Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্রছাত্রী ধরতে শিক্ষকদের চাপ, অভিযুক্ত কলেজ

ট্রেন থেকে নামলেই পাকড়াও করতে হবে পড়ুয়া। না হলেই চাকরি যাবে! পড়ুয়ার আকাল। কমে গিয়েছে আয়। ‘চাকরি বাঁচাতে গেলে ধরে আনুন পড়ুয়া’। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকদের জন্য এমনই নিদান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

ট্রেন থেকে নামলেই পাকড়াও করতে হবে পড়ুয়া। না হলেই চাকরি যাবে!

পড়ুয়ার আকাল। কমে গিয়েছে আয়। ‘চাকরি বাঁচাতে গেলে ধরে আনুন পড়ুয়া’। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষকদের জন্য এমনই নিদান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সাতসকালে তাই শিক্ষকদের কেউ কেউ হাজির হয়ে গিয়েছেন স্টেশনে। ট্রেন থেকে পড়ুয়ারা নামতেই তাঁদের সটান কব্জা করে কলেজে নিয়ে আসার গুরুদায়িত্ব পালন করতে। কিন্তু অনেক শিক্ষকই এ কাজ করতে বেঁকে বসেন। তাঁরা জানান, এই কাজ তাঁদের নয়। এ ভাবে অপমান তাঁরা সহ্য করবেন না। প্রতিবাদে ২৬ জন শিক্ষক একসঙ্গে শুক্রবার পদত্যাগপত্র জমা দেন। বাকিরা ততটা না এগোলেও ক্লাস নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে পিছু হঠার কথা ঘোষণা করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিধাননগরের ওই কলেজের এক কর্তা জানিয়েছেন, ২০০১ সালে কলেজটি গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে ভালই রমরমা ছিল। এখান থেকে পাশ করে দেশে-বিদেশের বড় বড় সংস্থায় চাকরি পেতেন পড়ুয়ারা। চাহিদার কথা মাথায় রেখে খোলা হয়েছিল এমবিএ, এমসিএ, এম-টেক বিভাগও। রাজ্যের একমাত্র মহিলা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে তোলার কৃতিত্বও তাঁদেরই। কিন্তু গত তিন-চার বছরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গিয়েছে। ওই কর্তার দাবি, প্রথমত, রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন বা কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, দুর্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ আসত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে। কিন্তু সেই সব রাজ্যে এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা শুরু হয়েছে। তাই সেখানকার ছেলেমেয়েরা আর এখানে এসে ভিড় করে না। মূলত এই দুই কারণে পড়ুয়ার আকাল দেখা দিয়েছে এখানকার কলেজগুলিতে। কলেজ কর্তার কথায়, “কলেজ চালানোর খরচ জোটাতেই ভ্রূ কুঁচকে যাওয়ার দশা।” তিনি জানান, স্নাতক স্তরে আসন সংখ্যা প্রায় সাতশো। দু’শোরও বেশি আসন এ বার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বায়ো-টেকনোলজি ও ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ জুলাই কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেন, পড়ুয়াদের কলেজে টেনে আনতে হবে। না হলে চাকরি বাঁচানো মুশকিল। ২৬ জুলাই ভোরে শিক্ষকদের কেউ কেউ চলে যান স্টেশনে। অভিযোগ, তেমন সাড়া না পেয়ে সেই শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কর্তৃপক্ষের একাংশ। পরের দিনও তাঁদের স্টেশনে যেতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা এককাট্টা হতে শুরু করেন। এমন সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে সদর্থক সাড়া মেলেনি বলে জানান এক শিক্ষক। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ পড়ানো। পড়ুয়াদের ধরে আনার কাজ অন্য দফতরের। আমরা কেন এ কাজ করতে যাব? এ ভাবে আমাদের বাধ্য করার অর্থ, আমাদের অপমান করা।” তিনি জানান, প্রতিবাদে শুক্রবার গণ পদত্যাগ করেন কম্পিউটার সায়েন্স ও ইনফরমেশন টেকনোলজির ২৬ জন শিক্ষক। বাকি শিক্ষকেরা জানিয়ে দেন, তাঁরাও ক্লাস নেবেন না। এর পরেই নমনীয় হতে বাধ্য হন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য শিক্ষকদের পড়ুয়া ধরতে পাঠানো নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কলেজের এক কর্তা বলেন, “অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জাহাজ ডুবলে কিন্তু সব যাত্রীরই ক্ষতি।” কলেজের প্রশাসনিক শীর্ষ কর্তা এ সি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পড়ুয়ার আকাল দেখা দিয়েছে রাজ্যের সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই। আমাদের কলেজের সুনাম রয়েছে। তাই পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। শিক্ষকদের সঙ্গে একটা সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। বৈঠকে তা মিটে গিয়েছে। কোনও শিক্ষকের চাকরি যাচ্ছে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy