দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট।—নিজস্ব চিত্র।
বছর দুয়েক আগে সংখ্যাটা ছিল ১১। পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ৮। এ বার লক্ষ্য, শূন্যে নামিয়ে আনা।
কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু রোধ করতে কারখানার ভিতরে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করায় উদ্যোগী হয়েছেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা (ডিএসপি) কর্তৃপক্ষ। দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃতেরা অধিকাংশই ঠিকা শ্রমিক। তাই কাজে যোগ দেওয়ার আগে তাঁদের নিবিড় প্রশিক্ষণ দিয়ে তবেই ‘গেট পাস’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার ভিতরে দুর্ঘটনা ঘটে নানা ভাবে। যেমন, ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর কোকওভেন প্ল্যান্টে ‘গাইড কার’ ও ‘কোক কার’-এর গতিবিধি আগাম আঁচ করতে না পেরে এক ঠিকাশ্রমিক তলায় চাপা পড়ে মারা যান। দুই ঠিকা শ্রমিক জখম হন। আবার, ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে বিষাক্ত গ্যাস লিক করে কর্মরত ২৫ জন কর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ১০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের ভর্তি করে নিতে হয়। সপ্তাহখানেক পরে তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি ভিলাই ইস্পাত কারখানায় গ্যাস লিক করে অসুস্থ হয়ে ৫ জন কর্মী মারা গিয়েছেন। তা ছাড়া, উঁচুতে কাজ করতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে।
পরিস্থিতি বদলাতে বেশ কিছু উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে ডিএসপি। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পঙ্কজকুমার সিংহ কারখানার বিভিন্ন বিভাগে কাজের জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক বৈঠকে যোগ দিয়ে এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলার উপরে জোর দেন। মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পঙ্কজকুমার সিংহ বলেন, “যে কোনও দুর্ঘটনা ক্ষতিগ্রস্তের পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। কাজের সময়ে প্রতিটি কর্মীকে উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধি মেনে চলতেই হবে।”
ডিএসপি-র এক আধিকারিক জানান, এখন থেকে শুধু বছরে কয়েকটি নিরাপত্তা সচেতনতার বিশেষ শিবির নয়, প্রতিদিন সচেতনতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলবে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করার জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি জানান, কাজের সময়ে যে সমস্ত গাড়ি বা ট্রলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলির গতি সীমিত করা, নিয়মিত গ্যাস পাইপ লাইন পরীক্ষা, গ্যাস লিক হলে তা শনাক্ত করার ব্যবস্থা আরও জোরালো করা-সহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া উঁচুতে কাজের সময়ে নীচে জালের ব্যবস্থা, খননের জায়গার চারপাশে পাকা বেড়া দেওয়া, কারখানার ভিতরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার উপরে জোর দেওয়া হবে।
সিটুর অভিযোগ, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে বহু পুরনো অভিজ্ঞ ঠিকাকর্মীকে রাজনৈতিক কারণে কাজ থেকে সরে যেতে হয়েছে। সে জায়গায় নতুনদের কাজে ঢোকানো হয়েছে। সেই নতুন কর্মীরা অনেকেই কাজের ব্যাপারে দক্ষ নন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা না থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে। ডিএসপি জানিয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় ঠিকা শ্রমিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরেই তাঁদের কাজ করার জন্য ‘গেট পাস’ দেওয়া হবে। কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো বলেন, “শ্রমিক-কর্মীদের কাজের জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ভাবেই চালিয়ে থাকে সংস্থা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy