প্রথমে ক্ষোভ ছিল প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া নিয়ে। দিন তিনেক আগে প্রার্থীর নাম জানিয়েছে দলের উচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু প্রার্থী এখনও আসেননি, এমনকী তাঁদের সঙ্গে এক বারও যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ কংগ্রেস নেতাদের।
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন শিল্পপতি বিপিন ভোরা। বৃহস্পতিবার তাঁর দুর্গাপুরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি যেতে পারছেন না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন বুধবার রাতেই। এমনিতেই প্রচারে পিছিয়ে পড়েছেন বলে অনুযোগ রয়েছে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তার পরে প্রার্থীও না এসে পৌঁছনোয় তাঁরা বিব্রত বলে দলের নেতা-কর্মীদের দাবি। প্রার্থী বিপিনবাবু অবশ্য জানান, শীঘ্রই স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তিনি।
জেলা কংগ্রেসের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপিন ভোরাকে প্রার্থী করা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দলের একাংশে। দলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত এমন কাউকে প্রার্থী করা হবে বলেই আশা করেছিলেন নেতারা। সেখানে দলের অধিকাংশ কর্মী-সমর্থকই চেনেন না, এমন এক জনকে প্রার্থী করায় প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার হতে হচ্ছে বলে নেতাদের দাবি। দলের এক নেতা বলেন, “শিল্প মহলে বিপিনবাবু পরিচিত নাম হতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ অতীতে দেখা যায়নি। তিনি হঠাৎ প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলছেন।” দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায় বলেন, “অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন। আমরা সাধ্য মতো বোঝাচ্ছি। উচ্চ নেতৃত্ব প্রার্থী করেছে, আমরা কী করতে পারি!” তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিপিনবাবুর সঙ্গে তাঁদের পরিচিতি বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। কবে হবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
বিপিনবাবু ১৯৯০ সালে দুর্গাপুরে একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা খোলেন। এর পরে দুর্গাপুরে একাধিক নতুন ইউনিট খোলেন। কারখানা গড়েন হিমাচল প্রদেশেও। পরের দিকে তিনি দুর্গাপুরে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজ চালু করেন, আইকিউ সিটি গড়ার পরিকল্পনায় নামেন। টেলিভিশনের বেশ কিছু ধারাবাহিক, দু’টি বাংলা ছবিও প্রযোজনা করেন। কংগ্রেসের একাধিক নেতার দাবি, দুর্গাপুরে নানা সময়ে তাঁর কাছাকাছি সিপিএম এবং তৃণমূল নেতাদের দেখা গিয়েছে। তবে কংগ্রেসের কাউকে সে ভাবে দেখা যায়নি। তাই তিনি প্রার্থী হওয়ায় বিস্মিত তাঁরা। কংগ্রেস নেতা উমাপদ দাস বলেন, “নাম শুনে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। তবে দল যা ঠিক করবে তা মানতে আমরা বাধ্য। প্রার্থীর হয়ে প্রচার করব।”
এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা আসন। তার মধ্যে গত বিধানসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণ, ভাতার, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিমচারটি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। বর্ধমান উত্তর, মন্তেশ্বর ও গলসি গিয়েছিল বামফ্রন্টের দখলে। তবে সম্প্রতি রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে গলসির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক সুনীল মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে এ বার উপ-নির্বাচন হবে। পরিসংখ্যান নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে অবশ্য বহু আগেই জোরকদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক। প্রচার শুরু করেছেন তৃণমূলের মমতাজ সংঘমিতাও। বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী ইতিমধ্যে দু’বার দুর্গাপুর শহরে প্রচার সেরেছেন।
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক জয়ী হন। তিনি পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ভোট। কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী নার্গিস বেগম পেয়েছিলেন প্রায় ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার। এ বার জোট হয়নি। তাই কংগ্রেসের কাছে এই ভোট কঠিন লড়াই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেখানে প্রার্থী নিয়ে বিড়ম্বনা, নাম ঘোষণার তিন দিন পরেও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ না করার মতো ঘটনা কী দলের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে? কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেববাবু বলেন, “উদ্যমী কর্মীরা আমাদের ভরসা। তবে প্রার্থী নিজে না আসা পর্যন্ত প্রচারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।” বিপিনবাবু বলছেন, “স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় আটকে পড়েছি। কবে যেতে পারব, শুক্রবার জানাতে পারব বলে আশা করছি। দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy