তখনও প্রার্থী হিসেবে দেওয়ালে বিপিন ভোরার নাম। শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরে তেঁতুলতলা এলাকায়। ছবি: বিকাশ মশান।
প্রার্থী নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চাপানউতোর চলছিলই। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ালেন প্রার্থী নিজে। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। এ বার কাকে প্রার্থী করা হবে, কবে ঘোষণা হবে তাঁর নাম, কবেই বা প্রচার শুরু হবেএখন এ নিয়ে ভাবনায় বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।
এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল শিল্পপতি বিপিন ভোরাকে। সোমবার নাম ঘোষণা হয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি এলাকায় না আসায় বা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশ। শুক্রবার বিপিনবাবু জানিয়ে দেন, ব্যক্তিগত কারণে প্রার্থী হতে পারছেন না। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবারের আপত্তি রয়েছে। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
বিপিনবাবুর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেসের জেলা নেতাদের একাংশ। তাঁদের দাবি ছিল, অসময়েও দল আঁকড়ে পড়ে থেকেছেন, এমন কাউকে প্রার্থী করা হোক। তাই বিপিনবাবুর নাম ঘোষণার পরে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই সরব হন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে এই শিল্পপতির কোনও দিনই তেমন সম্পর্ক ছিল না। বরং, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত বিপিনবাবু তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের ঘনিষ্ঠ। দুর্গাপুরে তাঁর আইকিউ সিটির হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের শিলান্যাস করতে এসেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার বাম আমলে তাঁর কারখানার উদ্বোধন করে গিয়েছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা।
কংগ্রেস তথা আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস অভিযোগ করেন, বাম আমলে বিপিনবাবু বরাবর সিটুর কথা শুনে চলেছেন। সিটুর দাবি মেনে বিরোধী আইএনটিইউসি কর্মী-সমর্থকদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁর কারখানা থেকে। তাই আইএনটিইউসি কর্মীরা তাঁর হয়ে প্রচারে নামার ব্যাপারে দ্বিধায় ছিলেন। উমাপদবাবুর দাবি, “আইএনটিইউসি-র তরফে ওঁর কারখানার গেটে অনশন-আন্দোলন পর্যন্ত হয়েছে। উনি প্রার্থী না হওয়ায় বিভিন্ন কারখানার আমাদের শ্রমিক সংগঠনগুলি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।” বিপিনবাবু ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়ানোর কথা বললেও জেলা কংগ্রেসের একাংশের অনুমান, কোনও রাজনৈতিক চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও বিপিনবাবু তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “বাম আমলে আমার কারখানা উদ্বোধন করেছিলেন জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুরা। আবার মমতাদিদি আমার আইকিউ সিটির হাসপাতালের শিলান্যাস করেছেন। আমার সঙ্গে সবার সুসম্পর্ক। আমার কোনও শত্রু নেই।”
এ বার কাকে প্রার্থী করবে দলের উচ্চ নেতৃত্ব, এখন সে দিকে তাকিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা। দলের নেতাদের আক্ষেপ, প্রার্থী ঘোষণা হতেই দেরি হয়ে গিয়েছিল। এখন প্রার্থী জানালেন, তিনি ভোটে লড়বেন না। ফলে, প্রচারের সময় আরও কমে গেল। দলের নেতাদের মতে, ফের প্রার্থী ঘোষণা ও প্রচারের নির্ঘণ্ট তৈরি করে পথে নামতে নামতে বাকি দলগুলি প্রচারে আরও এগিয়ে যাবে। তবে এ বার দলের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত কাউকে প্রার্থী করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উচ্চ নেতৃত্ব কাকে প্রার্থী করবেন জানি না। তবে তিন জনের নাম পাঠানো হয়েছে তাঁদের কাছে।” কংগ্রেস সূত্রে খবর, যে তিন জনের নাম উচ্চ নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে তাঁদের মধ্যে এক জন থাকেন দুর্গাপুরে। বাকি দু’জন বর্ধমানের বাসিন্দা। তিন জনেই দলের পুরনো নেতা। দলের প্রাক্তন জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায় বলেন, “উচ্চ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মানতে আমরা বাধ্য। তবে আমরা চাই দলের কেউ প্রার্থী হোন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy