গাড়ি থামিয়ে মসিবুলের জন্য চাঁদা তুলছেন গ্রামবাসীরা।— নিজস্ব চিত্র।
ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ভিটে বাড়ি বিক্রির খদ্দের খুঁজছিল পরিবার। খবর পেয়ে খরচ জোগাড়ে এগিয়ে এলেন গ্রামের বাসিন্দারাই। কাটোয়ার খাঁয়েরহাট গ্রামের ঘটনা।
কাটোয়ার খাঁয়েরহাটের বাসিন্দা মহম্মদ নূরমহম্মদ শেখের ছেলে মসিদুল শেখের দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে। কাটোয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া মসিদুল মাঝেসাঝেই জ্বরে ভুগত বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। প্রথমদিকে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকায় শেষ পর্যন্ত কাটোয়ার দুই চিকিৎসকের পরামর্শে মসিদুলকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই বর্তমানে ভর্তি রয়েছে সে। নিয়মিতভাবে চলছে ডায়ালেসিসও। নতুন কিডনি না দিলে তাঁর প্রাণ সঙ্কট হতে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা। মসিদুলের দিদি জালিকা বিবি বলেন, “ভাইকে বাঁচানোর জন্য আমাদের পরিবারের যে কেউ কিডনি দান করবেন। কিন্তু সে জন্যও প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।” পেশায় ভ্যান চালক মহম্মদ নূরমহম্মদ শেখ বলেন, “শেষ চেষ্টা করতে একবার ব্যাঙ্গালোর নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেও একই কথা বললেন ডাক্তাররা। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার স্ত্রী ও দুই বিবাহিত মেয়ের গয়না পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে।”
এরপরেই চিকিৎসার খরচ জোটাতে এক কাঠা জমির উপর দু’কামরার মাটির তৈরি ভিটে বাড়িটি বিক্রি করবেন বলে মনস্থির করেন নূরমহম্মদ শেখ। কিন্তু দিন চারেক আগে বাড়ি বিক্রির খদ্দের দেখার সময় গ্রামেরই কয়েকজন তাঁকে এসে বলেন, “বাড়ি বিক্রি করার দরকার নেই। আমরা দেখি কী করতে পারি।” সে দিন বিকেলেই মসজিদের সামনে তাঁরা আলোচনা করে ঠিক করেন, গোটা গ্রাম ঘুরে চাঁদা তুলে নূর মহম্মদের হাতে দেওয়া হবে। পড়শি জামাল শেখ, ইসলাম শেখরা বলেন, “আমাদের গ্রামে মোট ১৬৫ ঘরের মধ্যে ৯৫টি পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত। দু’একটি ঘর ছাড়া সকলেই দিন মজুরের কাজ করেন। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এমন গ্রাম থেকেও আমরা ভাল সাড়া পাচ্ছি।” তবে শুধু চাঁদা তুলেই ক্ষান্ত হননি পড়শিরা। সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে স্থানীয় কোশিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের কাছেও। স্কুলের শিক্ষকরাও মসিদুলের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে লরি, ট্রাক্টর-সহ বিভিন্ন গাড়ির চালক ও যাত্রীদের কাছেও হাত পাততে পিছপা হচ্ছেন না গ্রামের যুবকেরা। গ্রামের বাসিন্দা কুরমান শেখ, সোলেমান শেখরা বলেন, “রাজুয়া, যতীনপুর, কোশিগ্রাম, ন’নগর গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন। ১১টি দলে ভাগ হয়ে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি অন্যান্য গ্রামেও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy