Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

গুসকরায় ভোট কমায় ফের কোন্দল তৃণমূলে

গত পুরভোটেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল দলের অন্দরমহলের দ্বন্দ্ব-চিত্র। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এসে নির্দেশ দেওয়ার পরেও চেয়ারম্যানের পদের দাবিতে ভোটাভুটি চেয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। পরে ‘বিদ্রোহী’ নেতাকে সরিয়ে সমস্যা চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট কমতেই ফের গুসকরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

গত পুরভোটেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল দলের অন্দরমহলের দ্বন্দ্ব-চিত্র। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এসে নির্দেশ দেওয়ার পরেও চেয়ারম্যানের পদের দাবিতে ভোটাভুটি চেয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। পরে ‘বিদ্রোহী’ নেতাকে সরিয়ে সমস্যা চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট কমতেই ফের গুসকরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব।

পুরভোটে ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১১টি ও সিপিএম ৫টি। এ বার রাজ্য জুড়ে বামেদের ঘোর বিপর্যয়ের মধ্যেও ওই পাঁচটি ওয়ার্ডে দখলে রেখেছে তারা। এমনকী তৃণমূলের ১১টি ওয়ার্ড থেকেও ছিনিয়ে নিয়েছে ২ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড। তবে ব্যবধান নামমাত্র। প্রথমটিতে ৭৮ ভোটে ও দ্বিতীয়টিতে ৮৯ ভোটে জিতিছে সিপিএম। তার মধ্যে ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি হল গুসকরা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বীরভূমের ডাকসাঁইটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ মল্লিকা চোঙদারের। লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পরে মল্লিকাদেবী বলেন, “খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি। দেখতে হবে আমার ওয়ার্ডে দল কেন হারল। হয়তো দলের মধ্যেই অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল।”

সিপিএমের বরাবরের শক্ত ঘাঁটি আউশগ্রামে গত বিধানসভায় পরিবর্তনের হাওয়াতেও ২৩,০৯৬ ভোটে হার মানতে হয়েছিল জোটের কংগ্রেস প্রার্থী চঞ্চলকুমার মণ্ডলকে। এ বারের লোকসভা ভোটে সেই আসনেই তৃণমূল জিতেছে ১৮৭২০ ভোটে। ২০১৩ সালে গুসকরা পুরভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ১০২৫৭টি ভোট, সিপিএম পেয়েছিল ৮৩০০ ও বিজেপি ১২৭৩ ভোট। এ বার লোকসভা ভোটে সেই গুসকরাতে সিপিএম পেয়েছে ৭৬৯৯ ভোট। তাতেও দুটি ওয়ার্ড ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের হাত থেকে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বিজেপির ভোট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৯১। আর তৃণমূলের মোট ভোট ৭১৮৭।

গত বছর পুরভোটের পরে তৃণমূলের অন্দরে পুরপ্রধানের পদ নিয়ে তুমুল গোলমাল বেধেছিল। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের নির্দেশ না মেনে ভোটভুটির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন দলের নেতানেত্রীরা। ফলে পুরপ্রধান নির্বাচনের দিনে খোদ মুকুলবাবুকেই গুসকরায় আসতে হয়। পরে অন্যতম বিদ্রোহী নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে গুসকরা টাউন তৃণমূলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইকে ওই পদে আনা হয়। এ বার নতুন করে তিনটি ওয়ার্ড হারানোয় তৃণমূলেরই একাংশ কর্মী-সমর্থক দলনেত্রীকে চিঠি লিখে চঞ্চলবাবুর অপসারণ চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। নিত্যানন্দবাবু বলেন, “আমি এ বার লোকসভা ভোটের দায়িত্বে ছিলাম না, তাই কেন এই বিপর্যয় ঘটেছে বলতে পারব না। তবে মানুষ ফের দলের টাউন সভাপতির বদল চাইছেন। নাহলে আগামী বিধানসভা ভোটে দল সমস্যায় পড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা।” নিত্যানন্দবাবুর দাবি, লোকসভা ভোটে ২৯টি বুথের মধ্যে ১৫টাই হারিয়েছে তৃণমূল। ১২টি বুথে সিপিএম ও ৩ বুথে বিজেপি জিতেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের বিধানসভায় বড় বিপদের মুখে পড়তে চলেছে তৃণমূল।

কিন্তু ভোট কমার কারণ কী? চঞ্চলবাবুর জবাব, “বিপর্যয়ের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এটুকু বলতে পারি, অনেক শহরে বিজেপির উত্থানের জেরে দল যতটা বিপর্যস্ত হয়েছে, গুসকরার অবস্থা ততটা খারাপ নয়। আমাদের একমাত্র বড় পরাজয় ঘটেছে ৮ নম্বরে। অন্য গুরুত্বপূর্ন ওয়ার্ডে তো আমরা হারিনি!’’ তাঁকে টাউন সভাপতির পদ থেকে সরানোর দাবি করে দলের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছে চিঠি লিখেছে শুনে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে দলের লোকেরা নয়, এক নেতার অনুগামীরাই মাঠে নেমেছেন। আমার বলার কিছু নেই। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, দলই নেবে।”

আর সিপিএমের ভোট কমার পরেও বেশি ওয়ার্ডে জয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলের গুসকরা জোনাল কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদারের দাবি, “পুরভোটে যতটা রিগিং করতে পেরেছিল তৃণমূল, ততটা এ বার সম্ভব হয়নি। তবে আমাদেরই ভোটের একটা অংশ বিজেপি টেনে নিয়েছে। কংগ্রেসের ভোটও অনেকটা কমেছে। তবে সেটা বামপন্থীরা পায়নি পেয়েছে বিজেপি। আর সমর্থকেরা কেন সরে যাচ্ছেন তা আমরা বিশ্লেষণ করব।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy