড়তে থাকা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দ্বন্দ্ব ও তা থেকে শহরে অশান্তিই এর মূল কারণ। এর জেরে বিরক্ত শহরের অনেকেই। আর তার প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে। তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ সব মানতে চাননি। বিজেপি-র বেশি ভোট পাওয়াকেও তাঁরা প্রকাশ্যে আমল দিতে নারাজ।

২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে দুর্গাপুরের এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রেই প্রায় পনেরো হাজারের ব্যবধানে এগিয়েছিলেন বাম প্রার্থী। বিজেপি-র ভোট আট হাজার ছোঁয়নি দু’জায়গাতেই। ২০১১ সালে দুর্গাপুর পূর্বে হাজার আটেক ও পশ্চিমে প্রায় সতেরো হাজার ব্যবধানে জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সেখানে এ বার পূর্ব কেন্দ্রে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১২০০-র আশপাশে। আর পশ্চিমে বিজেপি-র থেকে মাত্র হাজার আটেক ভোট বেশি পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। দুই কেন্দ্রেই ২০১১-র তুলনায় কুড়ি হাজারেরও বেশি সংখ্যক ভোট কম পেয়েছে তৃণমূল।

এর আগে যেখানে দুই কেন্দ্রেই কখনও দলের ভোট পাঁচ অঙ্কে পৌঁছয়নি, সেখানে এ বার দুর্গাপুর পূর্বে বিজেপি পেয়েছে ৪০১৩৯ ও পশ্চিমে ৫৫৫৩১টি ভোট। যা দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বিজেপি নেতৃত্ব। পাশের আসানসোল কেন্দ্রে যখন দলের রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নেতারা এসে প্রচার করে গিয়েছেন, সেখানে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে তেমন কারও দেখা মেলেনি। তা সত্ত্বেও ভাল ফলের পরে ভবিষ্যত্‌ নিয়ে আশাবাদী শহরের বিজেপি নেতারা। দলের দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অখিল মণ্ডল বলেন, “এই শিল্পাঞ্চলের মানুষ আমাদের ভরসা করেছেন। মানুষের ভরসার মর্যাদা আমরা দেব। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দু’টি আসনেই আমরা জয়ী হব বলে আশা করছি।”

এই দুই বিধানসভা এলাকার মধ্যে দুর্গাপুর পুর এলাকা ছাড়াও রয়েছে কাঁকসার তিনটি পঞ্চায়েত। এই বিস্তীর্ণ এলাকার বহু মানুষ কাজ করেন দুর্গাপুর ও কাঁকসার বিভিন্ন শিল্প-কারখানায়। বিজেপি-র দাবি, আগে সিটু ও পরে আইএনটিটিইউসি-র কাজ-করবারে শিল্প সংস্থাগুলিতে কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে বহু সিটু সমর্থক ঠিকা শ্রমিক কাজ হারায়। বাধ্য হয়ে তাঁরা আইএনটিটিইউসি-তে নাম লেখান। কিন্তু আইএনটিটিইউসি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের যাঁতাকলে পড়ে নিয়মিত কাজ জোটে না তাঁদের। ফলে, রোজগার কমেছে। সংসার চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন তাঁরা। আইএনটিটিইউসি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে সরকারি সংস্থা ডিএসপি, ডিপিএল থেকে শুরু করে বেসরকারি নানা কারখানাও। তার জের এসে পড়েছে বাইরের এলাকায়। বারবার বোমাবাজি, মারপিটের জেরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। বিজেপি নেতাদের দাবি, এরই প্রভাব এ বার পড়েছে ভোটবাক্সে। বিজেপি নেতা অখিলবাবুর কথায়, “সিটুর রক্তচক্ষু থেকে বাঁচতে তৃণমূলের শরণাপন্ন হয়েছিলেন দুর্গাপুরবাসী। কিন্তু তারা মুক্তি দিতে পারেনি। উল্টে আইএনটিটিইউসি-র কাজ-কারবারে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ দশা। তাই মানুষ এ বার আমাদের সমর্থন করেছেন।”

বিজেপি-র এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছে আইএনটিটিইউসি। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির এই কথাবার্তার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে আইএনটিটিইউসি শিল্পাঞ্চলে সব সময় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।” কিন্তু তৃণমূলের ভোট কমে বিজেপি-র ভোট বাড়ল কোন কারণে, সে উত্তর মেলেনি। বিজেপি আইএনটিটিইউসি-র সঙ্গে তাদের এক বন্ধনীতে ফেলায় বিরক্ত সিটু নেতারাও। সংগঠনের জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপি অনেক জায়গায় ভাল ফল করেছে। তাই আলাদা করে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল বলে বিষয়টিকে দেখা ঠিক নয়। বিজেপি বা তৃণমূল নয়, একমাত্র আমরাই শ্রমিক স্বার্থের কথা ভাবি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE