এই দৃশ্য বেশি দেখাই লক্ষ্য।
একশো দিনের প্রকল্পে বেশি অর্থ খরচ ও শ্রমদিবস তৈরির নিরিখে ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে বর্ধমান ছিল শীর্ষে। কিন্তু পরিবার পিছু কাজের নিরিখে রাজ্যে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিল এ জেলা। তালিকায় পাঁচ নম্বরে ছিল বর্ধমান। চলতি আর্থিক বছরে বেশি শ্রম দিবসের তৈরি ও পরিবার পিছু কাজ দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে নেমেছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগও হয়েছে।
গত বছর পরিবার পিছু কাজের নিরিখে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল নদিয়া। একশো দিনের প্রকল্পে তারা খরচ করেছিল ৩৪০ কোটি টাকা। কাজ পেয়েছিল ১ লক্ষ ৬৫ হাজার মানুষ। বর্ধমান সেখানে ওই খাতে খরচ করেছিল ৭৩৯ কোটি টাকা। কাজ দেওয়া হয়েছিল ১ লক্ষ ৬৫ হাজার জনকে। কিন্তু পরিবার পিছু মাত্র ৩৬ দিন কাজ দেওয়ায় বর্ধমানের স্থান হয় পঞ্চম। তবে এ বছর গোড়া থেকেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক জেলা প্রশাসন। পরিবার পিছু কাজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ দিন। একই সঙ্গে মহিলাদের কাজ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলেও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রকল্পের গতি বাড়াতে ইতিমধ্যেই জেলা সদরে বেশ কিছু জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। গত দু’মাসে কোন ব্লক কতটা কাজ করছে তা নিয়ে খুঁটিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিতে বিশেষ বৈঠক করা হবে। সেখানে পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনে বৈঠকেই তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কালনা ২, জামালপুর, মন্তেশ্বর-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) হৃষিকেশ মুদি-সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের উপস্থিতিতে বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে পঞ্চায়েতের প্রধান ও সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বুথে বুথে গিয়ে প্রকল্প চিহ্নিত করা। জোর দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক সমন্বয়েও। মন্তেশ্বরের বৈঠকে এলাকার এক পঞ্চায়েত দাবি করে, চারটি সংসদে মহিলাদের মধ্যে কাজ করার তেমন আগ্রহ নেই। সভাধিপতি ওই চার সংসদে ঘুরে মহিলাদের বোঝানোর নির্দেশ দেন।
কয়েক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের মতে, গত আর্থিক বছরে বর্ধমান জেলা টাকা খরচ করলেও পরিকল্পনার অভাব ছিল। এ বার তাই জোর দেওয়া হচ্ছে পরিকল্পনাতেই। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ মে পর্যন্ত হিসেবে জেলায় পরিবার পিছু কাজ দেওয়া হয়েছে ১৩.২৬। মহকুমার নিরিখে এতে এগিয়ে রয়েছে কালনা মহকুমা। ওই মহকুমার পূর্বস্থলী ব্লক এখনও পর্যন্ত পরিবার পিছু কাজ দিয়েছে ২৬.৪৪। মহিলাদের কাজ দেওয়ার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে জামুড়িয়া। এখনও পর্যন্ত ৫৬.৭৫ শতাংশ মহিলাদের কাজ দিয়েছে তারা। এরপরেই রয়েছে অন্ডাল ও পাণ্ডবেশ্বর ব্লক। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ষা পড়ার আগেই যত বেশি সম্ভব কাজ করিয়ে ফেলতে চায় তারা। পুকুর সংস্কার, রাস্তা তৈরির মতো প্রকল্পে টানা কাজ দিয়ে পরিবার পিছু ৩০ দিনের কাছে পৌঁছতে চায় জেলা পরিষদ। জেলা প্রশাসনের দাবি, বৃষ্টি নামার পরে মাস চারেক কাজের গতি কিছুটা কমবে। কারণ পুকুর বা নদী সংস্কারের কাজ ওই সময় করা যাবে না। তাই বর্ষা নামার আগেই কাজের গতি বজায় রাখতে চায় প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, বাড়ি বাড়ি ফলের চারা দেওয়া, শৌচাগার তৈরি, নদী বাঁধ নির্মাণ, নালা তৈরি-সহ নানা প্রকল্পে যত বেশি সম্ভব মানুষকে কাজ দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “যাদের প্রকৃত কাজের দরকার সেই মানুষদের বেশি করে কাজ দেওয়ার কতা বলা হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁদের জবকার্ড থাকলেও কাজের তাগিদ নেই। এই অংশের মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে পরিবার পিছু গড় তত কমবে।” এই মত নিয়ে অবশ্য বিতর্কও রয়েছে। মন্তেশ্বরের সভাতেই স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল সদস্য বলেন, “আমাদের কাছে কেউ কাজ চেয়ে এলে ফেরাব কীভাবে? সেটা করতে গেলে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে।” জেলা সভাধিপতি বলেন, “সমস্ত স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিরা পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছেন। আশা করি চলতি আর্থিক বছরে পরিবার পিছু ও মহিলাদের কাজ দেওয়ার নিরিখে এই জেলা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy