কাঠগড়ায় হাজির রয়েছে অভিযুক্তেরা সাক্ষ্য দিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন কেতুগ্রাম ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় অন্যতম তদন্তকারী অফিসার তুষারকান্তি সর্দার। সোমবার কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গিয়ে তিনি জানান, অভিযুক্তদের নাম ধরে চিনিয়ে দিতে পারবেন তিনি।
বারবার সাক্ষ্য দিতে গরহাজির হওয়ায় তুষারবাবুর বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক পরেশনাথ কর্মকার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। রেল পুলিশের কাটোয়ার প্রাক্তন ওই ওসি বর্তমানে সিআইডি দফতরে কর্মরত। তিনি আদালতকে জানিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকার জন্য তিনি সাক্ষ্য দিতে আসতে পারেননি। এ দিন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বের শুরুতেই ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন নেন তুষারবাবু।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই তদন্তকারী অফিসার জেরার সময় আদালতকে জানান, পাঁচ অভিযুক্ত আসামীর কাঠগড়ায় রয়েছেন। তিনি তাঁদের চিনতে পারবেন বলেও বিচারকের সামনে দাবি করেন।” তুষারবাবু সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতকে জানান, ঘটনার সময় তিনি কাটোয়া রেলপুলিশে এস আই পদে নিযুক্ত ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ ছোট রেলে ডাকাতির খবর পান তিনি। পরে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ওই ট্রেনের গার্ড ও চালক রেল পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। একই সঙ্গে তিনি জানতে পারেন, ডাকাতির ঘটনার সময় এক মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
আদালতকে তিনি জানান, খবর আসার পরেই রেল পুলিশ কর্মীরা ওই ‘ধর্ষিতা’ মহিলাকে খুঁজে বের করে থানায় নিয়ে আসেন। সেখানেই লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। পরের দিন অভিযোগকারিনীর শাড়ি, ব্লাউজ ও পেটিকোট বাজেয়াপ্ত করে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া আদালতে জবানবন্দি দেন অভিযোগকারিনী ও তাঁর নাবালিকা কন্যা। ওই দিনই আদালতের নির্দেশে ডাকাতি মামলাটি (৬/১২) রেল পুলিশের হাতে এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলাটির (৭/১২) তদন্তভার চলে যায় কেতুগ্রাম থানায়। ডাকাতির ঘটনায় রেল পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতারও করে। এ ছাড়াও ধর্ষণ মামলাটির তদন্তকারী অফিসার, কেতুগ্রামের জয়জিৎ লোধের কাছ থেকে খবর পেয়ে আরও দু’জন অভিযুক্তের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ২০১২ সালের ৩০ জুন আদালতে ডাকাতি সংক্রান্ত মামলাটির চার্জশিট পেশ করেন তুষারবাবু। তবে রেলপুলিশ চার্জশিট পেশ করার আগেই কেতুগ্রাম থানার তদন্তকারী অফিসার আদালতে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট পেশ করেছিলেন।
২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমোদপুর-কাটোয়া ছোট রেলে পাঁচুন্দি ও অম্বলগ্রাম স্টেশনের মাঝে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এক দল দুষ্কৃতী ট্রেন আটকায়। কানের দুল দিতে অস্বীকার করায় মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই রাতেই মহিলা কাটোয়া রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশের চার্জশিটে ৮ জনের নামে অভিযোগ করা হয়। তার মধ্যে ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। এদের মধ্যে দু’জন পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। বাকি ৫ জন জেল হেফাজতে। একজন এখনও অধরা। আলাদা আলাদা চার্জশিট করে মামলা চলার বিষয়টি নজরে এলে কলকাতা হাইকোর্ট মামলাদু’টিকে ‘একত্র’ করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেয়। এর মধ্যে অভিযোগকারিনী ও তাঁর মেয়ে কাটোয়া জেলে এবং আদালত কক্ষে অভিযুক্তদের সনাক্ত করেন। বেশ কয়েকজন সাক্ষ্যেও জানিয়েছেন, এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে দুষ্কৃতীদের নামানোর ঘটনা তাঁরা শুনেছিলেন। অভিযুক্তদের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মূল সাক্ষ্য হওয়ার পরে সোমবারই জেরা শুরু করেছি। আজ, মঙ্গলবারও তদন্তকারী অফিসারকে জেরা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy