বাদশাহি রোডে নিহতের বাড়ির সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
প্রকাশ্যে রাস্তায় মারপিটে যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পরে তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। বুধবার সন্ধ্যায় বর্ধমান শহরে ওই ঘটনায় নিহত যুবকের রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না বলে দাবি করলেন পরিজনেরা। নিহত গৌতম দাসের (২২) দাদা আনন্দ দাস বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘ভাই কোনও রাজনীতি করত না। পড়াশোনো করত। ভিডিয়োগ্রাফি করে নিজের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ জোগাত। সাতেপাঁচে না থাকা একটি ছেলে কেন মারা হল, বুঝতে পারছি না!’’ পুলিশকেও তাঁরা এ কথা জানিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার জিটি রোডে কাঁটাপুরের মোড়ে হাতাহাতি, মারপিটের জেরে শহরের বাদশাহি রোডের বাসিন্দা গৌতম আহত হন। বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পরেই বর্ধমানের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা বিকাশ মণ্ডলের বাড়ি-সহ তিনটি বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। বিকাশবাবু জখম হন। ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্রের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী এলাকায় টহল দেয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, এই ঘটনা পরিকল্পিত ভাবে ঘটেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ধমান থানায় আট জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সিংহরায় বলেন, ‘‘অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’ পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই এলাকায় অনেকগুলি সিসি ক্যামেরা নজরে পড়েছে। সেগুলির ফুটেজ জোগাড় করা হচ্ছে। তাতে তদন্তে সুবিধা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গৌতম আইটিআই কলেজে ‘ফিটার’ বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর শেষ ‘সিমেস্টার’ চলছিল। বন্ধুদের দাবি, গৌতমের বাবা অসুস্থ। দাদাও ছোটখাট কাজকর্ম করেন। পড়াশোনার খরচ জোগাড়ে অনুষ্ঠান বাড়িতে ভিডিয়ো-ফটোগ্রাফি করতেন গৌতম। সংসারেও সাহায্য করতেন। বুধবার রাতে তাঁর দাদা আনন্দ পুলিশকে জানান, খেলতে যাওয়ার নাম করে ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে কোনও গোলমালের কথা তাঁদের জানা নেই। সন্ধ্যায় রাস্তার উপরে ভাই পড়ে রয়েছে খবর পেয়ে তাঁরা তিন জন গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আনন্দের শাশুড়ি, সুভাষপল্লির বাসিন্দা সীমা বাগ বলেন, ‘‘সংসারের হাল ধরতে শুরু করেছিল গৌতম। সব ভেসে গেল!’’ গৌতমের বাবা বিশ্বনাথবাবু দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। ছোট ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা দেবী দাস। বারবার তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ছেলেটাকে মেরে দিল!’
পরিবার অস্বীকার করলেও ঘটনার পরে গৌতমের পরিচিতদের অনেকে দাবি করেছিলেন, তিনি ‘রাজনীতির শিকার’ হয়েছেন। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, মাঝে-মধ্যেই এলাকায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হয়। এর আগে বিকাশ মণ্ডল আক্রান্ত হয়েছিলেন। কয়েকমাস ধরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় সামান্য একটি ঘটনা ঘিরে গোলমাল বেধে যায়। সেখানেই যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়।
এলাকার তৃণমূলের শ্রমিক নেতা সুরেন্দ্র শর্মা অবশ্য বলেন, ‘‘গৌতমকে সে ভাবে মিটিং-মিছিল করতে দেখিনি। কয়েকজন দুষ্কৃতী তৃণমূলের নাম ভাঙিয়ে একটি ভাল ছেলেকে মেরে ফেলল।’’ বিকাশবাবুর দাবি, ‘‘এ সব ঘটনার বিন্দুবিসর্গ আমি জানি না। গৌতম ভিডিয়ো-ফটোগ্রাফি করত শুনলাম। হিংসায় আমার নাম জড়িয়ে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।”
তৃণমূলের জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস বলেন, ‘‘জুয়ার ঠেকে বা রাস্তায় সাইকেলে ধাক্কার জেরে বিবাদ হলেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে প্রচার করা হচ্ছে। যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসন তদন্ত করে দেখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy